আজকের আলোচ্য বিষয়, GDP এর ভিত্তিতে বাংলাদেশের অবস্থা কত? বর্তমান সময়ে বিশ্ব অর্থনীতির আকার ১০০ টিলিয়ন ডলার অতিক্রম হয়েছে। এর সাথে বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় ৮০০ কোটি পার হয়েছে। যা ২০২২ সালের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।
একটি হিসেবে দেখা দিয়েছে, বৈশ্বিক জিটিভির ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ৩৫ তম। এই সময় বাংলাদেশের জিডিপির পরিমাণ ৪৬০ বিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশী টাকায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা। একটি দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের হিসাব করা হয় জিডিপির মাধ্যমে।
আরও পড়ুনঃ ফরেক্স ট্রেডিং কি এবং কিভাবে ফরেক্স ট্রেডিং করে আয় করবেন?
একটি দেশ, একটি নির্দিষ্ট সময়ে সরকার এবং বেসরকারি খাত থেকে যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে সেটাই ওই দেশের জিডিপি মাধ্যমে। এ হিসাব প্রকাশ করা হয় প্রতি বছরের শেষে। ঠিক একই ভাবে পুরো পৃথিবীর জিডিপির হিসাব প্রকাশ করা হয়।
GDP কি?
GDP এর এর পূর্ণরূপ Gross Domestic Product. যার বাংলা অর্থ মোট দেশজ উৎপাদন। একটি দেশের নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ পণ্য উৎপাদন এবং যে পরিমাণ পণ্য বিক্রি হয় তার মোট হিসাবে জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদন। হিসাবটি প্রতি বছর প্রকাশ করা হয়।
কোন একটি দেশ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উৎপাদিত বা তৈরি কৃত মোট সেবা বা পণ্যের হিসাবকে জিডিপি বলা হয়। জিডিপির হিসাব করা হয় সাধারণত তিনটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে। তিনটি বিষয় হলো আয়, ব্যয় এবং উৎপাদন।
ব্যয় এর তুলনায় যদি আয় এবং উৎপাদন বেশি হয় তাহলে জিডিপির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যা একটি দেশকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
বিশ্বের ১০ টি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ:
বিশ্ব অর্থনীতিতে বর্তমানে অর্থের পরিমাণ ১০০ টিলিয়ন ডলার। এই টাকার বন্টন করা হয় বিশ্বের প্রতিটি দেশের মধ্যে। তবে এর বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে কয়েকটি দেশ। দেশগুলো হল, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, জার্মানি ও ভারত। এই পাঁচটি দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্যকে ছাড়িয়ে ভারত পঞ্চম স্থান দখল করেছে।
এই পাঁচটি দেশ ছাড়াও আরো পাঁচটি দেশের জিডিপির পরিমাণ একত্রে করলে। বিশ্বের মোট জিডিপির ৬৬ শতাংশ তাদের দখলে থাকে। আর বিশ্বের ২৫ টি দেশ এর জিডিপির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৪ শতাংশ। নিম্নে সে দশটি ধনী দেশের নাম এবং অর্থের পরিমাণ প্রকাশ করা হলো:
বিশ্বের দশটি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশর তালিকা:
বিশ্বের ১০ টি নিম্ন অর্থনীতির দেশ:
বিশ্ব অর্থনীতির দশটি দেশ বাদে প্রায় সকল দেশের জিডিপির পরিমাণ অনেক কম। মোট জিডিপির ১৬ শতাংশ বাকি সকল দেশের মধ্যে বন্টন হয়। বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ গুলো ওশেনিয়া মহাদেশর। কারণ, ওশেনিয়া মহাদেশের দেশগুলো দ্বীপ অঞ্চল।
আরও পড়ুনঃ মেট্রোরেল টিকিট কাটার নিয়ম/মেট্রোরেলের টিকিট কাটার নিয়ম
যার ফলে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা অনেক কম। চলুন দেখে নেই বিশ্বের সর্বনিম্ন আয়ের দশটি দেশের তালিকা।
বিশ্বের দশটি নিম্ন অর্থনীতির দেশের তালিকা
বাংলাদেশের অবস্থা: GDP এর ভিত্তিতে বাংলাদেশের অবস্থা কত?
বর্তমান সময়ে বিশ্ব অর্থনীতির অনেক প্রসার ঘটেছে। ঠিক একই ভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে বাংলাদেশের অবস্থা উন্নয়নশীল দেশের তালিকায়।
বিশ্বের অর্থনীতির জিডিপির তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থা ৩৭তম। অবস্থানের দিকে তাকালে বোঝা যায় বাংলাদেশের উন্নয়নের ছোঁয়া। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের জিডিপির পরিমাণ ৪৬০ বিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশী টাকায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা। জিডিপির তালিকায় বাংলাদেশের আগে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরা, মিশর, অস্ট্রেলিয়া।
এই তালিকায় হিসাব করলে দেখা যায় বাংলাদেশের অবস্থা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে। কারণ বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করলো। এর মধ্যেই বিশ্বের অনেক দেশকে পিছিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যা বিশ্ব অর্থনীতিতে অনেক ভূমিকা রাখছে।
এই পরিমাণ দিন দিন আরো বাড়বে এবং জিডিপিতে বাংলাদেশের অবস্থান আরো এগিয়ে আসবে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ এর অর্থনীতির সবচেয়ে বড় উৎস রেমিটেন্স। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি।
বাংলাদেশের জিডিপির প্রধান উৎস:
বাংলাদেশের একটি উন্নয়নশীল দেশ। কিন্তু কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ ছিল। এটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ সকল ক্ষেত্রেই প্রসার ঘটেছে। যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের জিডিপির প্রধান উৎস অনেক রয়েছে। আজ প্রধান প্রধান উৎস নিম্নে তুলে ধরা হলো।
- রেমিটেন্স
- চা
- চিংড়ি
- পোশাক শিল্প
রেমিটেন্স:
রেমিটেন্স আমাদের সকলের কাছেই একটি পরিচিত শব্দ। কিন্তু রেমিটেন্স কি সেটা আমরা অনেকেই জানিনা। রেমিটেন্স হচ্ছে বাংলাদেশের কোন নাগরিক বিদেশে চাকরি করে যে টাকা দেশে পাঠায় সেটাই রেমিটেন্স। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ থেকে অনেক লোক বাইরের দেশে কাজের সন্ধানে যাচ্ছে।
তাদের আয়ের সকল টাকা পরিবারের কাছে পাঠায়। এই টাকাগুলো ব্যাংকের মাধ্যমে আলাদা প্রদান করা হয়। এখান থেকে বাংলাদেশ সরকার অর্থ পেয়ে থাকে। বর্তমান সময়ের আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে রেমিটেন্স। এই অর্থের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যতে এর পরিমাণ আরও বাড়বে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জিডিপির অংশ রেমিটেন্স। সরকারের তত্ত্বাবধানে এক এ টাকার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব। এর জন্য সরকারকে বাংলাদেশের মানুষ অন্য দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তাহলেই জিডিপির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
চা:
বাংলাদেশের রপ্তানির সবচেয়ে বড় উৎস হলো চা। চা উৎপাদন হয় বাংলাদেশের সিলেট বিভাগে। বাংলাদেশের চায়ের মান উন্নত। যার কারণে এর চাহিদা, বিশ্বব্যাপী। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ চার রপ্তানি করা হয়। যা জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এই খাদের দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। যা বাংলাদেশের জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দেশের চায়ের চাহিদা পূরণ করছে।
চিংড়ি:
বাংলাদেশের সাদা সোনা বলা হয় চিংড়ি মাছ কে। কারণ, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে চিংড়ি চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ, এই মাছ খুব সহজেই উৎপাদন করা যায়। এবং তুলনামূলক খরচ কম। এবং দাম অনেক বেশি হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশের চিংড়ি চাহিদা বিশ্বব্যাপী। বিদেশে তিনি রপ্তানি করে বাংলাদেশ সরকার প্রচুর পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছে। যা বাংলাদেশ জিডিপির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আশা করা যাচ্ছে এখান থেকে জিডিপির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুনঃ Google My Business কি এবং এটির প্রয়োজনীয়তা সমূহ ২০২৩
পোশাক শিল্প:
বাংলাদেশর পোশাকের চাহিদা বিশ্বব্যাপী। বিশেষ করে ইউরোপ মহাদেশের দেশগুলি। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়। এই খাদের উন্নতি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ, বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণ বেকার রয়েছে। যারা কম খরচে গার্মেন্টসগুলোতে কাজ করে থাকে।
যার ফলে গার্মেন্টস মালিকগুলো অনেক লাগানো হচ্ছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের বেকারত্ব দূর হচ্ছে। এবং পোশাক শিল্প থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ জিডিপিতে যোগ হচ্ছে। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সাহায্য করছে।
উপরে যেসব আলোচনা করা হলো এসব ছাড়াও বাংলাদেশের কৃষিখাত জিডিপিতে ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে প্রায় বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন। বর্তমান সময়ে সেবা খাত থেকেও প্রচুর পরিমাণ অর্থ জিডিপিতে যোগ হচ্ছে। এসব থেকে বোঝা যায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক আগের তুলনায় অনেক উন্নয়ন করেছে।
শেষ কথা: GDP এর ভিত্তিতে বাংলাদেশের অবস্থা কত?
বাংলাদেশের জিডিপির পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের আয় বৃদ্ধি। বর্তমান সময়ে সকল মানুষ পরিশ্রমে হয়েছে। যার ফলে নিজের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ধারণা করা যাচ্ছে জিডিপির পরিমাণ আর কখনো কমবে না।
কারণ বাংলাদেশের মানুষ এখন প্রায় সবাই শিক্ষিত। যার কারণে, মানুষ তার নিজের কর্ম ব্যবস্থা নিজেই করে নিচ্ছে। এখন আর তেমন বেকার মানুষ দেখা যায় না। সকল মানুষের মধ্যেই উন্নয়নের এক ধরনের জেদ কাজ করে। কারণ, টাকা ছাড়া কেউ কখনো কাউকে দাম দেয় না।
এসব কারণেই মানুষ কর্মঠ হচ্ছে। যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনেক প্রভাব ফেলছে। বর্তমান সময়ে জিডিপির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে ভবিষ্যতে। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ