ইসলামে মেয়েদের চুল বাধার নিয়ম=> মানবজাতির প্রতিটি বিষয় নিয়ে কোরআন হাদিসে অনেক বর্ণনা করা হয়েছে। আজ আমরা জানবো ইসলাম ধর্মের আলোকে নারীর চুল বাঁধার নিয়ম কি কি সেই সম্পর্কে।
নারীর সৌন্দর্যের অন্যতম একটি বিশেষ অংশ হলো চুল। চুল মেয়েদের আকর্ষণীয় করে তোলে। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে মেয়েদের চুল বাধার নিয়ম সম্পর্কে কোন ধারণা বাধা ধরা নেই। মেয়েরা তাদের যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবেই চুল বাঁধতে পারে।
মেয়েরা চাইলে তাদের চুল খোপা করতে পারে, আবার কেউ চাইলে ঝুটি ও বেনি করতে পারে। তবে ইসলাম ধর্মে নারীর চুলকে উঁচু করে বা উটের কুঁজের মত করে বাঁধতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা এভাবে চুল বাধলে নারীর পর্দায় বিঘ্ন ঘটে।
ইসলাম ধর্মে মেয়েদের চুল বাধা নিয়ে যে সকল বিধি নিষেধ উল্লেখ করা হয়েছে তা নিয়েই মূলত আজকের আমাদের এই আলোচনা। যে সকল বিষয় সম্পর্কে আজ আমরা বিস্তারিত জানবো তা নিম্নরূপ:
(1) ইসলামে চুলের যত্ন সম্পর্কে কি বলা হয়েছে?
আমরা সকলেই জানি যে চুল হল মানুষের সৌন্দর্যের একটি বিশেষ অংশ, এলোমেলো চুল মানুষের সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। তাই ইসলামে বলা হয়েছে যাদের চুল আছে তারা যেন চুলের পরিচর্যা করে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন শারীরিক অংশের সৌন্দর্য হলো চুল।
তিনি চুলের যত্ন নিতে বলেছেন এবং তিনি নিজেও ঘাড় পর্যন্ত বাবরি চুল রাখতেন। চুলে বেশি করে তেল দিতেন এবং সমস্ত মাথার চুল এক সমান রাখতেন। মুসলিম উম্মাহর ক্ষেত্রে তিনি বলে গিয়েছেন যে তোমরা চুলের বেশি বেশি যত্ন নাও। তাই ইসলামে মেয়েদের চুল বাধার নিয়ম মেনে চলাই উত্তম।
আরও পড়ুনঃ শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও দোয়া
তিনি আরো বলেছেন যে গোসলের সময় চুল ভালোভাবে ধৌত করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন এবং উঁচু-নিচু করে চুল কাটতে নিষেধ করেছেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদাই ডান পাশে সিঁথি করতেন। তাই নবী করিম সাঃ কে অনুসরণ করে আমরা চুলের পরিচর্যা করব।
(2) চুল খোলা রাখলে কি হয় ?
আমাদের মাঝে অনেকেই রয়েছেন যে মাথার চুল খোলা রাখতে পছন্দ করি, কিন্তু বিভিন্ন ধর্মীয় শাস্ত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে মেয়েদের চুল খোলা রাখা উচিত নয়। কারণ এই মাথার চুলের সাহায্যে অনেক কিছু করা সম্ভব। যেমন ধরুন মাথার চুল দিয়ে কালো জাদু ও বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করা যায়।
এছাড়াও যখন হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন পূজা পাঠ হয় সে সময়টিতেও চুল খোলা রেখে বাহিরে যাওয়া ঠিক না। এটি কে অমঙ্গল বলে ধারণা করা হয়। এছাড়াও যদি আমাদের ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আলোচনা করি তবে মেয়েদের চুল খোলা রেখে পর পুরুষের সামনে যাওয়া একেবারেই নিষিদ্ধ।
ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী মেয়েরা শুধুমাত্র তার স্বামীর সামনে চুল খোলা রাখতে পারবে এবং পরিবারের সদস্যদের সামনে। তাই আমাদের উচিত চুল খোলা অবস্থায় বাহিরে না যাওয়া। যেহেতু এর দ্বারা আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারি তা সামাজিকভাবে হতে পারে হতে পারে ধর্মীয়ভাবে।
(3) মেয়েদের চুল কাটা নিয়ে হাদিস কি বলে? । ইসলামে মেয়েদের চুল বাধার নিয়ম
অনেক জায়গায় উল্লেখিত রয়েছে মেয়েদের চুল কাটা হারাম। তবে কথাটি সম্পূর্ণ সত্য নয় ইসলাম ধর্মে মেয়েদের চুল কাটার বিধান নিচে আলোচনা করা হলো —
- প্রথমত ইসলাম ধর্মে নারীদের চুল লম্বা রাখতে বলা হয়েছে। তাই বলে এটি বলা হয়নি যে চুল একেবারেই কাটা যাবে না, চুল পরিমাণ মতো কাটতে হবে, যেন তা পুরুষের চুলের মত ছোট না হয়ে যায়।
- মেয়েদের চুল এতোটুকু থাকবে যেন তা দিয়ে শরীর আবৃত করে রাখা যায়। কেননা হাশরের দিন নারীদের চুল দ্বারা তাদের শরীর আবৃত থাকবে। আর যে নারীরা চুল কেটে ছোট রাখে তারা নিজেদের শরীর আবৃত করতে পারবে না।
- চার আঙ্গুলের বেশি চুল কাটা নিষিদ্ধ, যদি কারো চুল চার আঙ্গুল কাটলে অতিরিক্ত ছোট হয়ে যায় তবে তার জন্য চুল কাটা নিষেধ।
- কোন পর পুরুষকে আকৃষ্ট করার জন্য যদি চুল কাটা হয় তাহলে সে নারী হবে জাহান্নামী। অন্যথায় যদি স্বামীকে দেখানোর উদ্দেশ্যে চুল কাটা হয় তবে মেয়েরা চুল কাটতে পারবে। চুল কাটার আগে অবশ্যই স্বামীর অনুমতি নিতে হবে।
- হাদিসে এটিও বলা হয়েছে যে যদি কোন অসুস্থতার কারণে চুল কেটে ফেলতে হয় তবে এটিতে কোন গুনাহ হবে না।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সকল নারী পুরুষের উপর অভিসম্পাত করেছেন যে পুরুষ নারীর বেশ ধারণ করে এবং যে নারী পুরুষকে অনুসরণ করে।
উল্লেখিত বিধান অনুযায়ী চুল কাটা জায়েজ তবে মেয়েদের চুল লম্বা রাখাই ভালো। আপনি যদি ইসলামের পথে নিজেকে রাখতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে ইসলামের বিধান মেনেই চুল কাটতে হবে।
আর আপনারা যারা চুল বাধার নিয়ম সংক্রান্ত তথ্য জানতেন না তারা আমাদের এই পোস্টের মাধ্যেমে আশা করি জেনে গিয়েছেন যে কিভাবে ইসলামে মেয়েদের চুল বাধার নিয়ম কানুন রয়েছে সেই সম্পর্কে। তাই সবাইকে আল্লাহ তৌফিক দিন, যাতে করে ইসলামকে সহজ করে মেনে চলতে পারি।
(4) মেয়েদের চুল কাটা কি হারাম? । ইসলামে মেয়েদের চুল বাধার নিয়ম
চুল কাটা নিয়ে অনেক হাদিসে অনেক কিছু উল্লেখ রয়েছে। তবে এমন কোন হাদিস পাওয়া যায়নি যেখানে মেয়েদের চুল কাটা কে হারাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে । চুল কাটার যে সব বিধান রয়েছে তা মেনে চুল কাটা যাবে।
আরও পড়ুনঃ রমজানের পবিত্রতা নিয়ে উক্তি বা রোজা নিয়ে কিছু কথা
কিন্তু এসব বিধান উপেক্ষা করে যদি কেউ চুল কাটে তখন সে গুনাহের ভাগীদার হবে। উল্লেখিত বিধান অনুযায়ী পুরুষ ও নারী প্রত্যেকেই চুল কাটতে পারবে। তাই বলা যায় যে মেয়েদের চুল কাটা হারাম নয়।
(5) মেয়েদের চুল বাধা নিয়ে হাদিস কি বলে?
মেয়েদের চুল বাধা নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন কোন নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায়নি। মেয়েরা তাদের সুবিধা অনুযায়ী চুল বাঁধতে পারবে। ইসলাম ধর্মে শুধুমাত্র মাথার ওপরে উঁচু করে চুল বাঁধা নিষেধ করা হয়েছে।
কারণ এটির কারণে অন্য ব্যক্তির আন্দাজ করতে পারে মাথায় কি পরিমান চুল রয়েছে। যার ফলে নারীর পর্দা ব্যাহত হয় এবং গুনাহের ভাগীদার হতে হয়।
(6) ইসলামে চুল কাটার জন্য নির্দিষ্ট কোন দিন আছে কিনা
ইসলামে চুল কাটা কে হারাম করা হয়নি, তবে বিশেষ কিছু শর্তে চুল কাটা জায়েজ। নারী ও পুরুষের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চুল কাটতে হয়। ইসলাম ধর্মে এটিও বর্ণিত রয়েছে চুলকাটার পর তা ধৌতো করে মাটিতে পুঁতে দিতে হয়। কারণ মৃত্যুর পর আমাদের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের হিসাব মহান আল্লাহ তায়ালা নিবেন।
চুল কাটার নির্দিষ্ট কোন দিন নেই, তবে কিছু কিছু জায়গায় উল্লেখ রয়েছে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার চুল ও নখ কাটা ভালো। কিন্তু ইসলাম ধর্মে নির্দিষ্ট কোন দিন চুল কাটা হবে তার কোন বিধান উল্লেখ করা হয়নি। ইসলামে এসব ভিত্তিহী।।
(7) কি বারে চুল কাটা নিষেধ । ইসলামে মেয়েদের চুল বাধার নিয়ম
চুল মানুষের শরীরের একটি বিশেষ অংশ, যা প্রতিটি মানুষের পছন্দের। প্রতিটি মানুষের চুলের পরিচর্যা করে এবং চুলের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে। এখন বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন রকম স্টাইলে চুল কাটতে পছন্দ করে।
সৌন্দর্যের বৃদ্ধির জন্য এমন অনেক জায়গায় উল্লেখিত রয়েছে যে নির্দিষ্ট কোন দিনে চুল কাটা নিষেধ। আমরা অনেকেই হয়তো এসব দেখে বিভ্রান্তিতে পড়ে যাই। চলুন আজকে তাহলে আমাদের এসব ভুল ধারণা মন থেকে মুছে ফেলি।
আরও পড়ুনঃ সহীহ শুদ্ধ সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ সহ দেখুন
প্রথমত আমরা আমাদের হাদিসের আলোকে চুল কাটবো। বিভিন্ন হিন্দু শাস্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে শনিবার ও বুধবার চুল কাটা নিষেধ। এটিকে তারা অমঙ্গল বলে মনে করে, কিন্তু আমাদের ইসলাম ধর্মে এমন কোন কিছুই বলা হয়নি।
মুসলমানদের জন্য এসব বিশ্বাস করা গুনাহ। সুতরাং আমরা আমাদের ধর্মীয় বিধান অনুসরণ করবো আর এসব ভ্রান্ত ধারণা মনে রাখবো না।
শেষকথাঃ ইসলামে মেয়েদের চুল বাধার নিয়ম
অবশেষে আমরা উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলতে পারি , ইসলাম এমন একটি ধর্ম যেখানে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের জীবন সহজ করার জন্য অনেক উপায় বলে দেয়া হয়েছে।
এমনিভাবে ইসলামে মেয়েরা কিভাবে চুল বাঁধবে? কিভাবে কতটুকু চুল কাটবে? কিভাবে চুলের যত্ন নিবে? ইত্যাদি হাদিসের আলোকে। প্রতিটি বিষয় আমাদেরকে জানতে হবে এবং অবশ্যই তা পালন করতে হবে।
কারণ প্রতিটি ছোট ছোট হিসাব আমাদেরকে মৃত্যুর পর দিতে হবে। তাই আমরা চেষ্টা করব সর্বদা ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলার জন্য। মহান আল্লাহতালা আমাদেরকে প্রতিটি ছোটখাটো ধর্মীয় বিধান মেনে চলার তৌফিক দান করুক। ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য।
0 মন্তব্যসমূহ