ফ্রিল্যান্সারদের জন্যে ব্রজপাতের সময় করণীয়া দিকসমূহঃ
আপনি কি একজন ফ্রিল্যান্সার? আপনি কি দিনে বেশির ভাগ সময় ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের সাথেই কাটিয়ে দেন নিজের কাজের প্রয়োজনে? তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্যে, পুরো পোস্টটি মনযোগ সহকারে পড়ুন আর জেনে নিন যে বজ্রপাতের সময় বা ঝড় বৃষ্টির সময় আপনার কি কি করণীয়?
আপনারা একটু ভাল করে খেয়াল করলেই দেখবেন যে বর্তমানে দেশে এখন প্রচুর পরিমানে বজ্রপাত সহ ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে এবং এটাই ঝড় বৃষ্টি হওয়ার মৌসুম। গত কয়েক বছরে দেশে বজ্রপাতের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড় এর কারনে, দেশের বিভন্ন জায়গায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন হচ্ছে।
অনেক জায়গায় মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা খুব সহজে পুরাপুরি ঠিক হয় না। আমরা যারা ফ্রিল্যান্সার রয়েছি বা ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতির উপর অধিক নির্ভরশীল তারাই সব থেকে বেশি ভুক্তভুগি।
গত কয়েক দিনের বজ্রপাতে, বেশ কয়েকজন ফ্রিলান্সারের পিসি, রাউটার, মডেম পুড়ে গেছে। এই সময়ে পিসি ঠিক করাও অনেক ঝামেলার কাজ। বিদ্যুৎ এবং নেট সমস্যার কারনে, অনেকেই ঠিকমত বায়ারের কাজ জমা দিতে পারেননি, অর্ডার ক্যান্সেল সহ নেগেটিভ রিভিউ পাওয়ার মতো অনেক খারাপ খবর রয়েছে। বজ্রপাতে ফ্রিলান্সারদের করনীয়!
আরও পড়ুনঃ ফাইবার গিগ তৈরি করতে যেসব ডিটেইলস দেয়া যাবে না!
বজ্রপাত সহ বৃষ্টির কারনে, প্রায় প্রতিদিনই হতাহতের খবর আসছে। পরিসংখ্যানে প্রকাশ, বিশ্বে বজ্রপাতে যত প্রাণহানি হয়, তার প্রায় অর্ধেকই হয় বাংলাদেশে। এটা থেকেই বোঝা যায় এর ভয়াবহতা কি পর্যায়ে পৌঁছেছে। সাধারন মানুষের সাথে সাথে, একজন ফ্রিলান্সার হিসেবে আমাদের বাড়তি সতর্কতা নেয়া উচিৎ।
কারন আমরা সব সময় ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের সাথে যুক্ত থাকি। আর বজ্রপাতে সবথেকে বেশি ঝুঁকিতে থাকে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস সমুহ। উল্লেখ্য যে, আমার মত যারা গ্রামে থেকে ফ্রিলান্সিং করছেন, তাদের ঝুকি অনেক বেশি, কারন শহরের তুলনায় গ্রামে বজ্রপাত বেশি হয়। তবে শহরেও প্রচুর ঝুকি রয়েছে। শহরেও অনেক বাড়িতে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী পুড়ে যাবার ঘটনা ঘটছে।
বজ্রপাত থেকে বাঁচার জন্য সময় একজন ফ্রিলান্সারের যা যা করনীয়।
- ১। ঝড় শুরু হলেই, আপনার পিসি রাউটার সহ সব ডিভাইস অফ করুন এবং কারেন্ট লাইন থেকে আনপ্লাগ করুন। ব্রডব্যান্ড লাইনের তার পিসি/রাউটার থেকে বিচ্ছিন্ন করুন!
- ২। আপনার ব্রডবান্ড লাইন যদি নরমাল কোরের তারের হয় তবে বজ্রপাতে পিসি রাউটারের ক্ষতির সম্ভবনা বেশি। তাই ভাল হয় IP প্রভাইডারকে বলে অপটিক্যাল কেবল দিয়ে লাইন নিন। এতে ঝুকি কিছুটা কমবে।
- ৩। নিশ্চিত হোন আপনার বাড়ির ইলেকট্রিক লাইন ঠিকমত আরথিং করা আছে কিনা। যদি না করা থাকে তবে দ্রুত এই ব্যাপারে ব্যাবস্থা নিন। লাইন আর্থিং বা গ্রাউন্ড করা থাকলে, ইলেক্ট্রনিক্স পুড়ে যাবার সম্ভবনা অনেক কমে যাবে। এছাড়া বাড়িতে সারকিট ব্রেকার লাগাতে পারেন। এতে বিদ্যুৎ লাইনে বড় কোন সমস্যা হলে সাথে সাথেই, বিদ্যুৎ লাইন ডিস্কানেক্ট হয়ে যাবে। এতে মূল্যবান ইলেকট্রনিক্স সামগ্রি নষ্ট হওয়া থেকে বাচবে। এর জন্য অভিজ্ঞ ইলেকট্রিশিয়ানের হেল্প নিন।
- ৪। টিনের চালে বজ্রপাতেের ঝুকি অনেক বেশি। কারেন্ট লাইন আরথিং করার পাশাপাশি, চালের উপরে বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন।বিস্তারিত জানতে গুগল করুন/ইউটিউব সার্চ দিন, আর অভিজ্ঞ ইলেক্ট্রেশিয়ান এর পরামর্শ নিন।
- ৫। যদি বাড়িতে কোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকে, তবে ঝড়ের সময় সবাই একসাথে না থেকে, আলাদা আলাদা রুমে অবস্থান করুন।
- ৬। বজ্রপাত শুরু হল সব ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস এবং ধাতব বস্তু থেকে দূরে থাকুন। লোহার জানালা, দরজা এবং লোহার গ্রিল থেকে দূরে থাকুন।
- ৭। ঘন কালো মেঘ দেখা দিলে ঘর থেকে বের হবেন না, অতি জরুরি প্রয়োজনে রাবারের জুতা পড়ে বাইরে বের হতে পারেন।
- ৮। বাহিরে থাকা অবস্থায় বজ্রপাত সহ বৃষ্টি শুরু হলে, উঁচু গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার বা ধাতব খুটি, মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন। সম্ভব হলে ফাঁকা জায়গায় অবস্থান করুন।
- ৯। বজ্রপাতে কেউ আহত হলে, বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মত করেই চিকিৎসা করতে হবে। কিভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হয় সেটা জানতে ইউটিউব সার্চ করতে পারেন। আপনার একটু সচেতনতা এক জনের জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারে।
- ১০। বজ্রপাতের আশংকা থাকলে আপনার পেন্ডীং কাজ দ্রুত ডেলিভারি দিন। না দিতে পারলে সময় বাড়াবার জন্য বায়ারকে রিকইয়েস্ট করেন। ভয় নেই বায়ার সময় বাড়িয়ে দেবে। তবে ভুলেও ব্লাঙ্ক ডেলিভারি বা ফেক ডেলিভারি দেবেন না, কাজ ডেলিভারি একেবারেই দিতে না পারলে ক্যান্সেল করে দিন, এতে একাউন্টের কিছুটা ক্ষতি হলেও অন্তত ব্যান হওয়া থেকে বাঁচবেন। আর বেশি সমস্যা মনে করলে সাপোর্টে জানিয়ে রাখতে পারেন। কাজ ডেলিভারি নিয়ে বায়ারের সাথে কোন সমস্যা হলে, ভবিষ্যতে আপনার সুবিধা হবে।
- ১১। প্রত্যেক প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সারের অবশ্যই IPS ব্যাকআপ থাকা উচিৎ। এলাকায় বজ্রপাত হলে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ নাও থাকতে পারে। লোকাল হ্যান্ডমেইড IPS থেকে ব্যান্ডের IPS কেনা ভাল। কারন ব্র্যান্ডের IPS এ UPS মোড ভাল কাজ করে, ফলে বিদ্যুৎ চলে গেলেও, পিসি রিস্টার্ট নেয় না। আর আপনার বাড়তি UPS কেনারও দরকার নেই। ৬০০VA ব্র্যান্ডের IPS এবং ১৩০AMP এর ব্যাটারিতে অনায়াসে ১০-১২ ঘন্টা পিসি এবং ১৬-২০ ঘন্টা ল্যপটপ ব্যাকআপ পাবেন। আমি রাহিমআফরোজ IPS গত চার বছর ধরে কোন ঝামেলা ছাড়াই ইউজ করছি।
- ১২। প্রত্যেক ফ্রিল্যান্সারের কাজের পিসির পাশাপাশি, একটা বিকল্প পিসি অবশ্যই থাকা উচিৎ। নিদেন পক্ষে একটা ল্যাপটপ থাকা উচিৎ। সব ধরনের সতর্কতা নেয়ার পরেও, বজ্রপাতের কারনে পিসি নষ্ট হয়ে যেতে পারে, বিকল্প একটা পিসি, বিপদের সময়ে আপনার সব থেকে কাছের বন্ধু হিসাবে হেল্প করবে।
আরও পড়ুনঃ ফাইবারে উপযুক্ত বায়ার রিকোয়েস্ট পাঠানোর পদ্ধতিসমূহ?
আপনি যদি উপরের এই কয়েকটা বিষয়ে খুব ভাল ভাবে নজরদারি করে কাজ করেন তাহলে আশা করা যায় বজ্রপাতের সময় যে অনাকাক্ষিত ঘটনা গুলো ঘটে আমাদের সাথে সেগুলো থেকে অনেকাংশেই মুক্তি পাওয়া যাবে।
তাই সকলেই একটু সাবধানতার সহিত কাজ করলে নিজের কাজের গতিও সচল থাকবে আবার নিজেদের ডিভাইসের সুরক্ষাও নিশ্চিত হবে। বজ্রপাতে ফ্রিল্যান্সার হিসাবে এটি অবশ্যই আপনার করণীয়।
0 মন্তব্যসমূহ