ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল লম্বা করার উপায় => লম্বা চুল মেয়েদের সুন্দর্য্যের একটি অসাধারন প্রতিক হিসাবেই কাজ করে। আর লম্বা চুলের মেয়েদের দেখতেইও বেশ ভাল লাগে। আর তাই প্রতিটি মেয়েই কিন্তু লম্বা আর ঘন চুলের জন্যে ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল লম্বা করার উপায় হিসাবে নিয়মিত নিজের চুলের যত্ন নিয়ে থাকেন।
কে কতটুকু চুল লম্বা রাখবে সেটা সেই ব্যক্তি একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে যদি কোন কারনে চুলের বৃদ্ধি স্বাভাবিক না হয় তাহলে তাঁকে সুস্থ চুল বলা যায় না। সঠিকভাবে পুষ্টি উপাদান সমূহ না পেলে চুলের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। আর এতে করে আপনাদের চুলের সুন্দর্য্যে নষ্ট হয়ে থাকে। আপনারা যারা চুল লম্বা করার উপায় খুজছেন এই পোস্টটি তাদের জন্যে। এখন আমরা আলোচনা করবো যে কিভাবে আপনি ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল লম্বা করতে পারেন সেই সম্পর্কে।
আপনাদের মাঝে অনেকেই রয়েছেন যারা কিনা চুলে তেল দেন না, তবে নিয়ম করে কিন্তু শ্যাম্পু করেন। আপনি যদি লম্বা চুল পেতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই শ্যাম্পুর পাশাপাশি তেলের দিকেও নজর দিতে হবে। নিয়ম করে আপনাকে সপ্তাহে দু’দিন নারিকেল তেল ও ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে গরম করে মাথার ত্বকে মাসাজ করুন।
মাথায় বা চুলে তেল দেওয়ার কারনে অনেক সময় বালিশে তেল লেগে সেটি নষ্ট হওয়ার ভয়ে অনেকে তেল দিতে চান না। তাই মাথায় তেল দিলে আপনার বালিশে যাতে তেল না লাগে, সেভাবে মাথায় কাপড় বা নরম তোয়ালে জড়িয়ে শুয়ে পড়ুন এবং ঘুম থেকে উঠে শ্যাম্পু করে ভাল করে চুল ধুয়ে নিন। এতে করে আপনার মাথাও ঠান্ডা থাকবে এবং চুলের গোড়া শক্ত হবে পাশাপাশি চুল সহজে ভাঙবে না।
আরও পড়ুনঃ প্রাকৃতিকভাবে চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
চুল লম্বা করার শ্যাম্পু
চুল লম্বা করার শ্যাম্পু অনেকেই খোজাখুজি করে থাকেন। কোন শ্যাম্পু ব্যবহার করলে সহজেই চুল লম্বা করা যায় এবং ঘন হয়। আপনার সুবিধার জন্যে বলে রাখছি যে সিলিকন, সালফাইটমুক্ত কম ক্ষারযুক্ত শ্যাম্পু সব সময় আপনার চুলের জন্য ভালো। আপনি যদি অতিরিক্ত রাসায়নিকযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে থাকেন তাহলে এটি দিনে দিনে চুলের গোড়ার ক্ষতি করে ও বৃদ্ধি আটকায়।
আপনারা যারা রেগুলার শ্যাম্পু ব্যবহার করে থাকেন তারা কখনই চুল খুব বেশি ঘষাও দিবেন না শ্যাম্পু ব্যবহারের সময় এবং গরম পানি দেবেন না চুলে। এতে করে আপনার চুলের গ্রোথ ঠিক থাকবে নচেত অনেক ক্ষতি হতে পারে বেশি পরিমানে ঘষাঘষির কারনে।
চুলের স্বাস্থ্যরক্ষায় সঠিক বালিশের ব্যবহার
আমরা একটু শান্তিতে ঘুমের জন্যে সকলেই ঘুমের সময় বালিশ ব্যবহার করে থাকি। তবে বালিশের ক্ষেত্রে বলতে গেলে আমাদের প্রতিটি মানুষকে তাঁর নিজের চুলের স্বাস্থ্যরক্ষায় নজর দিতে হবে প্রতিনিয়ম ব্যবহৃত সেই বালিশের দিকেও। আমরা জানি যে প্রাকৃতিক ভাবে চুল নিজেই তেল তৈরি করে তার গোড়াকে ভালো রাখার চেষ্টা করে।
তবে এখানে একটা সমস্যা হচ্ছে যে আপনি যদি একটানা সুতি, পলিয়েস্টার বা রেয়নের ওয়ারের বালিশে ঘুমান তাহলে চুলের সেই তেল শুষে নেয় এই বালিশ গুলো। আপনি চাইলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সিল্কের ওয়ার ব্যবহার করতে পারেন এবং ঘুমানোর সময় চুল ভালভাবে বেঁধে নিন।
আরও পড়ুনঃ চুল ঘন করার উপায় কি?
দ্রুত চুল লম্বা ও ঘন করার ঘরোয়া উপায়
বর্তমানে অনেকের অভিযোগ রয়েছে যে তাদের চুল লম্বা হয় না! চুল পড়ে যাচ্ছে! চুল বাঁকা হয়ে যাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি সমস্যা। তবে বর্তমান মানুষের জীবনযাত্রায় বহুল পরিবর্তনের কারনে পরিবেশে এত পরিমান দূষণ, স্ট্রেস আর পুষ্টির অভাব সৃষ্টি হয়েছে সেই অভাবের মাঝে এটাই তো স্বাভাবিক।
আপনারা যারা নিজেদের চুল নিয়ে চিন্তিত এবং কিভাবে লম্বা চুল করা যায় সেই উপায় খুজে থাকেন তাহলে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমেই দ্রুত চুল আরও ঘন ও লম্বা করতে পারেন। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কি কি উপায়ে আপনি নিজের চুলকে লম্বা করতে পারেন সেই সমস্ত বিষয়গুলোঃ
- প্রথমত আপনি চাইলে পেয়াজের রস ব্যবহার করতে পারেন। কেননা পেঁয়াজের রস চুলের জন্য খুবই উপকারী এক উপাদন। এতে থাকা পুষ্টিগুণ চুল ঘন ও লম্বা করতে সাহায্য করে। নারকেল তেল, লেবুর রস ও পেঁয়াজের রস একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন। শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- দ্বিতীয়ত চালের পানিও চুলের যত্নে দারুণ কার্যকর। আপনি চাইলে ভেজানো চালের পানি ব্যবহার করতে পারেন। ভেজানো চালের পানি একটি স্প্রে বোতলে ঢেলে পুরো চুলে ব্যবহার করুন। নিয়মিত এটি ব্যবহারেই আপনি পাবেন ঘন ও লম্বা চুল।
- তৃতীয়ত আপনি চাইলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও নতুন চুল গজাতে ডিমের মাস্কের ব্যবহার করতে পারেন।
- চতুর্থ আপনি চাইলে নিয়ম করে ক্যানস্টর অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এটি চুলের জন্য অনেক উপকারী, বিশেষ করে নতুন চুল গজাতে এই তেল দুর্দান্ত কাজ করে।
- পঞ্চম মেথি ব্যবহার করতে পারেন নিয়মিত ভাবে এটি চুল আরও ঘন ও উজ্জ্বল করে।
- ষষ্ঠ সালফেটমুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে সপ্তাহে ২-৩ বার চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল ভালো থাকবে।
- সপ্তম আমাদের শরীরে সঠিক পুষ্টি উপাদান কন্ট্রোল করা অত্যান্ত জরুরি। চুল ঘন করতে চাইলে সঠিক খ্যাদ্যাভ্যাসও জরুরি।
- অষ্টম রেগুলার খাবার তালিকায় প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাডিস, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার রাখুন এতে করে পুরো শরীরে পুষ্টিউপাদান বজায় থাকবে আর চুল লম্বা হবে সঠিক ভাবে।
- নবম চুলে অত্যধিক তাপ ব্যবহার করা বন্ধ করুন এবং নিয়মিত চুল আঁচড়াতে হবে। তাহলে চুলের ফলিকল গুলো আরও সক্রিয় হয়ে চুল দ্রুত ঘন ও লম্বা করে।
- দশম ক্যাস্টর অয়েলের পাশাপাশি চুলে নিয়মিত ব্যবহার করুন জলপাই তেল। এই তেলে থাকে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড; যা চুলের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। হালকা গরম করে এই তেল মাথার ত্বকে মালিশ করুন।
অল্প সময়ে দ্রুত চুল লম্বা ও ঘন করার দারুণ উপায়
আপনারা অনেকেই নিজের চুলের যত্নে কি ব্যবহার করবেন এবং কোন কোন উপাদান ব্যবহার করলে চুল লম্বা হয় সেই বিষয় নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাই আজকের এই পোস্টে আমরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল লম্বা করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি।
নিয়মিত মাথার ত্বক ম্যাসাজ করুন
তেল দিলে চুল লম্বা হয়? আসলে কিন্তু তেলে চুল লম্বা হয় না বরং চুল লম্বা হয় তেল দেয়ার সময় মাথায় যে ম্যাসাজ করা হয় মূলত সেই কারনেই। আমরা জানি যে চুলের গোঁড়ায় ম্যাসাজ করলে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। এর ফলে চুলের ফলিকল গুলো উদ্দীপিত হয়, চুল পড়া বন্ধ হয় এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
আপনারা যদি চুল লম্বা করার উপায় খুজে থাকেন তাহলে তাঁর ভেতরে এটি একটি অন্যতম মাধ্যেম। আপনারা সপ্তাহে কমপক্ষে দুদিন তেল দিয়ে ভালো করে চুলের গোঁড়ায় ম্যাসাজ করুন। আপনাদের মাঝে অনেকেই রয়েছেন যারা চুলে তেল দিতে চান না। যারা চুলে তেল দিতে চান না তারা কেবল আঙ্গুল দিয়েও নিজের মাথার ত্বক ম্যাসাজ করতে পারেন।
ক্যাস্টর অয়েল এর মাধ্যমে চুল লম্বা করার উপায়
আপনারা অনেকেই জানেন যে ক্যাস্টর অয়েল হচ্ছে চুল ঘন ও এর বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার সবচাইতে দারুণ উপায়। ভিটামিন ই এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ এই তেলের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। বরং চুল দ্রুত বড় করতে দারুণ ভূমিকা রাখে এই তেল।
চুল ঘন করার ঘরোয়া উপায়
সাধারণত মেয়েরাই চুল নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকেন, কিছু কিছু মেয়ে রয়েছেন যারা কিনা চুল ঘন করার জন্য বাজারের এমন কোনো প্রোডাক্ট নেই যে তা ব্যবহার করেননি। মাঝে মাঝে শোনা যায় এই প্রোডাক্ট গুলো উপকারের চাইতে ক্ষতির পরিমান বেশি হয়ে থাকে। আর তাই আজকে চুল ঘন করার জন্য দুটি প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। সপ্তাহে মাত্র ২/৩ দিন খানিকটা সময় বের করে নিয়ে নিম্ন বর্ণিত দুটো হেয়ার মাস্কের ব্যবহারেই পেতে পারেন ঘন, কালো ও উজ্জ্বল চুল।
ডিম ও অলিভ অয়েল
চুল মানুষের সুন্দর্য্যের প্রতিক সেটি ছেলে হউক বা মেয়ে হউক। তবে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা অনেক বেশি চিন্তায় থাকেন চুল নিয়ে। আর তাই চুলের ঘনত্ব ব্রদ্ধির জন্য ডিম ব্যবহার করতে পারেন নিয়ম মেনে। কেননা এই ডিম ব্যবহার হয়ে আসছে অনেক প্রাচীন কাল থেকেই।
এছাড়াও আমরা জানি যে ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা চুল পরা বন্ধ করে। এছাড়া ডিমে আরও রয়েছে সালফার, জিংক, আয়রন, সেলেনিয়াম, ফসফরাস ও আয়োডিন যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে চুলের ঘনত্ব বাড়ায়। তাই চুলের যত্নে ডিম ও অলিভ অয়েল এর ভুমিকা অপরিশীম।
সরিষার তেল ও মেহেদী পাতা
সাধারণত মেয়েরা চুলের যত্নে তেল ব্যবহার করলেও সচারচর কেউ সরিষার তেল ব্যবহার করেন না। কিন্তু আপনারা অনেকেই হয়তোবা এই তেলের গুনাগুন সম্পর্কে জানেনা। সরিষার তেল চুলের গোঁড়া মজবুত করে তুলতে বিশেষ ভাবে কার্যকর একটি উপাদান, যা চুল পড়া রোধ করে দেবে একেবারে। এর পাশাপাশি আপনি চাইলে মেহেদী পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এটি নতুন করে চুল গজাতে সাহায্য করে।
চুলের গ্রোথ ভালো না হওয়ার কারণ
যাদের মাথায় চুল নেই বা চুল রয়েছে কিন্তু সঠিক ভাবে লম্বা হচ্ছেনা। পুষ্টিগুনের অভাবে চুলের আগালি ফেটে যাচ্ছে এবং চুল লম্বা হচ্ছেনা। তবে চুল লম্বা না হওয়ার আসল কারন সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। তাই আজকে চুলের গ্রোথ ভাল না হওয়ার কি কি কারণ থাকতে পারে সেই সম্পর্কে আলোচনা করবো আপনাদের সাথে।
- বংশগত কারনে চুলের সঠিক গ্রোথ বন্ধ হতে পারে।
- বয়স এর কারনে চুল পড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে সঠিক গ্রোথ না হওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
- অতিরিক্ত স্ট্রেস এর কারনে চুলের সঠিক গ্রোথ হয় না।
- হরমোনাল চেঞ্জ এর কারনে চুলের গ্রোথ ভাল না হওয়ার আরেকটি কারন।
- থাইরয়েডের সমস্যা যাদের থাকবে তাদের চুলের সঠিক গ্রোথ ব্যহত হতে পারে।
- পুষ্টিহীনতা থাকলে চুল লম্বা হয়না।
- অতিরিক্ত কেমিক্যাল পণ্যের ব্যবহার ইত্যাদির কারনে চুলের গ্রোথ হয়না।
চুলের গ্রোথ ভালো হওয়ার টিপস
- অতিরিক্ত দরকার ছাড়া হেয়ার ড্রাইয়ার ব্যবহার করা যাবে না।
- অনেকেই যে ভুল করে থাকেন তা হলে ভেজা চুল পেচিয়ে রাখা। তাই ভেজা চুল টাওয়াল দিয়ে পেঁচানো থেকে বিরত থাকুন।
- প্রতিদিনের খাবারে বায়োটিন এবং ভিটামিন এইচ সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। দুধ, ডিম, পনির, বাদাম, মাছ, বাঁধাকপি এবং অ্যাভোকাডো নিয়মিত খান।
- হার্শ কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু ইউজ করা থেকে বিরত থাকুন।
আপনি যদি উপরের দেওয়া টিপস গুলো ফোলো করে থাকেন তাহলে আশা করি আপনার চুলের গ্রোথ সঠিক ভাবে হবে এবং চুল লম্বা করার উপায় নিয়ে চিন্তা থাকবে না। এছাড়াও অন্যান্য যেসমস্ত কারনে চুলের ক্ষতি হতে পারে সেই প্রডাক্ট থেকে শুরু করে চুলে হিট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
আপনি যদি আমাদের এই পোস্টটি মনযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ে থাকেন তাহলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল লম্বা করার উপায় সম্পর্কেও জানতে পারবেন। আর এই ধরনের নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের অফিসিয়াল পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।
0 মন্তব্যসমূহ