একটি রাষ্ট্রয়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালি ব্যাংক। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান ব্যাংক গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি ব্যাংক। বর্তমানে সোনালি ব্যাংকে ২ কোটি ৪৭ লাখ মানুষ গ্রাহক হিসেবে যুক্ত রয়েছে। অর্থাৎ সর্বশেষ হিসাব মতে এই ব্যাংকটিতে হিসাব সংখ্যা ২ কোটি ৪৭ লাখ।
সোনালি ব্যাংক সরকারি ব্যাংক গুলোর মধ্যে সবথেকে বেশি মুনাফা দিয়ে থাকে।দেশের সব ব্যাংকের মধ্যে অন্যতম বিশ্বাস যোগ্য ব্যাংক সোনালি ব্যাংক।
জেনে নেওয়া যাক সোনালি ব্যাংকের ডিপিএস স্কিম, ডিপিএস কিভাবে খুলবেন এছাড়া একটি সোনালি ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য করণীয় সম্পর্কে।
আরও পড়ুনঃ দেখুন কোন ব্যাংকে ডিপিএস এর লাভ বেশি ২০২১ (Profit Amount Of DPS)
ডিপিএস কি এবং কিভাবে ডিপিএস খুলতে হয়
ডিপিএস এর সম্পূর্ণ অর্থ হচ্ছে ডিপোজিট পেনশন স্কিম। দেশ সহ বিশ্বের সব দেশে ব্যাংকে টাকা রাখার মধ্যে সব স্কিমের অন্যতম একটি স্কিম ডিপিএস। এই স্কিমটি একটি আর্থিক সঞ্চয় মুলক স্কিম যা মাসের হিসেবে ব্যাংকে জমা করতে হয়।
যে কোনো ব্যাংকে একটি ডিপিএস হিসাব খোলার পরে গ্রাহককে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা করতে হয়। এরপর স্কিম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় শেষে সেই টাকা ম্যাচিউর হয়। স্কিমের টাকা ম্যাচিউর হলেই শুধু ব্যবহার যোগ্য হয়। ম্যাচিউরিটর আগে টাকা উঠালে লভ্যাংশ তো পাওয়াই যায় না বরং কিছু ব্যাংকে আসল টাকা থেকে কিছু টাকা কেটে রাখে।
ডিপিএস খোলার জন্য করণীয়
১) সর্বপ্রথম আঠারো বছরের বা তার থেকে বয়সে বড় যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক প্রাথমিক অবস্থায় ব্যাংক হিসেব খোলার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
২) তবে, পিতা-মাতা অথবা আইনগত অভিভাবকদের সাথে নিয়ে নাবালক বা নাবালিকার নামেও এ হিসাব খোলা যাবে।
৩) নমিনী এবং হিসাবধারীর দুজনেরই দুই কপি করে পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত করা ছবি।
৪) হিসাব খোলার সময় হিসাবধারীর এবং নমিনী দুজনেরই জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন যেকোনো এক্তির সত্যায়িত ফটো কপি প্রদান করতে হবে।
এই কয়টি বিষয় ঠিকঠাক প্রদান করতে পারলে একটি ফর্ম ফিলাপের মাধ্যমে আপনিও হয়ে যেতে পারেন একজন সোনালি ব্যাংক হিসাবধারী ব্যাক্তি।
আরও পড়ুনঃ জীবন বীমা কি এবং বাংলাদেশের লাইফ ইন্সুরেন্স কম্পানির তালিকা
এবার জেনে নেওয়া যাক সোনালি ব্যাংক ডিপিএস তালিকা সম্পর্কে
৩ বছর মেয়াদেঃ
ডিপিএস স্কিম তিন বছরের ক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিমাসে ২৪৫০০ টাকা রাখতে হবে। এতে তিন বছর শেষে আপনার মোট মূলধন হবে ৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। এই মূলধনের উপর ১০ % করে চক্রবৃদ্ধি হারে মুনাফা দিবে ব্যাংকটি। এই হিসেব আপনি ১ লাখ ২৭ হাজার ৪৩১ টাকা পাবেন। আপনার ডিপিএস স্কিম অনুযায়ী আপনি পাবেন মোট ১০ লাখ ৪৩১ টাকা।
৪ বছর মেয়াদেঃ
ডিপিএস স্কিম চার বছরের ক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিমাসে ১৭ হাজার ৩৮০ টাকা ব্যাংকে জমা করতে হবে। এতে আপনার লভ্যাংশ হবে ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৮ টাকা। ডিপিএস স্কিমে আপনি পাবেন ১০ লাখ ২৬৮ টাকা।
৫ বছর মেয়াদেঃ
সোনালী ব্যাংক ডিপিএস ৫ বছর ডিপিএস স্কিম তিন বছরের ক্ষেত্রে আপনি প্রতি মাসে জমা দিবেন ১৩ হাজার ২৮০ টাকা। পাঁচ বছরে লভভ্যাংশ হবে ২ লাখ ৩ হাজার ৪১৮ টাকা। আপনার জমা কৃত মূল টাকার পরিমাণ হবে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৮০০ টাকা। আর স্কিম ম্যাচিউর হলে আপনি পাবেন লাভ আসল সহ মোট ১০ লাখ ৭৮০ টাকা।
৬ বছর মেয়াদেঃ
সোনালি ব্যাংক ডিপিএস স্কিম ৬ বছর মেয়াদে প্রতি মাসে আপনাকে জমা করতে হবে ১০ হাজার ৫৭০ টাকা। আপনি চক্রব্রিদ্ধি হারে লভ্যাংশ পাবেন মোট ২ লাখ ৩৯ হাজার ৭৪০ টাকা। ৬ বছরের স্কিমে আপনি মোট পাবেন ১০ লাখ ৭৮০ টাকা।
৭ বছর মেয়াদঃ
সোনালি ব্যাংক ডিপিএস স্কিমের ৭ বছর মেয়াদে আপনাকে প্রতিমাসে ৮ হাজার ৬৪০ টাকা জমা দিতে হবে। এতে ৭ বছরে আপনার জমা মূলধন হবে মোট ৭ লাখ ২ হাজার ৭৬০ টাকা। চক্রবৃদ্ধি হারে আপনি পাবেন ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৪৪ টাকা। স্কিম ম্যাচিউর হওয়ার পরে আপনি পাবেন ১০ লাখ ৪০৪ টাকা।
৮ বছর মেয়াদেঃ সোনালি ব্যাংক ডিপিএস স্কিমের ৮ বছর মেয়াদে আপনাকে প্রতি মাসে ৭ হাজার ২১০ টাকা জমা রাখতে হবে। ৮ বছরে মুলধন হবে আপনার ৬ লাখ ৯২ হাজার ১৬০ টাকা। ১০% চক্রবৃদ্ধিতে লভ্যাংশ হবে ৩ লাখ৮ হাজার ৫৪০ টাকা। স্কিমের ম্যাচিউরিটি হলে আপনি মোট পাবেন ১০ লাখ ৭০০ টাকা।
৯ বছর মেয়াদেঃ
সোনালি ব্যাংক ডিপিএস স্কিমের ৯ বছরের মেয়াদে আপনাকে প্রতি মাসে ৬ হাজার ১০৫ টাকা জমা রাখতে হবে। ৯ বছরে মূলধন হবে ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪০ টাকা। মোট লভ্যাংশ হবে ৩ লাখ ১০ হাজার ৮৫ টাকা। ৯ বছর মেয়াদের স্কিম হলে ম্যাচিউরিটির পর আপনি পাবেন সর্বোমোট ১০ লাখ ৪২৫ টাকা।
১০ বছর মেয়াদেঃ
সোনালি ব্যাংক ডিপিএস স্কিমের ১০ বছর মেয়াদে প্রতি মাসে আপনাকে ৫ হাজার ২৩৫ টাকা জমা দিতে হবে। ১০ বছরে এতে আপনার মূলধন হবে ৬ লাখ ২৮ হাজার ২০০ টাকা। লভ্যাংশ হবে মোট ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৪৮ টাকা। স্কিমের এই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারলে আপনি মোট পাবেন ১০ লাখ ৯৪৮ টাকা।
১২ বছর মেয়াদেঃ
সোনালি ব্যাংকের স্কিম ডিপিএস ের এই মেয়াদে আপনাকে প্রতি মাসে ৩ হাজার ৯৫০ টাকা জমা রাখতে হবে। এতে নির্ধারিত সময় শেষে আপনার মোট মূলধন জমা হবে ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৮০০ টাকা। এবং মূলধন হবে মোট ৪ লাখ ৩২ হাজার ৪১০ টাকা। এই ডিপিএস স্কিম ম্যাচিউর হলে আপনি একবারে পাবেন ১০ লাখ ১ হাজার ২১০ টাকা।
১৫ বছর মেয়াদেঃ
সোনালি ডিপিএস স্কিমের এই মেয়াদে আপনাকে প্রতি মাসে মাত্র ২ হাজার ৭১০ টাকা রাখতে হবে। এতে করে টোটাল আপনার মূলধন দাঁড়াবে ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৮০০ টাকা। এছাড়া আপনি মূলধন সহ স্কিম ম্যাচিউর হলে ১০ লাখ ১ হাজার ৩৬৪ টাকা পাবেন।
২০ বছর মেয়াদেঃ
সোনালি সেবায় এই মেয়াদের ডিপিএস স্কিমে আপনাকে প্রতি মাসে মাত্র ১ হাজার ৫৫৫ টাকা জমা রাখতে হবে ব্যাংকে। টোটাল মূলধন জমা হবে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ২০০ টাকা। স্কিম পুরনের পর ম্যাচিউর হলে আপনি পাবেন ১০ লাখ ১ হাজার ১৮৭ টাকা।
সোনালি ব্যাংকের সকল ডিপিএস স্কিমে ১০% চক্রবৃদ্ধি হারে আপনাকে মুনাফা দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সাধারণত ব্যাংক গ্রাহকদাএ সাথে হিসাব খলার সময়েই বুঝিয়ে দিয়ে থাকে।
কোনো কারণে যদি এই মেয়াদের উর্ত্তীণের আগে যদি আপনি যদি হিসাব বন্ধ করেন তাহলে যেভাবে হিসেব হবে ৬ মাসের মধ্যে আপনি হিসাব ক্লোজ করতে বা টাকা উঠিয়ে আনতে চাইলে কেবল মূলধন ফেরত দেওয়া হবে। ৩ বছরের মধ্যেআপনি ডিপিএস ভেঙ্গে উঠিয়ে আনতে চাইলে ৬% সরল মুনাফা সহ মূলধন ফেরত পাবেন। ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যেঃ এর মধ্যে হিসাব ক্লোজ করতে চাইলে ৭.৫% সরল মুনাফাসহ মূলধন ফেরত দেওয়া হয়ে থাকে।
৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যেঃ
এই সময়ের মধ্যে মূলধন উঠিয়ে আনতে চাইলে ৮.৫% সরল মুনাফাসহ মূলধন ফেরত দেওয়া হয় গ্রাহককে।
১০ বছরের বেশিঃ
এই সময়ের পরে আপনি ডিপিএস এর মূলধন উঠিয়ে বা ভেঙ্গে আনতে চাইলে আপনাকে ৯% সরল মুনাফাসহ মূলধন ফেরত দিবে সোনালি ব্যাংক। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক কিভাবে কি কি কাগজের সাহায্যে একজন সাধারন মানুষ সোনালি ব্যাংকের যে কোনো শাখায় একটি হিসাব বা একাউন্ট খুলতে পারে।
আরও পড়ুনঃ বিকাশ অ্যাপে রিচার্জ অফার । বিকাশ ২১ টাকা রিচার্জ অফার ২০২১
সোনালি ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে যা যা লাগে
সর্বপ্রথম আপনার আশপাশের সোনালি সেবা শাখায় যেতে হবে।
১) আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটো কপি/ জন্মনিবন্ধন সনদের ফটো কপি/ পাসপোর্ট এর ফটো কপি / ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ফটো কপি।
২) আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি ২ কপি (ছবি অবশ্যই নতুন, সদ্য তোলা, নতুন এবং রঙিন হতে হবে)।
৩) নমিনীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি ১ কপি (ছবি রঙিন এবং অবশ্যই সদ্য তোলা হতে হবে)।
৪) নমিনীর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটো কপি/ জন্ম নিবন্ধনের ফটো কপি / ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ফটো কপি / পাসপোর্টের ফটো কপি।
৫) বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা এবং জন্মসাল।
উক্ত কাগজ পত্র নিয়ে ব্যাংকের যেকোনো শাখায় গিয়ে ফর্ম পূরণ করে এগুলো জমা দিলে ব্যাংক সাধারন প্রক্রিয়া শেষে আপনাকে মোবাইল/ মেসেজের মাধ্যমে কনফার্ম করবে। আজকের সম্পূর্ণ পোস্ট জুড়ে বোঝাতে চেষ্টা করেছি, সোনালি ব্যাংক ডিপিএস সম্পর্কে। আশা করছি এ বিষয়ে আপনাদের আর কোনো ভ্রান্ত ধারনে এবং অজ্ঞতা থাকবেনা।
শেষকথাঃ
আপনারা আমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকলে, এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের বা কাছে মানুষ জনের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আপনার একটা শেয়ারের মাধ্যমে অনেকেই এই বিষয়টা সম্পর্কে জানতে পারবে এবং উপরের দেওয়া নিয়ম গুলো মেনে নিজেদের সোনালি ব্যাংক ডিপিএস রাখতে সক্ষম হবেন।
আপনি চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এবং টুইটারে লাইক দিয়ে সাথেই থাকতে পারেন। এতে করে নতুন কোন পোস্ট পাবলিশের সাথে সাথে নটিফিকেশন পেয়ে যাবেন।
1 মন্তব্যসমূহ
আসসালামু আলাইকুম এখানে ৩ বছর মেয়াদে দেওয়া আছে কিন্তু আমি একজন প্রবাসী ব্যাংক মানুষ পাঠানো পর ওরা বলে ৩ বছর মেয়াদ নাই ৪ বছর আছে সব নিম্ন কিন্তু এখানে লেখা ১৭৩৮০ টাকা মেনেজার আমাকে বলো ১৮৪৫৫ টাকা ৪ বছর মেয়াদ শেষ টাকা দিবেন ৯লাখ ৭০ হাজার এই কি দুরনিতি নাকি অন্যান্য কিন্তু ধন্যবাদ আশা করি উত্তর দিবেন।
উত্তরমুছুন