ডিসেম্বর মাস থেকে শীত শুরু হয়। এই সময় বাজারে অনেক ধরনের শাকসবজি দেখা যায়। কারণ ডিসেম্বর থেকে নভেম্বর এই সময়টায় সবজি চাষের জন্য উপযুক্ত সময়। এছাড়াও অন্যান্য সময় সবজি চাষ হয়। তবে এই সময়ের মতো হয় না।
বাংলাদেশে কত প্রকার সবজি চাষ করা হয়?
বাংলাদেশের প্রায় সকল ধরনের সবজি পাওয়া যায়। তবে সবজি চাষের বিভিন্ন সময় রয়েছে। সেগুলো হল শীতকালীন সবজি, গ্রীষ্মকালীন সবজি এবং বর্ষাকালীন সবজি। সবচেয়ে বেশি সবজি উৎপন্ন হয় শীতকালে। শীতের আবহাওয়া সবজি চাষের জন্য উপযুক্ত।
তাই সব ধরনের সবজি এই সময় পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ে সারা বছর সব ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সেগুলো মৌসুমী সবজি না। এ কারণে সঠিক স্বাদ পাওয়া যায় না। এছাড়াও এসব সবজি খেলে মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সবজি চাষের সময় সূচি:
সবজি চাষের সময় সূচি জানা অত্যন্ত জরুরি। কারণ সবজি চাষের সময় সবজি চাষ করলে উৎপাদন বেশি হয়। এবং ফসলের মান অনেক ভালো হয়। তবে বর্তমান সময়ে সব ধরনের সবজি সব সময় পাওয়া যায়। তবে সময় ছাড়া সবজি চাষ করলে ফলন কম হয় এবং গুণগতমান অনেক খারাপ হয়।
সবজি চাষের সময়সূচী নিম্ন তুলে ধরা হলো:
বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ: বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে যেসব সবজি মাটিতে রোপন করতে হয়। সেগুলো হল: লাল শাক, ডাটা, পাতা পেঁয়াজ, পাট শাক, বেগুন, মরিচ, ঝিঙ্গা, চিনচিঙ্গা, করলা, পটল ঢেঁড়স ইত্যাদি।
আষাঢ় ও শ্রাবণ: আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে যেগুলো ফসল রোপন করতে হয়। সেগুলো হল: বেগুন, সিমের, শশা, বীজ, কমলা, লাউ, ইত্যাদি।
ভাদ্র ও আশ্বিন: ভাদ্র ও আশ্বিন যেগুলো সবজির বীজ রোপন করতে হয়। সেগুলো হলো: মোলা, ওলকপি, বরবটি, তরই, ধুম তরই, ঢেঁড়স ইত্যাদি।
কার্তিক ও অগ্রহায়ণ: কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে যে সব সবজির বীজ রোপন করতে হয়। সেগুলো হল: আলু, পেঁয়াজ, রসুন, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মূল, গাজর, বেগুন ইত্যাদি।
পৌষ ও মাঘ: পৌষ ও মাঘ যেসব সবজির বীজ রোপন করতে হয় সেগুলো হল: ঢেঁড়স, শশা, খিরা, পটল, করলা, পুঁইশাক লাল, শাক ইত্যাদি।
কিছু কিছু সবজি রয়েছে যেগুলো সারা বছর পাওয়া যায়। এগুলো ফসলের কোন নির্দিষ্ট মৌসুম নেই। বর্তমানে মৌসুম ছাড়াও কিছু ফসল চাষ হচ্ছে। কারণ মৌসুম ছাড়া সবজি চাষ করলে অনেক বেশি দামে বিক্রয় করা যায়। যার কারণে সারা বছর সকল ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে।
কোন মাসে সবজি চাষ করা ভালো:
বর্তমান সময় অনুযায়ী যত আগে সবজি বাজারে তোলা যায় তত দাম ভালো পাওয়া যায়। এ কারণে সবজির বীজ আগে রোপন করাই ভালো। তাহলে কম সবজি চাষ করে বেশি টাকা মুনাফা করা সম্ভব। সবজি চাষ করার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে শীতকাল।
আরও পড়ুনঃ আমের উপকারিতা ও অপকারিতা
বাংলাদেশের প্রায় সকল সবজি শীতকালে পাওয়া যায়। শীতকালে আবহাওয়া শীতল থাকে যার কারণে সবজিগুলো সেগুলো খুব সহজেই বড় হয়ে যায়। এছাড়াও এই সময় শিশির পড়ে যাতে করে অতিরিক্ত সেচ দিতে হয় না। যার ফলে মাটি উর্বর থাকে এবং সবজি ভালো হয়।
মালচিং বলতে কী বোঝায়?
মালচিং এর গভীরতা কত হওয়া উচিত?
মালচিং শব্দের অর্থ কি আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি। মালচিং এর গভীরতা ১ থেকে ২ ইঞ্চির মত হওয়া উচিত। তাহলে সূর্যের রশি মাটিতে পৌঁছাতে পারে না। যার ফলে মাটি আদ্রতা অনেকদিন ধরে রাখতে পারে।
শীতকালীন সবজি চাষের সময়:
বাংলাদেশ ছয়টি ঋতুর দেশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজি উৎপন্ন হয়, শীত ঋতুতে। শীতকালীন সবজি রোপন করতে হয় নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে। এ সময় যেসব সবজি রোপন করা হয় সেগুলোর ফলন অনেক ভালো হয়। শীতকালীন সবজি খুব কম সময়ের মধ্যে হয়ে যায়।
ডিসেম্বর মাসের সবজি চাষ:
ডিসেম্বর মাস কৃষকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময় আসলে কৃষকেরা বীজ বহন করতে শুরু করে। কারণ শীতকালীন সকল ফসলের বীজ বহন করতে হয় ডিসেম্বর মাসের মধ্যে। তাহলে ভালো ফসল উৎপন্ন করা যায়। ডিসেম্বর মাসে সবজি চাষ করলে ফসলের রোগ কম হয়।
এবং শেচ কম লাগে। এছাড়াও শীতকালীন ফসল অনেক। যার জন্য ডিসেম্বর মাসে সবজি চাষ খুব ভালো হয়। এবং সঠিক সময় ফসল বাজার করা যায়। এবং ভালো দামে বাজারে বিক্রি করা যায়।
শীতকালে কি কি সবজি চাষ করা হয়?
শীতকালে বাজারে গেলে অনেক ধরনের সবজি দেখা যায়। এই সময় সবজির দাম অনেক কম হয়। এবং শীতকালীন অনেক সবজি পাওয়া যায়। শীতকালে কি কি সবজি চাষ করা হয়? নিম্ন তুলে ধরা হলো:
আলু
বাঁধাকপি
ফুলকপি
টমেটো
পালং শাক
গাজর
মুলা
লাউ
শিম
ওলকপি
বরবটি
শীতকালে কোন সবজি খাওয়া ভালো:
সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে হলে অবশ্যই প্রতিদিন শাকসবজি খেতে হবে। কারণ শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান। যা আমাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। শীতকালে আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এবং হাত-পা খসখসে হয়ে যায়। এসব সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য শাকসবজি খেতে হয়।
আরও পড়ুনঃ ব্ল্যাক কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
শীতকালে যেগুলো সবজি খাওয়া ভালো সেগুলো হল: টমেটো, গাজর, পালং শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি। শীতকালীন সকল সবজি আমাদের খাওয়া উচিত। কারণ মৌসুমী সবজি মৌসুমে খেতে ভালো লাগে। এবং পুষ্টিগুণ সঠিক পাওয়া যায়।
কোন সবজির চাষ সবচেয়ে কম সময়ে হয়?
শীতকালে সকল ধরনের সবজি বাজারে দেখা যায়। তবে কিছু কিছু সবজি রয়েছে যেগুলো খুব কম সময়ের মধ্যে হয়। যেগুলো সবজি খুব কম সময়ে হয় সেগুলো হল:
পালং শাক
মুলা
গাজর
ফুলকপি
বাঁধাকপি
ধনেপাতা
কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয়?
কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয় সেগুলো ইতিপূর্বে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। বর্তমান কিছু সবজি রয়েছে যেগুলো সারা বছর চাষ করা যায়। এবং ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে মৌসুম ছাড়া সবজি চাষ করলে বেশি দামে বিক্রয় করা যায়। যার ফলে লাভ বেশি হয়।
বারোমাসি সবজি তালিকা:
বাংলাদেশের কিছু সবজি রয়েছে সারা বছর পাওয়া যায়। এগুলো সবচেয়ে সারাবছর চাষ করা যায়। নিম্নে বারোমাসি সবজি তালিকা তুলে ধরা হলো:
মিষ্টি কুমড়া
করলা
পটল
ঝিঙ্গা
শসা
চিচিঙ্গা
চাল কুমড়ো
লাউ
পুঁইশাল
লাল শাক
বরবটি
ঢেঁড়স
গাজর
টমেটো
শেষ কথা: ডিসেম্বর মাসের সবজি চাষ
বাংলাদেশের প্রচুর শাকসবজি চাষ হয়। কারণ বাংলাদেশের শাকসবজিতে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। তবে সবজি চাষের ও সময় হচ্ছে শীতকাল। যার জন্য ডিসেম্বর মাসের সবজি চাষ শুরু করতে হয়।
ডিসেম্বর মাসের চাষ শুরু করলে পুরোপুরি শীতের সবজি বাজার করা যায়। এ সময় সবজির ভালো ফলন হয়। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ