রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা

পবিত্র রমজান মাসের প্রতিটি মুসলমানের জন্য রোজা রাখা ফরজ। তবে বিভিন্ন কারণে অনেকে রমজান মাসে রোজা রাখতে পারে না। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা করতে পারে না। কারণ ডায়াবেটিস রোগীরা সকল ধরনের খাবার খেতে পারে না। 

যার ফলে বিভিন্ন ধরনের অসুবিধায় পড়তে হয়। তবে কিছু নির্দেশনা মেনে খাবার খেলে রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা পালন করতে পারবে। আজ, রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

ডায়াবেটিস স্বাভাবিক মনে হল এটা খুব জটিল রোগ। সঠিক খাবার না খেলে অনেক জটিল সমস্যায় পড়তে হয়। সমস্যা বিশেষ করে মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে হয়। এবং মাটির নিচের সবজি খেলে সমস্যা বেশি হয়।

আরও পড়ুনঃ দুবাই রমজানের সময় সূচি | দুবাই রমজানের সময় সূচি 2023 ক্যালেন্ডার

এই কনটেন্টনে ডায়াবেটিস রোগের খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। সম্পন্ন কনটেন্টি পড়লে ডায়াবেটিস রোগীরা উপকৃত হবেন।

    ডায়াবেটিস কি?

    ডায়াবেটিস কি

    বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত এবং পরিচিত রোগ হচ্ছে ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস সম্পর্কে কমবেশি সকলের জানা রয়েছে। ডায়াবেটিস হল এমন একটি রোগ যার রক্তের সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক তুলনায় অনেক বৃদ্ধি করে। রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ইনসুলিন। 

    ইনসুলিন হরমোনটি পাকস্থলী পিছনে থাকা প্যানক্রিয়াস গ্রন্থি থেকে তৈরি হয়। যখন খাবার পরিপাক হয় তখন এই ইনসুলিন রক্ত থেকে সুগারকে কোষের ভেতর ঢুকিয়ে সেটাকে বিভাজন করে শক্তি উৎপাদন করে। 

    যদি আপনার ডায়াবেটিস হয় তাহলে ইনসুলিন কাজ করা বন্ধ করে দেয়। যার ফলে রক্তে সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষের সুগারের মাত্রা ৭ হয়ে থাকে। এর কম বা বেশি হলে ডায়াবেটিস সমস্যা দেখা দেয়।

    ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ

    ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। এ রোগ হওয়ার আগে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়। বিশেষ করে এই সমস্যাটি হয়ে থাকে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে। চলুন জেনে নেই ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণসমূহ:
    1. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।
    2. চোখে ঝাপসা দেখা।
    3. মিষ্টি জাতীয় খাবার প্রতি টান হওয়া।
    4. ক্ষুধা ও তৃষ্ণা বৃদ্ধি পায়।
    5. কোন কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া।
    6. শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া।
    7. শারীরিক ক্ষত ভালো হতে দীর্ঘদিন সময় লাগা।

    ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা কি?

    ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা কি

    ডায়াবেটিস রোগ খুব ভয়ানক। এই রোগটি হলে অনেক কিছু খাওয়া থেকে বিরোধী থাকতে হয়। তা না হলে ডায়াবেটিসের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকতে হয়। সঠিক খাবার তালিকা ছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। চলুন জেনে নেই, ডায়াবেটিসের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে:
    1. শাকসবজি 
    2. সকল ধরনের ফল
    3. শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার। যেমন: বাদামী বা লাল চালের ভাত, লাল কাটার রুটি।
    4. প্রোটিন যুক্ত খাবার। যেমন: মাছ, মাংস, ডিম, ডাল ও বিভিন্ন ধরনের বাদাম।
    5. দুধ ও ভুক্ত দুধ খাবার। যেমন: টক দই ও চিনি ছাড়া ছানা।
    উপরে যেই সব খাবার কথা বল হল সবগুলোই খাওয়া যাবে। তবে মাটির নিচের যেসব সবজি সেগুলো পরিহার করতে হবে।

    আরও পড়ুনঃ তারাবির নামাজের নিয়ম / তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা অর্থ সহ

    ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া ভালো?

    ডায়াবেটিস রোগীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে খাবারের। ডায়াবেটিস হলে সকল ধরনের খাবার খাওয়া যায় না। এতে করে ডায়াবেটিসের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এবং তৎক্ষণাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসব কারণে সবকিছু বাছাই করে খেতে হয়। 

    বিশেষ করে চিনি জাতীয় খাবার গুলো পরিহার করতে হয়। কারণ চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণ গ্লুকোজ থাকে। যার রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এই কারণে খাওয়ার আগে সবকিছু যাচাই করে খেতে হয়। ডায়াবেটিস হলে বিশেষ করে ভাত খাওয়া কমা দিতে হয়। 

    প্রতিদিন রাতে লালা আটার রুটি খেতে হবে। বেশি করে ফলমূল খেতে হবে। কারণ কলেজের সুগার থাকে তা ডায়াবেটিস বৃদ্ধি করে না। এছাড়াও খাদ্য তালিকায় সাদা চালের পরিবর্তে লাল চাল রাখতে পারেন। এবং খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের ফল রাখতে হবে। এ ধরনের খাবার খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

    রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা:

    ডায়াবেটিস রোগীদের রোজার সময় অনেক সমস্যা হয়। কারণ ডায়াবেটিস রোগ হচ্ছে ঘন ঘন প্রস্রাবের। যার ফলে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা যায়। এই কারণে অবশ্যই রমজানের জন্য আলাদা খাদ্য তালিকা প্রয়োজন। তা না হলে রোজা করা অসম্ভব ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য। 

    রমজান মাসে দুই বেলা খাবার খেতে হয়। সেহেরী ও ইফতারের সময়। এই কারণে অবশ্যই সঠিক খাদ্য তালিকা প্রয়োজন। রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা নিম্ন তুলে ধরা হলো:

    সেহেরী:

    1. ভাত সর্বোচ্চ -৩০০ গ্রাম। তবে লাল চালের ভাত হলে ভালো হয়।
    2. মাংস বা মাছ- ১ পিস।
    3. দুধ - ১ কাপ পরিমাণ।
    4. ডাল পরিমাণ মতো।
    5. সবজি পরিমাণ মতো খেতে পারেন। অবশ্যই আলু বাদ দিয়ে
    6. ইচ্ছা করলে ফলমূল খেতে পারেন।

    ইফতার:

    1. বুট বা ছোলা ভুনা 
    2. পিয়াজু
    3. বেগুনী
    4. মুড়ি
    5. বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস। যেমন: আপেল, কাঁচা আম, মালটা, কমলা ইত্যাদি।
    6. শশা, ক্ষীরা, পেয়ারা, ডাবের পানি, লেবুর পানি ও বিভিন্ন ধরনের টক জাতীয় খাবার ইচ্ছা খেতে পারেন
    অবশ্যই মিষ্টি যত খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।

    রাতের খাবার:

    1. লালা আটার রুটি
    2. মাংস বা মাছ- ১ পিস।
    3. দুধ - ১ কাপ পরিমাণ।
    4. ডাল পরিমাণ মতো।
    5. শাকসবজি
    অবশ্যই আলু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এবং যেসব খাওয়ার মাটির নিচে হয় সেসব খাবার খাওয়া যাবেনা। এসব খাদ্য তালিকা মেনে চললে আপনার ডায়াবেটিস থাকলেও খুব সহজে রোজা পালন করতে পারবেন। 

    আরও পড়ুনঃ রমজানের পবিত্রতা নিয়ে উক্তি বা রোজা নিয়ে কিছু কথা

    তাই ডায়াবেটিস রোগীদের সবসময় খাদ্য তালিকার দিকে লক্ষ্য দিতে হবে। তাহলে এসব সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব।

    টাইপ ২ ডায়াবেটিসে প্রতিদিন কতটুকু সুগার খাওয়া উচিত:

    টাইপ ২ ডায়াবেটিকস স্বাধীনতা হয়ে থাকে শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে। মানুষের বংশগতভাবে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস হচ্ছে অতিরিক্ত প্রস্রাবের রোগ। এই রোগটি হয়ে থাকে রক্তে সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে। অনেকে ডায়াবেটিস হওয়ার পরেও বিভিন্ন ধরনের পানীয় খেয়ে থাকে।

    যাতে চিনি মিশ্রিত থাকে। এই কারণে ডায়াবেটিসের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। অনেকেই জানতে চাই, টাইপ ২ ডায়াবেটিসে প্রতিদিন কতটুকু সুগার খাওয়া উচিত। ডায়াবেটিস হলে অবশ্যই সুগার জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। তা না হলে আপনার নিজেরই ক্ষতি। এই কারণে অবশ্যই সুগার জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।

    ডায়াবেটিস রোগী কি মিষ্টি আলু খাওয়া যাবে?

    ডায়াবেটিস হলে চিকিৎসকেরা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলে। এই কারণে অনেকেই মিষ্টি আলু খাওয়া থেকে বিরত থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মিষ্টি আলুর মধ্যে থাকা পুষ্টিকর উপাদান  ডায়াবেটিকস  নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এবং খাবার হজমের সমস্যা দূর করে। 

    মিষ্টি আলুতে রয়েছে ফাইবার। যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তবে সাধারণ আলু খেলে ডায়াবেটিসের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু মিষ্টি আলুর ক্ষেত্রে এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবে মিষ্টি আলো অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া যাবে না। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ মিষ্টি আলু খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

    কার্বোহাইড্রেট না খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় কেন?

    কার্বোহাইড্রেট না খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। দ্য ডায়েটারি গাইডলাইন অব আমেরিকা এর তথ্য মতে প্রতিদিন একজন মানুষের ৪৫-৬৫ শতাংশ ক্যালরি আসে  কার্বোহাইড্রেট থেকে। তাই খাদ্য তালিকায় অবশ্যই কার্বোহাইড্রেট রাখতে হবে। 

    তা না হলে দিন দিন ওজন কমতে থাকবে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যাবে। তবে কম চর্বিযুক্ত খাবারের তুলনায় লো কার্বোহাইডেট খাবারের ওজন কমাতে অধিক কার্যকরী। এই কারণে হাই কার্বোহাইডেট জাতীয় খাবার থেকে বিরত রাখতে হবে।

     যেমন: সাদা চিনি, সাদা চাল, সাদা ময়দা। এসব খাবার বাদ দিয়ে শাকসবজি, ফলমূল ও আমের জাতীয় খাবার খেতে হবে তাহলেই রক্ত সকাল বেড়ে যাবে।

    ইনসুলিন এর কাজ কি?

    ডায়াবেটিস হলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। যখন কোন ধরনের খাবার বা ওষুধের মাধ্যমে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না তখন ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন শরীরে প্রবেশ করাতে হয়। ইনসুলিন প্রোটিন জাতীয় হরমোন। 

    ইনসুলিনের প্রধান কাজ দেহের প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখা। এই গুরুত্বপূর্ণ হরমোনটি উৎপন্ন হয় দেহের প্যানক্রিয়াসক নামক গ্রন্থি থেকে। বাংলায় যাকে অগ্ন্যাশয় বলা হয়। এর প্রধান কাজ রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ঠিক রাখা।

    রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে ইনসুলিন এর কতদিন লাগে:

    ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ইনসুলিন। যা ডায়াবেটিস রোগীর সবচেয়ে বড় ঔষধ। ডায়াবেটিস রোগ হয়ে থাকে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে। এই গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে। 

    ইনসুলিন অগ্নাশয় নামক গ্রন্থি থেকে উৎপাদন হয়। যা রক্তের সাথে বিক্রিয়া করে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখে। যখন ডায়াবেটিসের মাত্রা বৃদ্ধি পায় কোন ওষুধে যখন কাজ করে না তখন ইনজেকশন এর মাধ্যমে ইনসুলিন নিতে হয়। 

    ইনসুলিন শরীরে প্রবেশ করানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই ডায়াবেটিসের মাত্রা কমে আসে। রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে ইন্সুরেন্সে কতদিন সময় লাগে সঠিক করে বলা যায় না। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই কার্যক্রম শুরু করে।

    শেষ কথা: রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা

    বর্তমান সময়ে প্রতিটি পরিবারে কম বেশি ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে। ডায়াবেটিস রোগ এখন সকলের কাছেই স্বাভাবিক ব্যাপার। এই রোগটি হলে অনেক ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে খাবারের। ডায়াবেটিস হলে সকল ধরনের খাবার খাওয়া যায় না। 

    এতে করে ডায়াবেটিসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ডায়াবেটিস রোগীদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় রমজান মাসে। রমজান মাসে সাধারণ মানুষের খাবারের সমস্যা হয়ে থাকে। বিশেষ করে ভোর রাতের খাবারের পর অনেক সমস্যা হয়। এই সমস্যাটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক বেশি হয়ে থাকে। 

    এই কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের সঠিক খাবারের তালিকা প্রয়োজন। উপরে রমজানের ডায়াবেটিস রোগের খাবার তালিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সম্পূর্ণ লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে ডায়াবেটিস রোগীর সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পাবেন। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ