জন্মগতভাবে আমাদের সকলের গায়ের রং ভিন্ন। কেউবা ফর্সা কেউবা কলো কেউবা শ্যামলা। গায়ের রং কালো হলে অনেকে মন খারাপ করে। সকলেই চাই ফর্সা হতে। সম্পূর্ণভাবে ফর্সা না হতে পারলে ও সঠিক হবে চলাফেরা করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা যায়।
কিছু কিছু খাবার খেলে ভেতর থেকে ত্বক ফর্সা হয়। শরীরের ত্বক ফর্সা করার উপায় সম্পর্কে অনেকে জানতে চাই। জন্মগতভাবে ফর্সা হলেও অনেক সময় গায়ের রং কালো হয়ে যায়। ধুলাবালি আর রোদে চলাফেরা করার কারণে।
মানুষ ফর্সা বা কালো বংশগতভাবে হয়ে থাকে। ফর্সা বা কালো এটা কারো হাতে থাকে না। মানুষ বংশগত কারণ ছাড়াও আরো অনেক কারণে কালো হয়ে থাকে। দৈনন্দিন জীবনের চলাফেরার কারণেও গায়ের রং ময়লা বা কালো হয়ে থাকে।
বিশেষ করে রোদ বৃষ্টিতে চলাফেরার কারণে গায়ের রং কালো হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেই শরীরের ত্বক ফর্সা করার উপায় সম্পর্কে।
ত্বক কি?
ত্বক হচ্ছে প্রাণী দেহের বাহিরের অংশ। যা প্রকৃতপক্ষে নরম ও মসৃণ। ত্বকের প্রধান কাজ হচ্ছে দেহকে আবৃত করে রাখা। ত্বক প্রাণীদের ভেতরের অংশকে সুরক্ষা রাখে। সকল ধরনের বাইরের আঘাত থেকে দেহকে রক্ষা করে। কোন ধরনের সমস্যা হলে প্রথমে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এছাড়াও ত্বক মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। যার ত্বক যত ফর্সা সেই মানুষ দেখতে ততো সুন্দর। অনেকে শ্যামলা তাদের জন্য মন খারাপ করে। এবং ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ দিয়ে থাকে।
ত্বক ফর্সা করার উপায়:
প্রতিটা মানুষের ইচ্ছা সে যেন দেখতে সুন্দর হয়। সকলেই সুন্দরের পূজারী। এ কারণে কোন মানুষ কালো থাকতে চায় না। কালো মানুষকে ফর্সা মানুষের তুলনায় অনেক খারাপ লাগে। সমাজে কালো মানুষের তুলনায় ফর্সা মানুষকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়।
কিন্তু কালো ত্বক এর পেছনে আমাদের কোন হাত থাকে না। তবুও মানুষ নিজ চেষ্টায় ফর্সা হতে চাই। শরীরের ত্বক ফর্সা করার জন্য শুধু বাহির থেকে যত্ন করলে হবে না। বাইরে থেকে যত্ন নিলে কিছুক্ষণের জন্য ফর্সা মনে হতে পারে কিন্তু এটা কোন স্থানের সমাধান না।
তবে ভেতর থেকে সুন্দর করতে হলে যেসব খাবার খেলে সুন্দর্য বৃদ্ধি হয় সেসব খাওয়ার খেতে হবে। এসব সাধারণ কিছু যত্নের মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। চলুন জেনে নেই কিভাবে ত্বক ফর্সা করা যায়।
- ত্বকের যত্ন।
- নিয়মিত শরীরচর্চা ।
- প্রচুর পানি পান করা।
ত্বকের যত্ন :
শরীরের ত্বক ফর্সা করার উপায় হচ্ছে ত্বকের যত্ন নেওয়া। ত্বকের যত্ন নেয়া বলতে বোঝানো হয় ত্বক পরিষ্কার রাখা। প্রতিদিন সকাল বিকাল ফেসওয়াশ সাবান ব্যবহার করলে ত্বক পরিষ্কার থাকে। ত্বক পরিষ্কার করার পর ভিন্ন ধরনের ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
ক্রিম ব্যবহার করার ফলে ত্বক ভিতর থেকে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এছাড়া কালো দাগ দূর হয়। রোদে গেলে সব সময় সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে রোদের হাত থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখে। এছাড়াও রাতে ঘুমানোর সময় নাইট ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
এইসব ক্রিম পুরো শরীরে ব্যবহার করা ভালো। কারণ, পুরো শরীর ব্যবহার করলে শরীরের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। কালো দাগ থাকলে দূর হয়ে যাবে। তাই ত্বকের উজ্জ্বলতা বা ফর্সা করতে ত্বকের যত্ন নিতে হবে।
নিয়মিত শরীরচর্চা:
নিয়মিত শরীর চর্চা করলে আমাদের শরীর ঠিক থাকে। শরীরে ঠিক রাখার পাশাপাশি ত্বকের রং পরিবর্তন করে। যেকোনো ধরনের শরীরচর্চা করলে সুফল পাওয়া যায়। এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
এর পাশাপাশি শরীরে নতুন নতুন হরমোন উৎপন্ন হয়। শরীরে যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে সৌন্দর্য বৃদ্ধির হরমোন দেহে তৈরি হয়। যার ফলে ত্বক ভিতর থেকে ফর্সা হয়।
শরীরচর্চার সময় কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ, রোদের মধ্যে শরীর চর্চা করলে রোদে তোকে সৌন্দর্য নষ্ট করে। এবং চামড়া পুড়ে কালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ব্যায়াম করার সময় সচেতন থাকতে হবে। যেন অতিরিক্ত রোদের তাপে চামড়া পুড়ে না যায়।
প্রচুর পানি পান করা:
ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে চাইলে আপনাকে সহজ একটি কাজ করতে হবে। কাজটি হল পশুর পরিমাণ পানি পান করা। প্রতিদিন কমপক্ষে তিন থেকে চার লিটার পানি পান করতে হবে। নিয়মিত পানি খাওয়ার ফলে ত্বক সুস্থ থাকে। ত্বক সুস্থ থাকলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও নিয়মিত পানি পান করলে ত্বকের ভিতর থেকে দূষিত পদার্থ বেরিয়ে আসে। এবং কোষগুলো সঠিকভাবে পানি সরবরাহ করতে পারে। যার ফলে ত্বক উজ্জ্বল ও ফর্সা হয়ে থাকে।
ত্বক ফর্সা করার ঘরোয়া উপায়: শরীরের ত্বক ফর্সা করার উপায়
সকল মানুষ সুন্দর হতে চাই। সুন্দর হতে প্রয়োজন ফর্সা উজ্জ্বল ত্বক। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন নিয়মিত যত্নের। কিন্তু কাজের ব্যস্ততার কারণে ত্বকের যত্ন নেওয়া হয় না। এছাড়াও টাকার কারণে ত্বকের যত্ন নেওয়া সম্ভব হয় না।
কারণ, উন্নত মানের ক্রিম ব্যবহার করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে ত্বক ফর্সা করার ঘরোয়া উপায় রয়েছে। নিম্নে ঘরোয়া গুলো তুলে ধরা হলো:
- টমেটো
- অ্যালোভেরা
- দুধ ও কলা
- লেবুর ও চিনি
- মধু ও দই
- কমলার খোসা
টমেটো:
টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ লাইকোপেন নামক পদার্থ। যা সকল ধরনের কালো দাগ দূর করে। এর পাশাপাশি কালো ত্বক ফর্সা করে। এবং শরীর থেকে মৃত কোষ অপসারণ করে। যার ফলে তোকে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
টমেটো ব্যবহার করার নিয়ম হচ্ছে। প্রথমে এক থেকে দুইটি টমেটো নিতে হবে। টমেটো ভালোভাবে ব্লেন্ডার করে নিতে হবে। তারপর টমেটোর রস ছেকে নিতে হবে। তারপর টমেটো রসের সাথে লেবুর রস মিশ্রিত করতে হবে।
তারপর টমেটো পুরো শরীর ভালো হবে লাগাতে হবে। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে ত্বক ফর্সা হবে।
অ্যালোভেরা:
এলোভেরা অনেক গুন। খাওয়ার পাশাপাশি ব্যবহার করা যায়। এলোভেরা ত্বকের উচ্চতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বক কমল রাখে। সকল ধরনের কসমেটিকে অ্যালোভেরার ব্যবহার রয়েছে। এলোভেরা ব্যবহার করার নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে একটি অ্যালোভেরার ডাটা দিতে হবে।
তারপর ভেতর থেকে এলোভেরা বের করে নিতে হবে। অ্যালোভেরা ভালো করে ব্লেন্ডার করে পেস্ট করে নিতে হবে। তারপর পুরো শরীরে লাগাতে হবে। লাগানোর কিছুক্ষণ পর ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। নিয়মিত অ্যালোভেরা ব্যবহার করার ফলে ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল হয়।
দুধ ও কলা:
অল্প সময়ের মধ্যে ত্বকের উত্তরাতে ভিত্তিতে সবচেয়ে ভালো কাজ করে দুধ ও কলা। কলা ও দুধ ব্যবহার করার নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে একটি পাকা কলা নিতে হবে। পাকা কলা ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করতে হবে। তার সাথে অল্প পরিমাণ দুধ ব্যবহার করতে হবে।
দুধ ও কলা ভালোভাবে মিশিয়ে তারপর ত্বকে ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত দুধ ও কলা ব্যবহার করার ফলে ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে এবং কালো দাগ দূর করে।
লেবু ও চিনি:
লেবুতে প্রচুর পরিমাণ সাইটিক এসিড রয়েছে। যা কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। লেবু ও চিনি ব্যবহার করলে শরীরের কালো দাগ দূর হয়। পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বক ফর্সা হয়। লেবু চিনি ব্যবহার করার নিয়ম হচ্ছে। প্রথমে লেবুর রস বের করে নিতে হবে।
তারপর লেবুর রসের সাথে এক চা চামচ পরিমাণ চিনি মিশাতে হবে। তারপর ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। পেস্ট পুরো শরীরের লাগাতে হবে। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক ফর্সা হবে।
মধু ও দই:
পরিমান মত দই নিতে হবে। তার সাথে পরিমাণ মতো মধু দিতে হবে। দুই ও মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর মধু ও দইয়ের মিশ্রণ ভালো হবে গায়ে লাগাতে হবে। মিশ্রণ লাগানোর 15 থেকে 20 মিনিট পর ভালো হবে পরিষ্কার করতে হবে।
নিয়মিত কিছুদিন ব্যবহার করলে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। কারণ, মধু ত্বকের কোষগুলো সতেজ করে তুলে। কিন্তু মিশ্রণটি তৈরির সময় অবশ্যই টক দই ব্যবহার করতে হবে।
কমলার খোসা:
কমলার খোসা ত্বকের জন্য খুব কার্যকরী। কমলার খোসায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে। ভিটামিন সি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। কমলার খোসা ব্যবহারের নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে কমলার খোসা ব্লেন্ডার করে নিতে হবে।
তারপর পেস্টের সাথে মধু মিশ্রিত করতে পারেন। মিশ্রণটি ভালোভাবে গায়ে লাগাতে হবে। নিয়মিত ব্যবহার করলে খুব তাড়াতাড়ি ফল পাবেন।
ত্বকের যত্নের খাদ্য তালিকা:
মানুষ সুন্দরের পূজারী। তাই সবাই চায় নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য। নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য প্রয়োজন সুন্দর চেহারা। সুন্দর চেহারা বলতে বোঝানো হয় দেখতে সুন্দর। মানুষ তখনই দেখতে সুন্দর হয় যখন তার গায়ের রং ফর্সা হয়।
ফর্সা ত্বকের জন্য প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার। পুষ্টিকর খাবার খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। চলুন জেনে নেই কি কি খাবার খেলে ত্বক ফর্সা হয়।
- দুধ
- মধু
- গাজর
- টমেটো
- টক দই
- আপেল
- গ্রিন টি
- ড্রাগ চকলেট
এসব খাবার খেলে খুব সহজে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়মিত এসব খাবার খেতে পারেন।
ত্বক ফর্সা করার ক্রিম:
বর্তমান সময়ে মানুষের হাতে সময় খুব কম। সবাই কম সময়ে বেশি সুযোগ সুবিধা চেয়ে থাকে। ঠিক একই ক্ষেত্রে শরীরের ত্বক ফর্সা করার জন্য সময় নাই। সবাই কম সময়ের মধ্যে ভালো ভালো ফল চায়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সবচেয়ে ভালো মাধ্যম ত্বক ফর্সা করার ক্রিম।
বর্তমানে সময়ে বাজারে অনেক ধরনের ক্রিম পাওয়া যাচ্ছে। চলুন জেনে নেই বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় কয়টি ক্রীমের নাম।
- লোটাস হারবার হোয়াইট গ্রো স্কিন হোয়াইটেনিং
- হিমালয়া হারবাল ফেয়ারনেস ক্রিম
- ফেয়ার এন্ড লাভলী মাল্টিভিটামিন ফেয়ারনেস ক্রিম
- রেভলান টাচ অ্যান্ড গ্লো এডভান্স ফেয়ারনেস ক্রিম
- OLAY WHITE RESIDENCE
- 03+ Whitining cream
- Balla Vita Papayablem Anti Blemish
- Lakme Absolute Parfect Rediense
শেষ কথা: শরীরের ত্বক ফর্সা করার উপায়
মানুষ জন্মগতভাবেই গায়ের রং পেয়ে থাকে। কিন্তু যত্ন করলে তা পরিবর্তন করা সম্ভব। কিভাবে শরীরের ত্বক ফর্সা করা যায় সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দেওয়া হয়েছে। এবং কি কি ক্রিম ব্যবহার করলে ত্বক ফর্সা করা যায় সে সম্পর্কেও উল্লেখ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়লে ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পাবেন।
ত্বকের যত্নের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। কারণ, ক্রিম ব্যবহার করার থেকে খাদ্যের মাধ্যমে তবে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করাই ভালো। কারণ, এটা স্থায়িত্ব হয়। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ