অর্জুন গাছের সাথে আমরা কবে যে সকলে পরিচিত। অর্জুন একটি ঔষধি গাছ। এই গাছের ছাল অনেক উপকারী। অর্জুনের ছাল অনেক রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করা ও হয়। অর্জুনের ছাল পেটের নানা ধরনের সমস্যা দূর করে।
অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। নিয়মিত খালি পেটে অর্জুনের ছাল খেলে অনেক ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নিম্নে, অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
অর্জুন গাছের কাজ কি?
অর্জুন একটি ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ। অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। তবে অর্জুনের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। অর্জুন গাছের পাতা, ছাল, ও ফল ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়।
অর্জুন গাছের ছাল বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময় করে। যেমন, গ্যাস্ট্রিক, অতিরিক্ত রক্তচাপ, হজম শক্তি বৃদ্ধি, বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ নিরাময় করে।
অর্জুন গাছের বৈজ্ঞানিক নাম:
অর্জুন গাছের অনেক গুনাগুন রয়েছে। এই কারণে অর্জুন গাছকে ঔষুধি গাছ হিসেবে পরিচিত। অর্জন গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia arjuna. অর্জুন গাছ প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। মার্চ থেকে জুন মাসের ভেতর অর্জুন গাছে ফুল ফোটে এবং ফল ধরে।
অর্জুন ছালের গুড়া:
অর্জুন ছালের গুড়া অনেক উপকারে। অর্জুন গাছের ছাল রোদে শুকানোর পর ভালোভাবে গুঁড়ো করে নিতে হয়। এগুলো নিয়মিত খেলে অনেক ধরনের রোগ নিরাময় হয়। অর্জুন ছালের গুড়ো পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে পাকস্থলীর সকল ধরনের সমস্যা নিরাময় হয়।
অর্জুন ছালের গুড়া ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ রাখে। এছাড়াও গ্যাস্ট্রিক, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি রোগ নিরাময় হয়।
অর্জুন গাছের ছাল কিভাবে খেতে হয়?
অর্জুন গাছের ছাল কিভাবে খেতে হয় আমরা অনেকে জানিনা। অর্জুন গাছের ছাল অনেকভাবে খাওয়া যায়। যেভাবে খান না কেন উপকার পাওয়া যায়। অর্জুন গাছের ছাল কাঁচা অবস্থায় চিবিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেতে পারেন।
অনেকেই অর্জুন গাছের ছাল গুঁড়ো করে খায়। প্রথমে ভালোভাবে অর্জুনের ছাল শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর গুঁড়ো করে নিতে হবে। প্রতিদিন রাতে আধা লিটার পানিতে অর্জুন ছালের গুড়ো ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর সকালে ভালোভাবে ছেকে পানি খেতে হবে। এতে করে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা:
অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। তবে অপকারিতা তেমন নেই। কিন্তু অর্জুনের ছাল খাওয়ার অনিয়মের কারণে অপকারিতা হতে পারে। অনেক ব্যক্তি আছে অতিরিক্ত ভালো করতে গিয়ে বেশি পরিমাণ অর্জনের ছাল খেয়ে ফেলে। এতে করে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অর্জুন একটি ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ। এই গাছের শিকড়, ছাল, পাতা ও ফল সব কিছুর উপকারিতা রয়েছে। অর্জুন গাছের ছাল নিয়মিত খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে পরিমাণ অনুযায়ী খেতে হবে। অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে পাকস্থলীর সমস্যা হতে পারে।
অর্জুন গাছের ছাল কি কি রোগ থেকে মুক্তি দেয়?
অর্জুন গাছের ছাল নিয়মিত খেলে অনেক ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অর্জুন গাছের ছাল কি কি রোগ থেকে মুক্তি দেয়? নিম্ন তুলে ধরা হলো:
- অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- হৃদরোগ থেকে দূরে রাখে।
- লিভারের সমস্যা দূর হয়।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
- হার্ট সুস্থ রাখে।
- যৌন উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- মেদ কমায়।
- মাড়ির ইনফেকশন দূর করে।
- ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করে।
- প্রস্রাবের সমস্যা দূর করে।
- ত্বকের সমস্যা দূর করে।
অর্জুন গাছের পাতার উপকারিতা:
অর্জুন গাছের সম্পূর্ণ অঙ্গ ঔষধি গুনসম্পন্ন। অর্জুন গাছের পাতার উপকারিতা রয়েছে। তবে অর্জুন গাছের পাতা কেউ ব্যবহার করে না। কারণ সকল ধরনের গুনাগুন অর্জুন গাছের ছালে রয়েছে।
আর অর্জুন গাছের ছাল নাগালের মধ্যেই পাওয়া যায়। এ কারণে অর্জুন গাছের পাতার উপকারিতা থাকলেও কেউ ব্যবহার করেনা। সবাই ছাল এবং ফল ব্যবহার করে।
অর্জুন চা এর উপকারিতা:
অর্জুন চা এর উপকারিতা রয়েছে। চা বানানোর সময় অর্জুনের ছাল চায়ের মধ্যে দিয়ে খেলে অনেক উপকারিতা রয়েছে। বিশেষ করে অর্জুনের চা খেলে পেটের সমস্যা দূর হয়ে যায়। এছাড়াও মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যাদের কাশি রয়েছে তারা নিয়মিত অর্জুনের চা খেতে পারেন। এতে করে কাশি দূর হয়ে যায়।
অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিত:
অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা অনেক। অর্জুন গাছের ছাল রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে অনেক উপকারিতা রয়েছে। অর্জুনের ছাল খেলে হৃদরোগ এবং হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করে।
এছাড়াও ব্লাড প্রেসার এবং কোলেস্টেরল লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে। অর্জুনের ছাল বেটে রস করে খেলে হৃৎপিণ্ডের পেশি শক্তিশালী হয়। এবং হৃদ যন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
অর্জুনের কাজ করতে কত সময় লাগে?
অর্জুনের ছাল খাওয়ার সাথে সাথে কাজ শুরু করে। তবে সকল সমস্যা সাথে সাথে নিরাময় হয় না। বিশেষ করে পেটের সমস্যা কোষ্ঠকাঠিন্য এসব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়। কিন্তু হৃৎপিণ্ডের সমস্যা, রক্তচাপ, কলেস্টেরল মাত্রা ঠিক করতে ১৫ থেকে ২০ দিনের মতো সময় লাগে।
আরও পড়ুনঃ আমের উপকারিতা ও অপকারিতা
এই কয়দিন নিয়মিতভাবে অর্জুনের ছাল খেতে হবে। অর্জুনের ছাল নিয়মিত খেলে পেশি এবং হাড় অনেক মজবুত হয়। এ কারণে নিয়মিত অর্জুন খাওয়া উত্তম। অর্জুনের কাজ করতে কত সময় লাগে? সঠিক করে বলা সম্ভব না। রোগের ধরন অনুযায়ী সময় লাগে।
অর্জুন ছাল কি উচ্চ রক্তচাপের জন্য ভালো?
অর্জুন ছাল কি উচ্চ রক্তচাপের জন্য ভালো? কে জানতে চাই। অর্জুনের ছাল উচ্চ রক্তচাপের জন্য ভালো। আয়ুর্বেদী মতে, অর্জুন গাছের ছাল উচ্চ রক্তচাপ এবং সর্দি কাশি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য অর্জুনের সাল রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে হবে।
নিয়মিত ওর জন্য সাল খেলে রক্তচাপ কমানোর পাশাপাশি কোলেস্টেরল এর মাত্রা ঠিক রাখে। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য বদহজম দূর করে। এ কারণে অর্জুন গাছ ঔষধি গাছ হিসেবে পরিচিত।
অর্জুন হোমিও ঔষধ:
অর্জুন ঔষধি গুন সম্পন্ন একটি গাছ। এই গাছের ছাল অনেক ধরনের রোগ নিরাময় করতে ব্যবহার করা হয়। অর্জুন দিয়ে হোমিও ওষুধ তৈরি করা হয়। এছাড়াও এলোপ্যাথিক এবং আয়ুর্বেদিক ওষুধ অর্জুন গাছ দিয়েই তৈরি করা হয়। অর্জুন হোমিও ওষুধ এর নাম Ternminala Arjuna। এই ওষুধ উচ্চ রক্তচাপ এবং হাড়ের সমস্যা নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হয়।
স্বাস্থ্যের উপকারে অর্জুনের বাকল:
স্বাস্থ্যের উপকারে অর্জুনের বাকল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অর্জুন গাছের বাকল পানিতে ভিজিয়ে রেখে প্রতিদিন খালি পেটে খেলে অনেক সমস্যা দূর হয়ে যায়। অর্জুনের বাকল কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমায়। এছাড়াও অর্জুনের বাকলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ক্লটিং রয়েছে যা স্ট্রোক এবং হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।
অর্জুন গাছের ছালের অপকারিতা:
সকল কিছুর উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা ও রয়েছে। ঠিক একই ভাবে অর্জুন গাছের ছালের অপকারিতা রয়েছে। অর্জুন গাছের ছলে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু অনেকেই অতিরিক্ত সেবন করে। যার ফলে পেটের সমস্যা হয়ে থাকে।
এছাড়াও খুব ভারা ফেটে অর্জুন ছালে গুঁড়ো খেলে পেট ব্যথা করতে পারে। এ কারণে পরিমাণ মতো অর্জুনের ছাল খালি পেটে খাওয়া উত্তম।
অর্জুনের বাকলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। অর্জুনের বাকলের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তবে অতিরিক্ত পরিমাণ সেবন করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কারণ কোন ধরনের উপাদান বেশি পরিমাণ খেলে পাকস্থলীতে বিক্রিয়া ঘটতে পারে।
যার কারণে পেটের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে অর্জনের বাকলের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেয়। কিন্তু মাত্রা অতিরিক্ত সেবন করা যাবে না।
শেষ কথা: অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা
অর্জুন অনেক ঔষধি গুন সম্পন্ন একটি গাছ। এই গাছের ছাল এবং ফল অনেক ধরনের রোগ নিরাময় করে। তবে সঠিক সময় সঠিকভাবে সেবন করতে হবে। অর্জুন গাছের ছাল গুঁড়ো করে অনেকদিন যাবত ব্যবহার করা যায়। অর্জুনের গুঁড়ো উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। তাই আমাদের উচিত সঠিক মাত্রায় অর্জুনের ছাল সেবন করা। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ