আমাদের মাঝে অনেকেই রয়েছেন যারা কিনা বাংলাদেশের স্যাটেলাইট কয়টি এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর কাজ কি সেই সম্পর্কে জানেন না। আবার অনেকে জানতে চান যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর কাজ কি এবং কি কি সুফল পাওয়া যাবে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যেমে।
তাই আমরা আজকের এই পোস্টের মাধ্যেমে আপনাদের জানাবো যে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট কয়টি এবং এর কাজ কি কি সেই সম্পর্কে। তাই চলুন তাহলে দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশের স্যাটেলাইট সম্পর্কে।
স্যাটেলাইট কি
আমাদের প্রথমে জেনে নেওয়া প্রয়োজন যে স্যাটেলাইট আসলে কি? এরপরে এই সমস্ত স্যাটেলাইটের কার্যকারীতা সম্পর্কে জানা যাবে। আর তাই এখন আমরা জেনে নিবো যে স্যাটেলাইট আসলে কি বা কাকে স্যাটেলাইট বলা হয়ঃ
আমরা জানি যে স্যাটেলাইট বলতে বোঝায় পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চারদিকে ঘূর্ণায়মান নির্দিষ্ট কাজে ব্যবহৃত কোনাে কৃত্রিম যন্ত্র, যা রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করে পৃথিবীর অর্বিটালে বা কক্ষপথে স্থাপন করা হয়। এবং এই স্যাটেলাইটকে তিন স্তরের রকেটের সাহায্যে কৃত্রিম উপগ্রহকে নির্দিষ্ট উচ্চতায় তুলে, পরে ভূ-পৃষ্ঠের সমান্তরালে নির্দিষ্ট বেগ দেয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ GDP এর ভিত্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান কত?
বাংলাদেশের স্যাটেলাইট কয়টি
বাংলাদেশের স্যাটেলাইট একটি। নাম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ । এটি সাধারনত ভূস্থির যোগাযোগ ও সম্প্রচার বিষয়ক উপগ্রহ।
Satellite এর মানে কি?
স্যাটেলাইট কি বা কৃত্রিম উপগ্রহ কি | How is satellite in Bangla : সাধারণত স্যাটেলাইট বলতে আমরা বুঝি মানুষের তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহ। এটি এমন একটি যন্ত্র যা মহাশূন্যে উৎক্ষেপণ করা হয় এবং পৃথিবী বা মহাকাশে থাকা অন্য কোন গ্রহ বা নক্ষত্র কে প্রদক্ষিণ করে।
স্যাটেলাইটের ধরণ
আপনাদের উদ্দেশ্য বলে রাখা ভাল যে মহাকাশে প্রায় ৫০টির উপর দেশের দুই হাজারের উপর স্যাটেলাইট বিদ্যমান রয়েছে। আর এই স্যাটেলাইট গুলোর মধ্যে রয়েছে-আবহাওয়া স্যাটেলাইট, পর্যবেক্ষক স্যাটেলাইট, ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট ইত্যাদি।
এই সমস্ত স্যাটেলাইটের ভেতরে বিএস-ওয়ান হল যোগাযোগ ও সম্প্রচার স্যাটেলাইট। এর মাধ্যেমে যোগাযোগ স্থাপন এবং সম্প্রচারের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মালিক কে
কোম্পানিটি বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন এবং পরিচালিত। বর্তমানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কোম্পানি সচিবসহ মোট ৩৫ জন কর্মচারী রয়েছেন। ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস-এর যৌথ সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর স্থায়িত্ব
আমরা জানি যে ১৫ বছরের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে অরবিটাল স্লট কেনা হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর জন্য। তবে বিএস বা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ ওয়ানের স্থায়িত্ব হতে পারে ১৮ বছর পর্যন্ত।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর নির্মাণ
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটির ওজন ৩.৭ টন এবং এই স্যাটেলাইটের ডিজাইন তৈরি করেছে ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালাস অ্যালেনিয়া স্পেস। আর যে রকেট এটাকে মহাকাশে নিয়ে যাচ্ছে সেটি বানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেসএক্স এবং উৎক্ষেপণ হয়েছে ফ্লোরিডার লঞ্চপ্যাড থেকে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বা বিএস ওয়ানের খরচ
শুরুতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর বাজেট ধরা হয় ২৯৬৭.৯৫ কোটি টাকা এবং শেষ পর্যন্ত অবশ্য ২৭৬৫ কোটি টাকায় এ পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হল। এর মধ্যে ১৩১৫ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার আর বাকিটা বিদেশি অর্থায়ন এর মাধ্যেমে করা হয়েছে।
স্যাটেলাইটের কাজ
আমরা অনেকেই জানি না যে বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কাজ কি এবং কি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এই স্যাটেলাইট। আপনাদের জন্য বলছি যে এটি মূলত টিভি চ্যানেলগুলোর স্যাটেলাইট সেবা নিশ্চিত করাই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের প্রধান কাজ।
এর সাহায্যে চালু করা যাবে ডিটিএইচ বা ডিরেক্ট টু হোম ডিশ সার্ভিস। এছাড়া যেসব জায়গায় অপটিক কেবল বা সাবমেরিন কেবল পৌছায় নি সেসব জায়গায় এ স্যাটেলাইটের সাহায্যে নিশ্চিত হতে পারে ইন্টারনেট সংযোগ।
স্যাটেলাইটের ফুটপ্রিন্ট
মহাকাশে বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবস্থান ১১৯.১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমার কক্ষপথে। এর ফুটপ্রিন্ট বা কভারেজ হবে ইন্দোনেশিয়া থেকে তাজিকিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত।
শক্তিশালী কেইউ ও সি ব্যান্ডের মাধ্যমে এটি সবচেয়ে ভালো কাভার করবে পুরো বাংলাদেশ, সার্কভুক্ত দেশসমূহ, ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়া।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট এর স্পেসিফিকেশন
বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর ওজন হচ্ছে প্রায় ৩৬০০ কেজি। এবং এই স্যাটেলাইট এ যোগাযোগের জন্য ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। তবে ৪০টি টান্সপন্ডার এর মধ্যে ২০টি বাংলাদেশ নিজে ব্যবহার করবে আর বাকি ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিভিন্ন দেশ বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকার বিনিময়ে ভাড়া দেয়া হবে।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট এর কারিগরি বৈশিষ্ট্য।
বিএস-১ উপগ্রহটি ২৬টি কে-ইউ ব্যান্ড এবং ১৪টি সি ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার সজ্জিত হয়েছে ১১৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার কক্ষপথের অবস্থান থেকে। কে-ইউ ব্যান্ডের আওতায় রয়েছে বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগরে তার জলসীমাসহ ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া অঞ্চল। সি ব্যান্ডেরও আওতায় রয়েছে এই সমুদয় অঞ্চল।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট ব্যবহারকারী দেশসমূহ
বাংলাদেশের সংস্থার পাশাপাশি বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশের বিভিন্ন মিডিয়া সংস্থা বর্তমানে বঙ্গবন্ধু -১ স্যাটেলাইট থেকে ভাড়া নেয়া ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
- হন্ডুরাস - ২টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল
- তুরস্ক – ১টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল
- ফিলিপাইন - ১টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল (আরও একটি চুক্তিবদ্ধ হয়েছে)
- ঘানা – ২ টিভি চ্যানেল (আরও একটি সম্প্রচারের অপেক্ষায়)
- ক্যামেরুন - ১টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল
- দক্ষিণ আফ্রিকা - ২টি অনলাইন ভিত্তিক টিভি চ্যানেল
শেষকথাঃ বাংলাদেশের স্যাটেলাইট কয়টি / বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর কাজ কি?
আপনারা যারা আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন, আশা করি তারা বাংলাদেশের স্যাটেলাইট কয়টি এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর কাজ কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এই ধরনের আরও নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এবং টুইটারে ফলো করুন।
0 মন্তব্যসমূহ