পাইলস কি?
মলদ্বারে অসহ্য বেথার সৃষ্টি হওয়ার মতো বিভিন্ন উপসর্গ যখন দেখা দেয় তখন থাকে আমরা পাইলস বলে থাকি। পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধ রয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি।
আরও পড়ুনঃ জরায়ু টিউমারের লক্ষণ (Ovarian Cancer)
পাইলস কয় ধরনের?
আমরা জানি যে পাইলস প্রধানত ২ ধরনের হয়ে থাকে। যথাঃ
- বহি:স্থ পাইলস ও
- অভ্যন্তরীণ পাইলস।
বহি:স্থ পাইলস
অভ্যন্তরীণ পাইলস
পাইলস কেন হয়?
- কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া থেকে পাইলস হতে পারে।
- অত্যাধিক স্থূলতার কারনে পাইলস হতে পারে।
- বেশি সময় বসে থাকার কারনেও পাইলস হওয়ার একটি মাধ্যম হতে পারে।
- দীর্ঘসময় টয়লেটে বসে থাকার কারনে পাইলস হতে পারে।
- হেমোরয়েড শিরায় কপাটিকার অনুপস্থিতি ও বার্ধক্যর কারনে।
- পুষ্টিকর খাবার কম খাওয়া , দৈনন্দিন ব্যায়াম না করার জন্য।
- পেটের ভিতরে চাপ বৃদ্ধির কারনে পাইলস হতে পারে।
- জন্মগত কারনে অনেকের পাইলস হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় জরায়ু বড় হতে থাকে।
- কোলনের শিরায় অতিরিক্ত চাপ পড়ে বলে শিরা স্ফীত হয়।
উপরের দেখানো বিভিন্ন কারন গুলোর মাধ্যমে আপনি পাইলস নামের রোগের আক্রান্ত হতে পারেন। তাই আমাদের নিজেদের থেকে যেভাবে সচেতন থাকলে এই রোগ থেকে দূরে থাকা যায় সেটাই করা উচিত হবে।
পাইলস রোগের এর লক্ষণ (Symptoms of hemorrhoids)
বিভিন্ন সময় আমরা আমাদের মলদ্বারে বেথার অনুভব করি এবং রক্ত পড়ার মতো অবস্থারও সৃষ্টি হতে দেখা যায়। তাই আজকে আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো যে কি কি লক্ষণ দেখলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে আপনার পাইলস হবার সম্ভাবনা রয়েছে। চলুন তাহলে নিচে দেওয়া লক্ষণ গুলো দেখে নেই।
- মলদ্বার দিয়ে রক্ত যাওয়া।
- মলত্যাগের সময় মলদ্বার নিচের দিকে নেমে যাওয়া।
- মলদ্বারে চুলকানি হওয়া।
- মলদ্বারে ব্যাথা হওয়া।
- মলদ্বারে ফুলে যাওয়া ও ব্যাথা হওয়া।
- অতিরিক্ত ফুলা বা বের হয়ে আসার জন্য মলদ্বার পরিষ্কার রাখতে সমস্যা হওয়া।
পাইলস রোগের চিকিৎসা কি?
উল্লেখিত নিয়ম মেনে চললে বহি:স্থ পাইলসের ব্যাথা ও ফুলা ২-৭ দিনের মধ্যে কমে যেতে পারে। ফুলা পুরোপুরি সেরে যেতে ৪-৬ সপ্তাহ সময় লাগে। যদি বহি:স্থ পাইলসে তীব্র ব্যাথা থাকলে অপারশন প্রয়োজন হতে পারে।
অভ্যন্তরীণ পাইলসের উপসর্গ / সমস্যা যদি বেশি হয় তাহলে অপারশন দরকার হয়, যার বেশির ভাগই দিনে দিনে করা সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ নবজাতক শিশুর যত্ন এবং শিশুর জন্মের পরে ভারনিক্স কি কি কাজ করে?
পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা (home remedies for hemorrhoids)
আপনি পাইলসের অপারেশন করার পূর্বে নিজের ঘরে থেকেই এই রোগের ঘরোয়া যেই সমস্ত চিকিৎসা গুলো রয়েছে সেগুলো কিছুদিন এপ্লাই করে দেখতে পারেন। এতে করে আপনার পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধ হিসাবে ঘরোয়া পদ্ধতি অনেক কাজে লাগতে পারে।
পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসায় বরফের ব্যবহার
আপনারা অনেকেই জানেন যে বরফ কিন্তু ইনস্ট্যান্ট ব্যাথা নাশক হিসাবে কাজে লাগে। আর তাই পাইলস থেকে মুক্তি পেতে বরফ চমৎকার কাজ করে। পাইলসের ব্যাথা কমানোর পাশাপাশি রক্তপাত বন্ধ করতে বরফ ভুমিকা অপরিশীম।
আপনি চাইলে ছোট একটা কাপড়ে কয়েকটি বরফের টুকরো নিন তারপর কাপড় দিয়ে পেছিয়ে ওইটা ক্ষতস্থানে কমপক্ষে ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। প্রতিদিন কয়েকবার এমনটা করলেই দেখবেন পাইলসের সমস্যা রক্ত পড়া, ফুলে যাওয়া আস্তে আস্তে কমে যাবে।
পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসায় অ্যালোভেরার ব্যবহার
অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ উপাদান। এটি পাইলসের যন্ত্রণা বা ব্যাথা কমাতে খুব ভাল কাজ করে। যখন বেশি ব্যাথা অনুভব হয় তখন অল্প করে অ্যালোভেরা জেল নিয়ে ক্ষত স্থানে ধিরে ধিরে লাগিয়ে রাখুন ।কিছুক্ষণ এভাবে রাখলেই দেখবেন জ্বালা আস্তে আস্তে কমে গেছে ।
পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসায় লেবুর রসের ব্যবহার
লেবুর রসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যা ব্লাড ভেসেলের দেয়ালকে শক্ত করে এবং পাইলসের কষ্ট কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আপনি পাইলসের মতো রোগটিকে সারাতে সঠিক উপায়ে লেবুর ব্যবহার করতে পারেন।
পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসায় বাদামের তেলের ব্যবহার
ঘরোয়া চিকিৎসায় বাদাম অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে পাইলস এর চিকিৎসায় ঔষধ হিসাবে। একটা বাটিতে অল্প করে বাদাম তেল নিয়ে তা তুলায় লাগিয়ে পাইলসের ওপর লাগালে ভাল উপকার পাওয়া যায়। তাই পাইলস রোগের চিকিৎসায় আপনি চাইলে বাদামের ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসায় অলিভ অয়েলের ব্যবহার
পাইলস রোগের চিকিৎসায় আপনি অলিভ অয়েলকে কাজে লাগাতে পারেন। কেননা অলিভ অয়েলে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ব্লাড ভেসেলের ইলাসট্রিসিটি বাড়িয়ে দেয় এবং এতে করে পাইলসের ব্যাথা এবং কষ্ট ধীরে ধীরে কমে যায় ।
পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার
আপনাকে প্রচুর পরিমানে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যেসমস্ত খাবারে ফাইবার এর পরিমান তুলনা মূলক ভাবে বেশি থাকে যেমন, শস্য দানা, বাদাম, সবজু শাকসবজি, ব্রাউন রাইস ইত্যাদি খাবার বেশি করে খেতে হবে। কারণ পাইলস সারাতে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার দারুণভাবে কাজ করে।
আরও পড়ুনঃ ফর্সা হওয়ার ডাক্তারি ক্রিম ২০২২
পাইলস এর ঔষধ
ঘরোয়া পদ্ধতিতে যদি আপনার কাজ না হয় তাহলে পরের ট্রিট্মেন্ট হিসাবে আপনাকে অপারেশন করাতে হবে।
বর্তমানে পাইলস এর চিকিৎসার জন্য একটি স্প্রে বের হয়েছে নাম হল পাইলোস্প্রে।
পাইলোস্প্রে হল পাইলস এবং ফিশার জন্য একটি চমৎকার, টাচ-ফ্রি স্প্রে ট্রিটমেন্ট।পাইলোস্প্রে ব্যবহার করা খুবই সহজ, এবং এটি প্রয়োগে কোনও অস্বস্তি বা কষ্ট নেই। এটির মাধ্যমেও পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
অর্শ বা পাইলস রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
অর্শ বা পাইলস তেমনই একটি জটিল রোগ। এই রোগ পুরুপুরি নির্মূল করতে হলে হোমিওপ্যাথিক নিয়মে প্রপার ইনভেস্টিগেশন করে শক্তিকৃত হোমিও ঔষধ ধাপে ধাপে প্রয়োগ করে করে রোগীর ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রকৃত রোগটিকে নিস্তেজ করা হয় এবং এর সাথে বাহিরে প্রকাশিত অর্শ বা পাইলস নামের রোগলক্ষণগুলিও বিদূরিত হয়ে রোগী সুস্থতা লাভ করে থাকে।
আরও পড়ুনঃ ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা ২০২২
অর্শ বা পাইলস রোগের হোমিওপ্যাথিক ঔষধ
আমরা জানি হোমিওপ্যাথি ঔষধে দ্রুত কাজ করে না। এই চিকিৎসায় সময় অনেক বেশি লাগে তাই অনেকেই এই চিকিৎসা ব্যবস্থাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। তবে হোমিওপ্যাথিতে কিছুটা সময় বেশি লাগলেও রোগ নিরাময় হয় চিরতরে। হোমিওপ্যাথিতে এই রোগ চিকিৎসার জন্য রয়েছে বহু মেডিসিন।
- প্রথম ধাপের কিছু ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণের উপর ভিত্তি করে ঔষধ প্রয়োগ করে থাকেন চিকিৎসকরা।
- দ্বিতীয় ধাপের কিছু ক্ষেত্রে রেপার্টরী থেকে রুব্রিক নিয়ে রোগীর সর্বদৈহিক অবস্থার আলোকে ঔষধ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। আবার চূড়ান্ত অবস্থায় রোগীর ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রকৃত রোগটিকে নিস্তেজ করার জন্য নির্বাচিত ঔষধ ধাপে ধাপে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
আশা করি আপনারা পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধ এবং ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে এই রোগ থেকে নিরাময় পেতে পারেন সেই সম্পর্কে সম্পূর্ণ একটা ধারনা পেয়েছেন। লিখার মাঝে কোন রকম সংশোধনের প্রয়োজন মনে করলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
আর এই ধরনের পোস্ট গুলো আপনার বন্ধু বান্ধবদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও সচেতন করে তুলতে পারেন। পাশাপাশি আমাদের ওয়েবসাইটের অফিসিয়াল ফেসবুক এবং টুইটার পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন। এতে করে নতুন নতুন পোস্ট পাবলিশের সাথে সাথে আপডেট পেয়ে যাবেন।
0 মন্তব্যসমূহ