মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হাড়। হাড় দেহের কাঠামো। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে হাড় ভেঙ্গে যায়। যার ফলে অনেক সমস্যা হয়। তবে সঠিকভাবে চিকিৎসা করলে হাড় জোড়া লাগে। এই সময় খাবার দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়।
হাড় ভেঙ্গে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত সকলের জানা প্রয়োজন। কারণ অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হাড় ভেঙ্গে যায়। তাই সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। নিম্নে, হাড় ভেঙ্গে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
অস্থি কী?
অস্থি মেরুদন্ডী প্রাণীর কাঠামো। এটা একটি কঠিন যোজক কলা। অস্তি শব্দের অর্থ হাড়। হাড় ক্যালসিয়াম দিয়ে গঠিত। মানবদেহে অস্থি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কিছু অস্তি নরম এবং কিছু অস্থি অনেক শক্ত হয়ে থাকে।
হাড় কি দিয়ে তৈরি হয়?
ক্যালসিয়াম এবং বিশেষ হাড়ের কোষ দ্বারা শক্তিশালী যোজক কলা দিয়ে হাড় তৈরি। এর মূল উপাদান ক্যালসিয়াম। মানবদেহের সবচেয়ে বড় হাড় হচ্ছে ফিমার। ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খেলে হাড় মজবুত হয়।
অস্থির সংখ্যা কত?
বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানব দেহে অস্থির সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দেহে ২০৬ টি অস্থি থাকে।
মানব দেহের সবচেয়ে বড় হাড় কোনটি?
মানবদেহের সবচেয়ে বড় হাড় উরুর। এ হাড়ের নাম ফিমার। এটি মানব দেহের সবচেয়ে শক্তিশালী হাড়। মানবদেহের সবচেয়ে ছোট হাড় স্টেপিস।
হাড়ের গঠন ও কাজ কি?
মানবদেহের কঠিন একটি অঙ্গ হল হাড়। মেরুদন্ডী প্রানীর কঙ্কাল তৈরি হয় হাড়ের মাধ্যমে। হাড় দেহের অঙ্গকে সুরক্ষা দেয়। শরীরে খনিজ পদার্থ জমা রাখতে সাহায্য করে। শরীরের কাঠামো তৈরি করে। মেরুদন্ডযুক্ত প্রাণী হাড়ের সাহায্যে চলাফেরা করে থাকে।
হাড় বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে। প্রতিটি হাড় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেহে একটি হাড় না থাকলে আমরা সঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারবে না।
মানবদেহে হাড় পেশি ও জয়েন্টের গুরুত্ব:
মানব দেহের হাড়ের উপর যে মাংস থাকে সেটাই পেশি। আর আমাদের দেহের কাঠামো। আর পেশি এই কাঠামোর সুন্দর রূপ দেয়। এবং চলাফেরা করার জন্য সাহায্য করে থাকে। মানবদেহে হাড় পেশি ও জয়েন্টের গুরুত্ব অনেক।
হাড়ের জয়েন্টের কারণে আমরা চলাফেরা করতে পারি। যদি জয়েন্টের না থাকতো তাহলে আমরা হাত-পা ভাজ করতে পারতাম না। হাতটা ভাজ না করে আমরা চলাফেরা করতে পারবোনা। এই সমস্যা সমাধান করেছে হাড়ের জয়েন্ট। এ কারণে হাড়ের পেশি ও জয়েন্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
হাড় ফেটে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত?
হাড় আমাদের দেহের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। হাড় ছাড়া আমরা সঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারিনা না। তবে অনেক সময় খেলাধুলা করতে বা এক্সিডেন্ট করে আমাদের ঘাড় ভেঙ্গে যায়। হাড় ভেঙ্গে গেলে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খেতে হবে। হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত নিম্নে তুলে ধরা হলো।
- দুধ
- শিমের বিচি
- আঙ্গুর
- সারডিন মাছ
- স্যালমন মাছ
- শুটকি মাছ
- ডিম
- ছুপ
হাড় ভেঙ্গে গেলে কি কি ফল খাওয়া উচিত?
হাড় ভেঙ্গে গেলে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হয়। তাহলে খুব দ্রুত হাড় জোড়া লাগে। নিম্নে, হাড় ভেঙ্গে গেলে কি কি ফল খাওয়া উচিত? তুলে ধরা হলো।
- আঙ্গুর
- কমলালেবু
- পাতি লেবু
- বাদাম
- খেজুর
- ছোলা
- সয়াবিনের দানা
- মুসম্বি
হাড় জোড়া না লাগার কারণ:
হাড় ভেঙ্গে গেলে আমরা সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যাই। ডাক্তার আমাদের ভাঙ্গা অংশ ভালোভাবে ব্যান্ডেজ করে দেয়। হাড় সঠিকভাবে রাখার জন্য আসা, প্লাস্টার, প্লেট, রোড ব্যবহার করে থাকে। তবে অনেক সময় হাড় সঠিকভাবে প্লাস্টার করা হয় না।
হাড় ভিতরে এলোমেলো হয়ে থাকে। যার কারণে হাড়জোড়া লাগে না। ভিতরে ব্যথা হয়। এ কারণে হাড় জোড়া লাগানোর সময় অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। সঠিকভাবে হাড় জোড়া না লাগলে পরবর্তীতে নতুন করে হাড় জোড়া দিতে হয়। এসব কারণে হাড় জোড়া লাগে না।
হাড় ভাঙলে কি করনীয়?
হাড় ভেঙ্গে গেলে আমাদের সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তারপর এক্সরে করতে হবে। এক্সরে করার পর হাড়ের ভাঙ্গা অনুযায়ী প্লাস্টার করে নিতে হবে। এরপর এক থেকে দেড় মাস বিশ্রাম নিতে হবে। হাড় জোড়া লাগলে পুনরায় এক্সরে করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ শারীরিক ব্যায়াম এর উপকারিতা
কারণ অনেক সময় হাড় সঠিকভাবে জোড়া লাগে না। এর ফলে চলাফেরা করতে অনেক সমস্যা হয়। এছাড়াও হাড় ভেঙে গেলে ক্যালসিয়াম সংযুক্ত খাবার খেতে হবে। তাহলে খুব সহজে হাড় জোড়া লাগে এবং মজবুত হয়।
পায়ের হাড় ফেটে গেলে করণীয়:
পা আমাদের শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। পা ছাড়া আমরা চলাফেরা করতে পারি না। অনেক সময় দুর্ঘটনার কারণে পায়ের হাড় ফেটে যায়। পায়ের হাড় ফেটে গেলে করণীয় রয়েছে। পায়ের হাড় ফেটে গেলে সাথে সাথে পা করে রাখতে হবে।
কারণ পায়ের হাড় ফেটে গেলে ভিতরে হাড়ের কুটি থাকে। হাড়ের কুটি লেগে পায়ের পেশিতে ক্ষতি হয়। পা ফেটে গেলে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। তারপরে এক্সরে করতে হবে। তারপর ডাক্তারের কাছ থেকে প্লাস্টার করে নিতে হবে। কিছুদিন বিশ্রামে থাকতে হবে।
ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগতে কতদিন সময় লাগে?
ভিন্ন কারণে আমাদের শরীরের বিভিন্ন হাড় ভেঙ্গে যায়। তবে সঠিকভাবে চিকিৎসা করলে হাড় জোড়া লাগে। ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগতে সাধারণত ৪৫ থেকে ৬০ দিন সময় লাগে। অনেক সময় এরকম সময়ও লাগে। সঠিকভাবে হাড়ের জোড়া দিতে পারলে খুব তাড়াতাড়ি জোড়া লাগে।
তবে হাড় ভেঙ্গে গেলে বিশ্রামে থাকতে হবে। এবং ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেতে হবে। তাহলে তাড়াতাড়ি জোড়া লাগবে। কোন ধরনের ব্যাথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
হাড় ভাঙ্গার ঔষধ:
হাড় ভাঙ্গার পর অনেক ব্যাথা হয়। সেই সময় ওষুধ খেতে হয়। বিশেষ করে ব্যাথা নাশক ওষুধ খেতে হয়। প্যারাসিটামল, কোডাইন এবং অ-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs) এসব ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া উত্তম।
কিভাবে বুঝব হাড় জোড়া লাগছে?
হাড় ভেঙে গেলে প্লাস্টার করে রাখতে হয়। প্লাস্টার করার পর ডাক্তার বলে দেয় কতদিন পর হাড় জোড়া লাগবে। তারপর সেই সময়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। তারপর ডাক্তাররা এক্সরে করে বুঝতে পারে হাড় জোড়া লেগেছে নাকি। হাড় জোড়া না লাগলে আবার ডাক্তারের সময় দেয়।
শেষ কথা: হাড় ভেঙ্গে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত
হাড় মেরুদন্ডী প্রাণীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হাড় দেহের কঙ্কাল বা কাঠামো তৈরি করে। তার ওপর পেশি থাকে। এভাবে প্রাণীদেহের আকৃতি হয়। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে হাড় ভেঙ্গে যায়। যার ফলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।
হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত উপরে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেতে হয়। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ