আজকের আলোচ্য বিষয়, হেলথ ইন্সুরেন্স কি, স্বাস্থ্য বীমার প্রয়োজনীয়তা। ইন্সুরেন্স বা বীমা হচ্ছে এক ধরনের অর্থনৈতিক সেবা। যেটা আপনাকে ব্যক্তিগত জীবনে বা ব্যবসায়ী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিপরীতে সুরক্ষা দিয়ে থাকে।
এই ঝুঁকি গুলো হল, হঠাৎ করে অসুস্থ, বিভিন্ন ধরনের অ্যাক্সিডেন্ট, আগুন লাগা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি। এসব দুর্ঘটনার ফলে আপনাকে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। যদি আপনার হেলথ ইন্সুরেন্স থাকে তাহলে এইসব ক্ষতির সময় আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে তারা।
আমরা যে পরিমাণ টাকা আয় করে থাকি তার কিছু পরিমাণ অবশিষ্ট রাখি। এ অবশিষ্ট রাখার কারণ হচ্ছে ভবিষ্যতের নিশ্চয়তার জন্য। কারণ কোন মানুষ সব সময় সুস্থ থাকতে পারে না। এসব কারণে আগে থেকেই টাকা জমিয়ে রাখতে হয়। এই সমস্যার সমাধান করেছেন বিভিন্ন স্বাস্থ্য বীমা।
তাদের কাছে দিনে দিনে টাকা জমানোর সুযোগ থাকে। এবং হঠাৎ কোনো ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়লে তারা আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকে। এ কারণে প্রত্যেকটা মানুষের, হেলথ ইন্সুরেন্স কি, স্বাস্থ্য বীমার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। এ কে এম এহসানুল হক বলেন, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।
হেলথ ইন্সুরেন্স কি?
হেলথ শব্দের অর্থ স্বাস্থ্য এবং ইন্সুরেন্স শব্দের অর্থ বীমা। অর্থাৎ হেলথ ইন্সুরেন্স শব্দের অর্থ স্বাস্থ্য বীমা। স্বাস্থ্য বীমা হল এক ধরনের স্বাস্থ্য চুক্তি। স্বাস্থ্য বীমা কি এবং কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে আমরা জানবো। বীমা হল এক ধরনের চুক্তি যা আপনার বিপদের সময় পাশে থাকবে এবং আপনাকে সাহায্য করবে।
মনে করেন আপনি এক লক্ষ টাকার বীমা করেছেন দুই বছরের জন্য। এই টাকা পরিষদের সময় কিছু চুক্তি থাকবে। এবং টাকা পরিশোধ আপনাকে করতে হবে কিস্তির মাধ্যমে। কিস্তি চলাফানের অবস্থায় যদি আপনার শারীরিক কোন জটিলতা দেখা যায় তাহলে ইন্সুরেন্স কোম্পানি আপনাকে টাকা প্রদান করবে।
অনেক সময় কিস্তি চলাকালীন অবস্থায় গ্রাহকের মৃত্যু হয়। মৃত্যু হলে গ্রাহক সম্পূর্ণ টাকা ফেরত পাবে। তবে বীমা করার সময় চুক্তি থাকতে হবে। সাধারণত এইভাবে হেলথ ইন্সুরেন্স করা হয়ে থাকে।
স্বাস্থ্য বীমার প্রয়োজনীয়তা:
বর্তমান সময়ের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত ব্যাক্তিদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করার যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। এখন বিভিন্ন জায়গায় নার্সিংহোম, ও বিভিন্ন হাসপাতাল চালু হচ্ছে। যার ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন অনেক ব্যয়বহুল।
সাধারণ মানুষের পক্ষে চিকিৎসা করা প্রায় অসম্ভব হয়েছে। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান করতে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য বিমান।
যদি কোন মানুষের স্বাস্থ্য বীমা থাকে তাহলে সকল ধরনের চিকিৎসার কমিশন পাওয়া যায়। এবং গুরুতর কোন চিকিৎসা হলে স্বাস্থ্য বীমার পক্ষ থেকে ভার বহন করে। নিম্নে স্বাস্থ্য বীমার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হলো:
- সকল ধরনের স্বাস্থ্য বিষয়ক সুযোগ সুবিধা পেতে।
- কোন ধরনের ঝুঁকি ছাড়া টাকা জমানো যায়।
- বীমা কোম্পানির সাথে বিভিন্ন ধরনের নামিদামি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম চুক্তিবদ্ধ থাকে। যার ফলে তাদের পরিচয় সকল ধরনের চিকিৎসা কম খরচে করতে পারবেন।
- টাকা পরিশোধ করার আগে মৃত্যু হলে সম্পূর্ণ টাকা ফেরত পাওয়া যায়।
- বর্তমান সময়ে এর সুযোগ সুবিধা আরও বৃদ্ধি করেছে।
উপরে যে সব সুযোগ সুবিধার কথা উল্লেখ করা হলো এসব পেতে হলে স্বাস্থ্য বীমা থাকতে হবে। বর্তমান সময়ে প্রায় লোকেরই স্বাস্থ বীমা রয়েছে। এতে করে সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। এই ধরনের সুযোগ সুবিধা পেতে চাইলে স্বাস্থ্য বীমা করুন।
স্বাস্থ্য বীমার উপকারিতা গুলো কি কি:
বর্তমান সময়ে প্রায় সকলেরই স্বাস্থ্য বীমা রয়েছে। কারণ, প্রত্যেক মানুষেরই করোনা কোন রোগ রয়েছে। যার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে চিকিৎসা নেওয়া অনেক কষ্টসাধ্য।
কিন্তু এই সমস্যার সমাধান করেছে স্বাস্থ্য বীমা গুলো। স্বাস্থ্য বীমা থাকলে সকল ধরনের চিকিৎসা খুব কম খরচে দেশের বিভিন্ন স্থানে করা যায়। এ কারণে স্বাস্থ্য বীমা করতে সকলে আগ্রহী। স্বাস্থ্য বীমা করলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় নিম্নে তুলে ধরা হলো:
- সর্বপ্রথম কোন ধরনের জটিল কোন শারীরিক অসুস্থতার কারণে মেডিকেলে ভর্তি হলে চিকিৎসার জন্য আলাদা ভাবে কোন টাকা নিজের পকেট থেকে খরচ করতে হয় না। চিকিৎসার সকল খরচ বীমা কোম্পানি বহন করে থাকে। যার ফলে মধ্যবিত্তের টাকার ওপর কোনো আঁচ পড়ে না। জমাকৃত টাকা গচ্ছিত থাকে।
- হেলথ কার্ড করা থাকলে কোন ধরনের সমস্যা ছাড়াই বীমা কোম্পানির আয়ত্ত ভুক্ত হাসপাতালগুলোতে গিয়ে কোন টাকা ছাড়াই চিকিৎসা পাওয়া যায়।
- কম বয়সে হেলথ ইন্সুরেন্স করলে বীমা প্রিমিয়াম কম লাগে। এবং অনেক বেশি পরিমাণ অসুখের চিকিৎসা পাওয়া যায়। কারণ কম বয়সে আমাদের অসুখ হওয়ার প্রবণতা কম থাকে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমাদের বয়সের বৃদ্ধি পায়। যার ফলে অনেক দিন যাবত চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া যায় কম খরচে।
- লাইফ ইন্সুরেন্স করা থাকলে। সেখান থেকে যেকোনো সময় আর্থিকভাবে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়।
- বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল চেকআপ করলে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু হেলথ কার্ড থাকলে প্রায় ৫০% ছাড় দেওয়া যায়।
- হেলথ ইন্সুরেন্স করার পর যদি কোন ব্যক্তি মারা যায়। তাহলে যে পরিমাণ অর্থের প্রতি থাকে বীমা কোম্পানির সাথে ঠিক সেই পরিমাণ অর্থ দিয়ে থাকে বীমা কোম্পানি।
- হেলথ ইন্সুরেন্স করা থাকলে ইনকাম ট্যাক্স এর কিছু পার্সেন্ট টেক্স কম দিলেও হয়।
স্বাস্থ্য বীমা করার উপায়:
বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্য বীমা করা খুব সহজ বিষয়। কারণ, বর্তমান সময়ে অনেক ধরনের স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানী রয়েছে। বীমা কোম্পানির অনেক কর্মী রয়েছে। যারা বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে স্বাস্থ্য বীমা সম্পর্কে তথ্য দিয়ে থাকে। তাদের কাজ মানুষের স্বাস্থ্য বীমা করানো।
তারা সবার কাছে স্বাস্থ্য বীমার সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরে। এটাই তাদের প্রধান কাজ। কিন্তু আপনি যদি স্বার্থপর হতে চান তাহলে অবশ্যই সফল ধরনের তথ্য নিতে হবে। কারণ, বর্তমান সময়ে অনেক ধরনের ভুয়া কোম্পানি স্থাপন হয়েছে।
যাদের কাজ হচ্ছে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া। বর্তমান সময়ে অনেকগুলো স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানি রয়েছে। যারা নির্ভরতার সাথে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য বীমা করার আগে বিভিন্ন ধরনের তথ্য নিতে হবে।
আপনার এলাকায় যদি কেউ স্বাস্থ্য বীমা করে থাকে তাহলে তার পরামর্শ নিতে হবে। তাহলে নির্ভরযোগ্যভাবে লাইফ ইন্সুরেন্স খুলতে পারবেন। এবং সঠিক সেবা পাবেন।
স্বাস্থ্য বীমা করতে কি কি লাগে:
আমরা সকলেই স্বাস্থ্য বীমা করতে চাই। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও করতে পারিনা। মনে করি অনেক ধরনের ঝামেলা হবে সে কারণে। কিন্তু বর্তমান সময়ে তেমন কোন ইন্সুরেন্স করতে সমস্যা হয় না। অনেক অনেক ব্যক্তি ইন্সুরেন্স করানোর জন্য চাকরি করছে।
সকল ধরনের তথ্য আপনার সাথে তারা সংগ্রহ করে দিবে। স্বাস্থ্য বীমা করতে অনেক ধরনের তথ্য লাগে। স্বাস্থ্য বীমা করতে কি কি তথ্য লাগে নিম্নে তুলে ধরা হলো।
- যে ব্যক্তি স্বাস্থ্য বীমা করবে তার পাসপোর্ট সাইজ ছবি লাগবে।
- ভোটার আইডি কার্ড এর ফটোকপি।
- যে ব্যক্তির নামে বীমা হবে তার নাগরিকত্ব এবং চারিত্রিক সনদপত্র।
- যে ব্যক্তির নামে বিবাহ হবে তার মেডিকেল চেকআপের রিপোর্ট।
- কত টাকার স্বাস্থ্য বীমা করবে সেটার উল্লেখ করতে হবে।
- একজন নমনীর প্রয়োজন। কারণ, যার নামে একাউন্ট সে যদি মারা যায় সেই টাকা উঠানোর জন্য মনের প্রয়োজন।
- নমনীর পাসপোর্ট সাইজ ছবি এবং আইডি কার্ডের ফটোকপি প্রয়োজন।
ওপরে যেসব তথ্য উল্লেখ করা হলো এসব লাগে স্বাস্থ্য বীমা করতে। এছাড়া সকল বীমা এই তথ্যের মাধ্যমে করা হয়। স্বাস্থ্য বীমা করতে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন কোম্পানিটি নির্ভরযোগ্য হয়।
লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির নাম:
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে অনেক ধরনের লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি রয়েছে। কিন্তু সকল গুলো বিশ্বস্ত নয়। অনেকেই রয়েছে যারা টাকা আত্মসাৎ করে থাকে। কিন্তু এদের মধ্যে পাঁচটি কোম্পানি রয়েছে যারা বিশ্বস্ত। চলুন জেনে নেই বিশ্বস্ত লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির নাম
- ডেলটা লাইফ ইন্সুরেন্স
- ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্স
- পদ্মা ইসলামিক লাইফ ইন্সুরেন্স
- জীবন বীমা কর্পোরেশন
- মেটলাইফ এলিকো
স্বাস্থ্য বীমার অপকারিতা:
সবকিছুই উপকারের পাশাপাশি অপকারিতাও রয়েছে। ঠিক একই ভাবে স্বাস্থ্য বিমার উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা রয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ৪৭ বছর ধরে স্বাস্থ্য বীমা চালু রয়েছে। স্বাস্থ্য বীমা চালু থাকা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো বিভ্রান্তি রয়েছে।
সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য বীমা সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব রয়েছে। স্বাস্থ্য বীমায় উল্লেখ থাকে স্বাস্থ্য বীমা সদস্য ব্যক্তি যদি মারা যায় তাহলে সাথে সাথে তার পরিবারকে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু প্রায় জায়গায় মৃত্যুর পরও বীমা কর্তৃক অর্থ না পাওয়ার অনেক ধরনের অভিযোগ রয়েছে।
এক্ষেত্রে দুই পক্ষেরই সমস্যা হয়। কারণ, এসব কথা সকলের মধ্যে ছড়িয়ে স্বাস্থ্য বীমা প্রতি মানুষের বিশ্বাস উঠে যায়। যার ফলে বীমা কর্তৃপক্ষের গ্রাহক কমে যায়। এবং সাধারণ মানুষ এসব ভোগান্তির ভয় থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে।
এছাড়াও আরো সমস্যা রয়েছে, যেমন ঠিকমতো টাকা পরিশোধ না করতে পারলে তাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। একাউন্ট খোলার সময় তারা সকল ধরনের চিকিৎসার সময় আত্মিক সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু বেশিরভাগ সময় তারা কথা রাখে না।
যার ফলে গ্রাহকের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। যে সময় টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার কথা সেই সময় টাকা দেয় না। তাদের অফিসে অনেক দিন যেতে হয়। এসব ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
শেষ কথা: হেলথ ইন্সুরেন্স কি, স্বাস্থ্য বীমার প্রয়োজনীয়তা
প্রতিটা মানুষের হেলথ ইন্সুরেন্স থাকা প্রয়োজন। কারণ, health insurance থাকলে খুব সহজেই দেশের বিভিন্ন প্রাইভেট মেডিকেলে কম খরচকে চিকিৎসা করা যায়। এছাড়াও, অপারেশনের সময় পুরোপুরি টাকা স্বাস্থ্য বীমা বহন করে থাকে। যার ফলে রোগীকে ভোগান্তিতে পড়তে হয় না।
এছাড়াও আরো অনেক সুবিধা রয়েছে, বর্তমান সময়ে মানুষ যাই করে তা থেকে কিছু জমা করতে চাই। টাকা জমা করার জন্য সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হচ্ছে লাইফ ইন্সুরেন্স। এখানে টাকা সুরক্ষিত থাকে এবং জমানো যায়। এবং বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়।
তাই প্রতিটা মানুষের লাইফ ইন্সুরেন্স থাকা প্রয়োজন। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ