মোবাইল ফোন কে আবিষ্কার করেন কত সালে সেটা জেনে থাকা সবার জন্য জরুরী | কেননা আজকের সময়ে মোবাইল আমাদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ | বর্তমান সময়ে আমরা মোবাইল ফোন ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারিনা |
এখন পর্যন্ত যতগুলো যন্ত্র আবিষ্কার হয়েছে সেগুলোর মধ্যে মোবাইল ফোন এর আবিষ্কার সবথেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বললে ভুল হবে না |
মোবাইল ফোন কে আবিস্কার করে কত সালে
মার্টিন কুপার (Martin Kupar) নামে একজন আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার ৩ এপ্রিল ১৯৭৩ সালে প্রথম মোবাইল ফোন আবিষ্কার করেন। এবং সেটি যে কোম্পানির মোবাইল ছিল সে কোম্পানির নাম হল মোটরওয়ালা । প্রথম মোবাইলটির ওজন ছিল দুই কেজি । এবং এই মোবাইলের সাহায্যে ৩০ মিনিট কথা বলার জন্য ১০ ঘন্টা চার্জ দিতে হতো। মোবাইল আবিষ্কারের ১০ বছর পর বাজারজাত করা হয় ।
Motorola dynaTAC 8000Xএই মডেলটি প্রথম সর্বসাধারণের জন্য বাজারজাত করা হয় । ওই সময় একটি মোবাইলের মূল্য ছিল ২,৯৫,৬৬৯ টাকা। মোবাইলটি একবার চার্জ করলে ৩০ মিনিট কথা বলা যেত এবং ৩০ জনের নম্বর স্টোর করার জায়গা ছিল।
আরও পড়ুনঃ ভিডিও ধারণের জন্য ক্যামকোর্ডার আর ডি এস এল আর এর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে বেশি ভালো
সর্বপ্রথম ফোনের মধ্যে কথোপকথন কাদের মধ্যে হয়?
Dr. Joel S. Engel নামে একজন ব্যক্তি ছিলেন যে নাকি মার্টিন কুপার এর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। মার্টিন কুপার সর্বপ্রথম তার কাছে কল করেছিলেন। এবং তার সাথে প্রথম মোবাইল ফোনে কথা হয়।
টাচস্ক্রিন মোবাইল ফোনের আবিষ্কারক কে?
১৯৯২ সালে প্রথম টাচস্ক্রিন মোবাইল তৈরি হয়। সেই ফোনের নাম ছিল IBM Simon. আমেরিকার IBM এবং Bolself মোবাইল কোম্পানি মিলিত হয়ে প্রথম টাচস্ক্রিন মোবাইল ফোনের আবিষ্কার করেন । যদিও আজকের দিনে আপনারা এই কোম্পানির নাম শুনবেন না, তবে যদি সেইদিন এই কোম্পানি গুলি মিলে টাচস্ক্রিন মোবাইলের আবিষ্কার না করতো, তাহলে বুঝতেই পারছেন আজ আমরা কতটা পিছিয়ে থাকতাম। ১৯৯৪ সালে প্রথম টাচস্ক্রিন মোবাইল বাজারে আসে ।
মোবাইল ফোনের ব্যবহার
মোবাইল ফোনের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে । অনেক মোবাইল ফোনই স্মার্ট ফোন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কথা বলার পাশাপাশি এ ধরনের ফোনগুলো অন্যান্য বিষয়েও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যেমন:
১. ইন্টারনেট থেকে যেকোনো তথ্য খুজে বের করার জন্য।
২. ভিডিও কল করার জন্য।
৩. গেম খেলার জন্য।
৪. গান শোনা ভিডিও দেখার জন্য।
৫. ভিডিও ও ছবি তোলার জন্য।
৬. সময় দেখার জন্য।
৭. চিঠি আদান-প্রদানের জন্য।
৮. ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার চালানোর জন্য।
৯. লেখাপড়ার জন্য।
১০ লাইভ টিভি সিরিয়াল খবর দেখার জন্য।
বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সকল ধরনের কাজ করা যায়। মোবাইল ফোন বর্তমান সময়ে আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তু।
আরও পড়ুনঃ স্মার্টফোন চার্জে দেবার ৮ টি সুপার টিপস
বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের বাণিজ্যিক যাত্রা
বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে। সিটিসেল নিয়ে আসে প্রথম মোবাইল ফোন। এটা শুধু বাংলাদেশেই প্রথম ছিল না, উপমহাদেশের মধ্যে প্রথম মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ছিল। চড়া মূল্য এবং সীমিত নেটওয়ার্ক এর কারণে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের অল্প কিছু মানুষ এই ফোন ব্যবহার করতেো। গ্রামীণফোন ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম চালু করে প্রি-পেইড প্যাকেজ যার নাম ছিল ‘ইজি’।
মোবাইল ফোনের ইতিহাস
১৯৭৩ সালে মটোরোলা কোম্পানি প্রথম মোবাইল ফোন তৈরি করেন। এবং এই মোবাইল ফোনটির মডেল ছিল DynaTAC 8000X. এবং ১৯৮৯ সালে, মটোরোলা তাদের দ্বিতীয় মডেল টি বের করেন। যার নাম ছিল MicroTAC 9800 X.
তারপর, ১৯৯১ সরি ইউরোপের প্রথম GSM সিম কার্ড এর সাথে মোবাইল গুলিকে বাজারজাত করা হয়। এবং তখন শুধুমাত্র মোবাইল ফোনের ব্যবসাদারদের মোবাইল ফোনের ব্যবহার করার অনুমতি ছিল। তারপর ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের জন্য মোবাইল ফোনকে বাজারজাত করা হয়।
ধীরে ধীরে যখন মটোরোলা কোম্পানি মার্কেটে ভালো জায়গা করে নেয় ঠিক সে সময় নোকিয়া কোম্পানি এই সুযোগটি কাজে লাগায়। তারা Nokia 1011 মডেল বাজারে আনে। নকিয়া খুব কম দামে কাস্টমারদের মোবাইল বিক্রি করতে শুরু করে। তার কিছুদিন পর বাজারে স্যামসাং কোম্পানি আছে। আস্তে আস্তে মোবাইল ফোনের দাম কমতে থাকে। এবং জনসাধারণের কাছে জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে ওঠে।
মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুবিধা এবং মোবাইল ফোনের গুরুত্ব
মোবাইল ফোন আজকের দিনে আমাদের জীবনের সঙ্গী হয়ে গেছে। যেটি আমাদের কাছে সব সময় থাকে। মোবাইল ফোনের অনেক গুরুত্ব রয়েছে নিম্নে আলোচনা করা হল:
১. বই পড়ার জন্য বই সঙ্গে না নিয়ে, মোবাইলের মধ্যে ই বুক ডাউনলোড করে পরতে পারবেন।
২. বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্ট মোবাইলের মধ্যে স্টোর করে রাখা যায়।
৩. কোন দুর্ঘটনার সময় কম সময়ে সংবাদ পৌঁছানো যায়।
৪. কোন জায়গা খুঁজে না পাওয়া গেলে গুগোল ম্যাপের সাহায্যে সেটা বের করা যায়।
বর্তমান সময়ে সকল ধরনের কাজ ঘরে বসে করা যায় মোবাইলের মাধ্যমে। বর্তমান সময়ে মোবাইল ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত চলতে পারিনা।
আরও পড়ুনঃ আইফোনের নতুন আপডেটে, বন্ধ হবে সমস্ত ট্র্যাকিং পলিসি
মোবাইল ব্যবহারের অপকারিতা
মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ঘুমের সমস্যা হয় সবচেয়ে বেশি। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, মোবাইল ফোন ব্রেন, মাথা বা গলার টিউমারের কারণ হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ মোবাইলের ব্যবহার স্মৃতিশক্তি ও পাহাড়ের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক গুলো কি কি?
মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক গুলো কি কি নিম্নে তুলে ধরা হলো:
১. ঘাড়ে ব্যথা
২. চোখের জ্যোতি কমে যাওয়া
৩. কানে কম শোনা
৪. অস্থি সন্ধি গুলোর ক্ষতি
৫. শুক্রাণু কমে যাওয়া
৬. নোমোফোবিয়া
৭. হঠাৎ রিংটোন শোনা
৮. মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
৯. চিন্তা শক্তি কমে যাওয়া
১০. পর্নো আশক্তি হওয়া
আরও পড়ুনঃ রাউটারের কিছু গুপোন ফিচার ও রাউটার ব্যবহারের নিয়ম
মোবাইলের অন্যান্য ক্ষতিকর দিক :
- শিশু-কিশোরদের মধ্যে পারিবারিক মূল্যবোধ বিনষ্ট ও বাবা-মার উপদেশ না মানার প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
- মোবাইলের কারণে অতিরক্ত সেলফি তোলা বা সেলফিটিস নামের নতুন একটি মানসিক রোগ সৃষ্টি হয়েছে।
- মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের সুবিধার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক ভবন ও ফসলি জমিতে যে টাওয়ার গুলো নির্মিত হচ্ছে, সেগুলোর ইলেকট্রন ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন এর ফলে মানব শরীরের পাশাপাশি গাছপালা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
- দীর্ঘক্ষন মোবাইলের ব্যবহার স্মৃতিশক্তি ওহাট এর ও খাটের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শেষ কথাঃ
আশা করি উপরের এই তথ্যগুলি থেকে মোবাইল কি মোবাইলের জনক কে মোবাইল ইতিহাস সুবিধা এবং মোবাইল কিভাবে কাজ করে এসব প্রশ্নের উত্তর খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। এরকম ইনফরমেশন পেতে হলে আমাদের ব্লগের অন্যান্য আর্টিকেল গুলি পড়তে পারেন ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।
1 মন্তব্যসমূহ
Khobor pore khub bhalo laglo
উত্তরমুছুন