ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয় রবিউল মাসের ১২ তারিখ। ঈদে মিলাদুন্নবী শব্দের অর্থ মহানবী সাল্লাল্লাহু সালামের জন্মদিন। এই কারণে এই দিনটি অনেকে বিশেষভাবে পালন করে থাকে। এই দিনে সরকারি ছুটি থাকে। তবে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে।
ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ এ সম্পর্কে ধারণা থাকা সকলের উচিত। কারণ না জেনে কোন কিছু পালন করা ইসলাম ধর্মে হারাম। ইসলাম ধর্মে জন্মদিন পালন করা সম্পর্কে কোন হাদিস নেই। এই কারণে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা যাবে না।
ঈদ এ মিলাদুন্নবী অর্থ কি?
ঈদে মিলাদুনন্নবী শব্দের অর্থ হচ্ছে শেষ নবীর জন্মদিন। এই দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু সাল্লাম জন্ম গ্রহণ করেন। এই দিন মুসলমানেরা মহানবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর জন্মদিন পালন করে।
ঈদে মিলাদের দিন মুসলমানরা কি করে?
ঈদ শব্দের অর্থ আনন্দ, খুশি। মিলাদ শব্দের অর্থ জন্মদিন, জন্মকাল, জম্মোৎসব, জন্মস্থান ইত্যাদি। ঈদে মিলাদুন্নবী বলতে বোঝানো হয়, মহানবী (সাঃ) এর জন্মদিন। এই দিনে মুসলমানেরা রোজা রাখে ইবাদত করে। এবং হাদিয়া দিয়ে থাকে। এছাড়াও অনেকে উৎসবের মতো পালন করে থাকে।
ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ?
ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ এই সম্পর্কে অনেকেই জানতে চাই। ইসলাম ধর্মের দলিল হচ্ছে কুরআন মাজীদ এবং মহানবী (সাঃ) এর বাণী। কোরআনে কোন জায়গায় জন্মদিন পালন করার কথা উল্লেখ নেই। এছাড়াও ঈদে মিলাদুন্নবী ১২ ই রবিউল।
এই দিনে মহানবী (সাঃ) ইন্তেকাল করেন। এই কারণে এই দিনে আনন্দ করার কোন যৌক্তিকতা আসে না। এছাড়াও মহানবী (সাঃ) এর জন্ম ১২ রবিউল এই সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। অনেকে ইতিহাস থেকে পাওয়া যায় রবিউল মাসের ৯, ১০, ১১, ১২ যেকোনো একদিনে মহানবীর জন্ম হয়।
আরও পড়ুনঃ আখেরি চাহার সোম্বা কী
এছাড়াও ইসলাম ধর্মে কোন ব্যক্তির জন্ম দিন উদযাপনের কথা উল্লেখ নেই। এর থেকে বোঝা যায় ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা জায়েজ না। এটা সম্পূর্ণভাবেই হারাম। বিভিন্ন ইসলামিক স্কলার এই সম্পর্কে অনেক মতবাদ দিয়েছেন। ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা যাবে না।
ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে আলোচনা:
হিজরী বর্ষের তৃতীয় মাস হচ্ছে রবিউল আউয়াল। এ মাসের ১২ তারিখে মহানবী (সাঃ) জন্মগ্রহণ করেন। মহানবী (সাঃ) এর জন্মদিন বলে মুসলিম ধর্মের ব্যক্তিদের কাছে এটা একটি আনন্দের দিন। এ কারণে এই দিনকে ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করে থাকে।
বিশেষ করে এই দিনটি পালন করে থাকে সুন্নি এবং শিয়া মুসলমান গোষ্ঠীরা। তবে হাদিস অনুযায়ী ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা যাবে না। কারণ কুরআন মাজীদের কোন জায়গায় কোন নবী রাসূলের জন্মদিন পালন করার কথা উল্লেখ নাই। এই থেকে বোঝা যায় ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা যাবে না।
ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস:
ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মদিন উপলক্ষে। তবে মহানবী (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর প্রথম যুগের সাহাবী, তাবেরি মহানবী (সাঃ) এর জন্মদিন উদযাপন করেছে এমন কোন প্রমাণ নেই। মুহাদ্দিস, ফিকহ ও ঐতিহাসিকবিদ এই মত দিয়েছেন।
আলেমদের মধ্যে এই বিষয় নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। তবে সকল আলেমগণ একমত যে কোন নবী রাসূলের জন্মদিন পালনের কথা উল্লেখ নেই। এছাড়াও 12 রবিউল মহানবী (সাঃ) ইন্তেকাল করেন। এ কারণে এই দিনটি সকল মুসলমানের জন্য শোকের।
ঈদে মিলাদুন্নবীর তাৎপর্য কি?
ঈদে মিলাদুন্নবীর তাৎপর্য অনেক। ঈদে মিলাদুন্নবী ১২ ই রবিউল। এই দিনে মহানবী (সাঃ) জন্মগ্রহণ করেন এবং ইন্তেকাল করেন। এই কারণে মুসলমানদের এই দিনের তাৎপর্য অনেক। তবে এই দিন উদযাপন করা যাবে না।
কারণ ইসলাম ধর্মের কোন জায়গায় জন্মদিন এবং মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপনের কথা উল্লেখ নেই। এ কারণে এই দিনে বিশেষ ভাবে কোন কিছু করা যাবে না। ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করে থাকে শিয়া ও সুন্নি মুসলিমরা।
কেন ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয়?
অনেকদিন থেকে মুসলমানেরা ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করে আসছে। এই দিনের বিশেষ ইতিহাস রয়েছে। ১২ রবিউল মহানবী (সাঃ) এর জন্মদিন। মহানবী (সাঃ) ইসলাম ধর্মের অগ্রদূত। তিনি শেষ এবং শ্রেষ্ঠ নবী। তারপরে আর কোন নবীর রাসুল পৃথিবীতে আসেনি।
এই কারণে ১২ ই রবিউল মহানবী (সাঃ) জন্মদিন উপলক্ষে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয়। তবে হাদিস অনুযায়ী ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা যাবে না। এর কোন দলিল নেই।
ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল:
ইসলামের প্রতিটি বিষয়ের উপর দলিল রয়েছে। ইসলাম দলিল ছাড়া কোন কিছু বিশ্বাস করে না। ঈদে মিলাদুন্নবী পালন সম্পর্কে আমাদের সমাজে অনেক মতভেদ রয়েছে। অনেকে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা বেদাআত মনে করে। আবার অনেকে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা নাজায়েজ মনে করে।
ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল রয়েছে। নিম্ন দলিলগুলো তুলে ধরা হলো:
১ নং দলিল:
আবু কাত্বাদাহ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে "মহানবী (সাঃ) কে সমবার দিনের গুরুত্ব সম্পর্ক করলে তিনি উত্তর দেন, আমি এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছি এই দিনে আমার উপর কোরআন নাজিল হয়। (মুসলিম- ২৬৪০ নং হাদিস) মহানবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এই দিনের গুরুত্বপূর্ণ ফুটিয়ে তোলার জন্য সোমবার দিনে রোজা রাখার কথা বলেন।
২ নং দলিল:
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে, "মহানবী (সাঃ) নবুয়ত প্রাপ্তির পর নিজের জন্মদিনের ভিত্তিতে নিজের আকিকা নিজেই আদায় করেছিলেন”। (বাইহাকী)
৩ নং দলিল:
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) কিছু মানুষ নিয়ে নিজ বাসায় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের জন্ম-বৃত্তান্ত তুলে ধরে আনন্দ উৎসব করেছিল। এবং তাঁর প্রশংসাবলী আলোচনা করার পাশাপাশি দরুদ শরীফ পাঠ করেছিল।
এমন সময় মহানবী (সাঃ) সেখানে উপস্থিত হয়ে অবস্থাটি দেখে বললেন, "হে উপস্থিতি! তোমাদের সকলের জন্য আমার শাফায়াত অবধারিত হয়ে গেলো।" (ইবনে দাহ্ইয়া কৃত আত তানভীর ফী মওলেদী বশীরিন নাযীর]। তবে এটি অনেক দুর্বল হাদিস।
ঈদে মিলাদুন্নবীতে করণীয়:
মুসলমানদের ঈদ দুইটি। তবে অনেকে ঈদে মিলাদুন্নবী ঈদের মতন করে উদযাপন করে থাকে। ঈদে মিলাদুন্নবীতে করণীয় কি অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করার কোন মানসম্মত বিধান নেই।
আরও পড়ুনঃ পাকিস্তানি মেয়েদের ইসলামিক নাম অর্থসহ
যেগুলো হাদিস উল্লেখ রয়েছে সেগুলো অনেক দুর্বল। কোন কিছু মানার জন্য অবশ্যই সহীহ অথবা বুখারী হাদিসে উল্লেখ থাকতে হবে। তবে ভালো কোন হাদিসে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের কথা উল্লেখ নাই। এই দিন পালন করলে সর্বোচ্চ নফল ইবাদত এবং রোজা রাখা যাবে।
ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৩ কত তারিখ:
ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয় রবিউল মাসের ১২ তারিখে। ২০২৩ সালের ঈদে মিলাদুন্নবী ২৮ শে সেপ্টেম্বর।
ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থ হলো মহানবী সাঃ এর জন্মদিন। এই দিনে মহানবী (সাঃ) জন্মগ্রহণ করেন এবং ইন্তেকাল করেন। এই কারণে এই দিনে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা ঠিক না। কারণ এই দিনে মহানবী সাঃ ইন্তেকাল করেছেন। তাই এই দিনটি অনেক কষ্টের।
আর এই দিনেই আনন্দ করা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ভাবে নাজায়েজ। তাই একজন মুসলমান হিসেবে এই দিনটি পালন করা ঠিক না। ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে কোন হাদিস উল্লেখ নেই। এছাড়াও কোরআনে কোন জায়গায় জন্মদিন বা মৃত্যুবার্ষিকী পালনের কথা উল্লেখ নেই। তাই ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করার উচিত না।
মিলাদুন্নবী বিদআত কেন?
মিলাদুন্নবী বিদআত কেন? অনেকেই জানতে চাই। কারণ ১২ ই রবিউল জন্মগ্রহণ এই বিষয় নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। তবে এই দিনে মহানবী (সাঃ) ইন্তেকাল করেছেন এটা স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। তাই এই দিনে আনন্দ করার কোনোভাবেই উচিত না।
এছাড়াও মহানবী (সাঃ) তার জন্মদিন কোন সময় পালন করেনি। কোন নবীর রাসুলের তাদের জন্মদিন পালন করেনি। তাই ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা বিদআত।
শেষ কথা: ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ
বর্তমান সময়ে ইসলাম ধর্মের মধ্যে অনেক মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে অনেক জাল হাদিস বের হচ্ছে। এর ফলে সাধারণ মুসলিমগণ অনেক সমস্যায় পড়ছে। কি করতে হবে এবং কি করতে হবে না সেই সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাচ্ছে না।
অনেকেই বর্তমান সময়ে ঈদের মিলাদুন্নবী পালন করে থাকে। তবে এটি পালন করা তেমন কোনো শক্ত হাদিস নেই। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ