হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কি?
হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড একটি প্রাথমিক
চিকিৎসা উপকরণ। পানির সাথে অক্সিজেনের অতিরিক্ত অণু যোগ করেই তৈরি করা হয় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড।হাইড্রোজেন পার অক্সাইড (H202) নীল রং এর একটি তরল রাসায়নিক। নানা ধরনের সংক্রমণ নাশক হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়, যা বৈজ্ঞানিকভাবে H2O2 নামে পরিচিত। যৌগটি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, বিষাক্ত পদার্থ দূর করে এবং জীবাণু ধ্বংস করে।
হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এর ব্যবহার
গাঢ় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রকেটের জ্বালানিতে প্রোপেল্যান্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি এন্টিসেপটিক, সেনিটাইজার, ডিসইন্ফেক্টর বানানোর কাজে লাগে। এ ছাড়া বিভিন্ন কারখানায় ইটিপি বা কারখানা বর্জ্য মিশ্রিত পানি বিশুদ্ধকরণে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিষ্কার বা নিরাপদ করার ক্ষেত্রেও এই যৌগ ব্যবহার করা হয়। তবে এটি একটি দাহ্য পদার্থ, শক্তিশালী অক্সিডাইজারের মতো দ্রব্যের সংস্পর্শে আসলে ভয়ংকর আগুন লাগতে পারে। আগুনের শিখায় মূলত হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের মধ্যেকার দূর্বল ভ্যানডারওয়ালস বন্ধন ভেঙে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন আলাদা হয়ে যায়। ফলে অক্সিজেন আগুন জ্বলতে সহায়তা করে তাই বিস্ফোরণ ঘটে।
হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কি দাহ্য পদার্থ?
হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড নিজে দাহ্য নয় কিন্তু এটা উৎকৃষ্ট জারক ৷ এর ধারে কাছে আগুন জ্বলতে জ্বলতে তাপমাত্রা ১৫০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে গেলে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ভেঙে অক্সিজেন ও পানি তৈরি করে ৷ এই অক্সিজেন সেখানে প্রচণ্ড দহন বিক্রিয়া শুরু করে যা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে ৷ হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড এখানে তরল ৷ তাই পানিতে তরল আরও ছড়িয়ে পড়ে আগুন বাড়িয়ে দেবে ৷ এ জাতীয় আগুনে জ্বালানি ও পানি দিয়ে তাপ কমানোর উপায় নেই ৷
আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কি, কেন হয়, করনীয় - আদ্দপান্থ
কেন পানি দিয়ে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এর আগুন নেভানো যায় না?
হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কারণে লাগা আগুন পানি দিয়ে নেভানো যায় না। বরং এতে আগুনের মাত্রা আরও বাড়ে। রাসায়নিকের কারণে লাগা আগুন নেভাতে হয় ফগ সিস্টেমে। কিংবা ব্যবহার করা হয় ফোম কিংবা ড্রাই পাউডার জাতীয় অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র। এ কারণে পানির সাহায্যে এই আগুন নেভানো সম্ভব নয়। এই আগুন নেভানোর উপায় হলো অক্সিজেন সরবরাহ কমানো ৷ এর জন্য CO2, CO, শুকনো গুঁড়ো (বালি, মাটি), ফোম উপযুক্ত ৷
হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এর ভয়াবহতা
হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এর ভয়াবহতার কিছু নমুনা নিচে তুলে ধরা হলো:
১৬ জুলাই ১৯৩৪ সালে, জার্মানির কুমারসডর্ফে, হাইড্রোজেন পারক্সাইড এবং ইথানল সমন্বিত একটি পরীক্ষামূলক মনোপ্রোপেল্যান্ট মিশ্রণ ধারণকারী একটি প্রপেলান্ট ট্যাঙ্ক একটি পরীক্ষার সময় বিস্ফোরিত হয়, এতে তিনজন নিহত হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, জার্মান কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে ডাক্তাররা মানব প্রজাদের হত্যার জন্য হাইড্রোজেন পারক্সাইড ইনজেকশন ব্যবহার করে পরীক্ষা করেছিলেন।
১৯৯২ সালের এপ্রিল মাসে, ফ্রান্সের জারিতে হাইড্রোজেন পারক্সাইড প্ল্যান্টে কম্পিউটারাইজড কন্ট্রোল সিস্টেমের প্রযুক্তিগত ব্যর্থতার কারণে একটি বিস্ফোরণ ঘটে এবং এর ফলে একটি প্রাণহানি ঘটে এবং উদ্ভিদটি ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়।
২৮ অক্টোবর ১৯৯৮-এ মার্কিন শহর অরল্যান্ডো এবং মেমফিসের মধ্যে একটি ফ্লাইটে হাইড্রোজেন পারক্সাইড ছড়িয়ে পড়ার পরে বেশ কিছু লোক ছোটখাটো আঘাত পান।
৫ই জুন, ২০২২ বাংলাদেশের সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রামে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এর বিস্ফোরণে আগুন লেগে ফায়ার সার্ভিসের ৯ জন কর্মী সহ ৪৯ জন নিহত হন।
আরও পড়ুনঃ কালো থেকে ফর্সা হওয়ার উপায় - 2022
হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের কারণে এসিড বৃষ্টি হতে পারে কি?
সম্প্রতি হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এর কারণে সীতাকুণ্ডে হওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডিএমপি পরিচালকের বরাত দিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, “সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে কোন বৃষ্টি আসলে কেউ এটা তে ভিজবেন না। চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড ভয়াবহ আগুনে যে, রাসায়নিক কেমিক্যাল গুলো ঝলসে গেছে। তার ফলে আকাশের মেঘ গুলোতে HYDROGEN PER OXIDE GAS টা মিশে গিয়েছে। সকলকে সতর্ক বার্তাটি প্রধান করুন, নিজে বাঁচুন, অন্যকে ও সাহায্য করুন। বিশেষ করে বৃদ্ধদের বৃষ্টির সময় ঘর থেকে বের হতে দিবেন না।
তবে এটিকে গুজব হিসেবে দাবি করেছেন আল রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেডের প্রোডাকশন অফিসার (হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড প্ল্যান্ট) পল্লব আচার্য্য। তিনি বলেন, ‘H2O2 বা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড এর কারনে এসিড বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই। গুজব ছড়াবেন না । বায়ুতে বিভিন্ন শিল্প কারখানা থেকে নির্গত সালফার ডাই – অক্সাইড , নাইট্রোজেন ডাই – অক্সাইড , সালফিউরিক এসিড বাষ্প বেশি থাকলে , বৃষ্টির সময় ঐ এসিড বাষ্প পানির সাথে যুক্ত হয়ে কেবলমাত্র এসিড বৃষ্টির সৃষ্টি করে । হাইড্রোজেন পারক্সাইডে এসিড বৃষ্টি সৃষ্টিকারী কোনো উপাদানই নাই । ‘
তিনি আরও বলেন, ১৫০+ ডিগ্রী তাপমাত্রায় শুধুমাত্র এটা ডিকম্পোজ হয় , ডিকম্পোজড হলে এটার রাসায়নিক বন্ধন ভেঙে অক্সিজেন মুক্ত হয়ে অগ্নিকান্ডে সহায়তা করে মাত্র । সুতরাং পারক্সাইডের কারনে এসিড বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই ।
(তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, ইন্টারনেট ও বিশেষজ্ঞের মতামত )
2 মন্তব্যসমূহ
অনেক সুন্দর শিক্ষানীয় বিষয়।অনেক উপকৃত হলাম
উত্তরমুছুনআপানাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মূল্যবান মতামতের জন্য।
মুছুন