পাসপোর্ট হল এক ধরনের ভ্রমণ নথি, এই নথি দেশের সরকার কর্তৃক জারি করা হয়। পাসপোর্ট সাহায্যে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ করা যায়। পাসপোর্টে ভ্রমণকারীর জাতীয়তা এবং পরিচয় থাকে। যার সাহায্যে খুব সহজেই মানুষ কোন দেশের শনাক্ত করা যায়।
পাসপোর্ট ছাড়া এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া অসম্ভব। পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে? আগের তুলনায় সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে বর্তমানে পাসপোর্ট করতে আগের তুলনায় বেশি খরচ হচ্ছে।
পাসপোর্ট এর অনেক পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্য অনুযায়ী পাসপোর্টের খরচ কম বেশি হয়ে যাবে। নিম্নে পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
পাসপোর্ট এর অর্থ কি?
পাসপোর্ট একটি পরিচয় পত্র। যার সাহায্যে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করা যায়। এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে পাসপোর্ট এর প্রয়োজন পড়ে। কারণ, পাসপোর্টে ব্যক্তির সকল ধরনের তথ্য তুলে ধরা থাকে। এছাড়াও তদন্তের মাধ্যমে ব্যক্তির চরিত্র বিশ্লেষণ করার পর পাসপোর্ট প্রদান করা হয়। পাসপোর্ট ছাড়া কোন দেশে যাওয়া অসম্ভব।
পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে?
বর্তমান সময় পাসপোর্ট করতে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কারণ বর্তমান সময়ে অনেক মানুষ বিদেশ যাচ্ছে। আর বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রয়োজন পাসপোর্ট। পাসপোর্ট করতে অনেক ধরনের কাগজপত্র লাগে। নিম্নে পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে? তুলে ধরা হলো:
- পাসপোর্ট আবেদন ফরম।
- মূল জাতীয় পরিচয় পত্র এবং ফটোকপি।
- পাসপোর্ট এপ্লিকেশন সামারি কপি।
- পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার চালান।
- জন্ম নিবন্ধন সনদ ইংরেজি ভার্সন। যাদের বয়স ১৮ বছরের কম।
- নাগরিকত্ব সনদ।
- যাদের পূর্বে পাসওয়ার্ড ছিল তাদের আগের পাসওয়ার্ডের ফটোকপি।
- পিতা ও মাতার এনআইডি কার্ডের ফটোকপি।
- এক কপি 3R সাইজ সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের ছবি। (ল্যাব প্রিন্ট)
- এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
- পিতা মাতার দুইটি করে পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
- মেডিকেল টেস্টের কাগজপত্র।
নতুন পাসপোর্ট বানাতে কি কি লাগে?
বর্তমানে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে পাসপোর্ট তৈরি করতে হচ্ছে। নতুন করে পাসওয়ার্ড বানাতে অনেক কাগজপত্রের প্রয়োজন পড়ে। উপরে নতুন পাসপোর্ট বানাতে কি কি কাগজ লাগে তুলে ধরা হয়েছে।
এসব ছাড়াও অন্য কাগজ লাগতে পারে। বিশেষ করে উপরের উল্লেখিত কাগজপত্র গুলো লাগে। কাগজপত্রের পাশাপাশি পুলিশ তদন্ত হয়ে থাকে।
ই পাসপোর্ট তৈরি করতে কি লাগে?
ই পাসপোর্ট শব্দের অর্থ ইলেকট্রনিক্স পাসওয়ার্ড। দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ ই পাসপোর্ট চালু হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় ই পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে। তবে সাধারণ পাসপোর্ট এর মতই ই পাসপোর্ট করতে কাগজপত্র লাগে।
উপরে পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে তুলে ধরা হয়েছে। উপরের উল্লেখিত কাগজপত্র ছাড়াও ই পাসপোর্ট করতে করতে প্রয়োজন পড়ে বর্তমান প্রেসার প্রমাণ পত্র। সরকারি চাকরিজীবী বলে কি পাসপোর্ট করতে প্রয়োজন GO অথবা NOC।
পাসপোর্ট করতে কত টাকা খরচ হয়?
পাসপোর্ট এর অনেক ধরণ রয়েছে। যেমন সময়ের কমবেশি, পাসপোর্ট এর পৃষ্ঠার কম বেশি রয়েছে। সেই হিসেবে পাসপোর্ট এর খরচ কম বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত পাঁচ বছর মেয়াদে ৬৪ পৃষ্ঠার সাধারণ পাসপোর্ট ১৫ দিনে পেতে হলে ৫৫০০ টাকা জমা দিতে হবে। যদি সাত দিনে পেতে চান তাহলে ফি জমা দিতে হবে ৭৫০০ টাকা।
পাসপোর্ট এর সময়ের উপর নির্ভর করে এর খরচ। এছাড়াও পাসপোর্ট তৈরির সময়ের উপরে খরচ কম বেশি হয়ে থাকে। যদি নিজে নিজে পাসপোর্ট করেন তাহলে খরচ কম হবে। আর যদি কোন দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরি করেন তাহলে খরচ বেশি হবে।
পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে?
২০২৩ সালে সকল কিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি পাসপোর্ট এর খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। নিম্নে পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে ২০২৩ তুলে ধরা হলো:
- ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট ফি ৪,০২৫ টাকা।
- ৫ বছরে জরুরী ফি ৬,৩২৫ টাকা।
- ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট ফি ৫,৭৫০ টাকা।
- ১০ বছরে জরুরী ফি ৮,০৫০ টাকা।
পাসপোর্ট এর পৃষ্ঠার উপর নির্ভর করে এর ফি কম বেশি হয়ে থাকে। এছাড়াও অনেক সময় পাসপোর্ট ফি কম বেশি হয়ে থাকে।
ই পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগবে?
বর্তমান সময়ে ই পাসপোর্ট সকলে করছে। কারণ এতে করে অনেক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। পৃষ্ঠার উপর ভিত্তি করে ই পাসপোর্ট এর ফি নির্ধারণ হয়ে থাকে। নিম্নে ই পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগবে তুলে ধরা হলো:
- ৪৮ পাতা ৫ বছরের জন্য ৪,০২৫ টাকা।
- ৪৮ পাতা ১০ বছরের জন্য ৫,৭৫০ টাকা।
- ৬৪ পাতা ৫ বছরের জন্য ৬,৩২৫ টাকা।
৫ বছর মেয়াদি ই পাসপোর্ট ফি?
৫ বছর মেয়াদি ই পাসপোর্ট করতে খরচ কম বেশি হয়ে থাকে। কারণ, পাসপোর্টের পৃষ্ঠা রয়েছে। পৃষ্ঠার উপর ভিত্তি করে ই পাসপোর্টের ফি কম বেশি হয়ে থাকে। ৪৮ পাতার পাঁচ বছর মেয়াদী ই পাসপোর্ট এর ফি ৪,০২৫ টাকা। এবং ৬৪ পতার ৫ বছর মেয়াদী ই পাসপোর্ট এর ফি ৬,৩২৫ টাকা।
10 বছর মেয়াদি পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে?
সাধারণত মানুষ ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট করে থাকে। ৪৮ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে অনেকে জানতে চাই। নিম্নে 10 বছর মেয়াদি পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে? উল্লেখ করা হলো:
- ১০ বছরের জন্য সাধারণ পাসপোর্ট ৫,৭৫০ টাকা।
- ১০ বছরের জন্য জরুরী পাসপোর্ট ৮,০৫০ টাকা।
- ১০ বছরের জন্য অতীব জরুরী পাসপোর্ট ০,৩৫০ টাকা।
বাংলাদেশে কোন ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়া যায়:
পাসপোর্ট খরচের ফি ব্যাংকের মাধ্যমে জমা করতে হয়। বর্তমানে নির্দিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা জমা করতে হয়। নিম্নে বাংলাদেশে কোন ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়া যায় তুলে ধরা হলো:
- Sonali Bank
- Agrani Bank
- Islami Bank
- Dutch Bangla Bank
- Bangladesh Commerce Bank
- First Security Islami Bank
পাসপোর্ট রেনু করতে কত টাকা লাগে?
পাসপোর্ট এর ডেট ফুরিয়ে গেলে নতুন করে রেনু করতে হয়। পাসপোর্টে রেনু করতে প্রায় পাসপোর্ট করার সমান খরচ হয়। বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে ২১ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট রেনু করতে খরচ হয় ৩,৪৫০ টাকা। জরুরিভাবে ৭ দিনের জন্য পাসপোর্ট রেনু করতে খরচ হয় ৬,৯০০ টাকা। তবে সময়ের ব্যবধানে খরচ কমবেশি হতে পারে ।
৪৮ এবং ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের মধ্যে পার্থক্য:
পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে পৃষ্ঠা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যে দেশে ভ্রমণ করা হয় সেই দেশের ভিসার সিল এবং এন্ট্রি সিল দেয়া হয়। যার কারনে একবার ভবনে একটি করে পৃষ্ঠা ফুরিয়ে যায়। যদি কোন ব্যক্তি ৫ বছরের মধ্যে ৪৮ বার বিদেশ যায় তাহলে তার পাসপোর্ট এর কার্যক্ষমতা ফুরিয়ে যায়। এ কারণে, পাসপোর্ট এর পৃষ্ঠা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
৪৮ এবং ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। নিম্নে পার্থক্য গুলো তুলে ধরা হলো:
- ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট দিয়ে শুধু ৪৮ বার বিদেশ যাওয়া যায়। এবং ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট দিয়ে ৬৪ বার বিদেশ যাওয়া যায়।
- ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট তৈরি করতে ৬৪ পৃষ্ঠা থেকে খরচ কম হয়।
- ৪৮ পৃষ্ঠার পাসওয়ার্ড এর থেকে ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট দিয়ে বেশি বার বিদেশ যাওয়া যায়।
- ঘন ঘন বিদেশ গেলে পাসপোর্ট এর পৃষ্ঠা ফুরিয়ে যায় এ কারণে ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট ভালো।
- যারা চিকিৎসা বা ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট করে তাদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট উত্তম।
পাসপোর্টে নাম পরিবর্তন:
পাসপোর্ট করার সময় অনেক ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। বিশেষ করে নামের ভুল হয়ে থাকে। যার কারণে পাসপোর্ট এর নাম পরিবর্তন করতে হয়। পাসপোর্ট নাম পরিবর্তন করার জন্য পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে হয়। পাসপোর্ট অফিসে কমপ্লেন করলে নাম সংশোধন করা যায়। তার জন্য নতুন করে টাকা জমা করতে হয়।
পাসপোর্টের জন্ম তারিখ সংশোধন করা যাবে কি?
পাসপোর্ট করার সময় বানান ভুলের পাশাপাশি জন্ম তারিখ ভুল হয়ে থাকে। যার কারণে পাসপোর্ট এর সাথে এনআইডি কার্ডের পার্থক্য থাকে। এই সমস্যাটি প্রায় অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়। তবে পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করলে জন্ম তারিখ সংশোধন করা যায়। তবে তার জন্য কিছু ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়। এবং ব্যাংকে জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য টাকা জমা করতে হয়।
পাসপোর্ট নবায়ন ফি কত টাকা?
পাসপোর্টের মেয়াদ থাকে। মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে নতুন করে নবায়ন বা রেনু করতে হয়। ২০২৩ সালে তথ্য অনুসারে পাঁচ বছরের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট রেনু ফি ৪,০২৫ টাকা। এবং পাঁচ বছরের জন্য ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট রেনু ফি ৬,৩২৫ টাকা। ১০ বছরের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার রেনু ফি ৫,৭৫০ টাকা। ১০ বছরের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার রেনুফি ৮,০৫০ টাকা।
স্টুডেন্ট পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
উন্নত লেখাপড়ার জন্য অনেক স্টুডেন্ট বিদেশ যাচ্ছে। স্টুডেন্ট বিদেশ যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট এর প্রয়োজন পড়ে। তবে পাসপোর্ট করতে অনেক ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হয়। স্টুডেন্ট পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে নিম্নে তুলে ধরা হলো:
- লাইনে ফরম পূরণের প্রিন্ট কপি।
- সত্যায়িত ছবি। জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের ফটোকপি।
- জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- নাগরিকত্ব সনদ।
- মা-বাবার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
- ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার রশিদ।
- পূর্বের প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমতি পত্র।
সাধারণত পাসপোর্ট করতে এইসব ডকুমেন্ট লাগে। তবে অনেক সময় এসব ছাড়াও কাগজপত্র জমা দিতে হয়। সাধারণত এসব কাগজ দিয়ে স্টুডেন্ট পাসপোর্ট তৈরি করা সম্ভব।
শেষ কথা: পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে
বিশ্বের যে কোন দেশে গেলে পাসপোর্ট এর প্রয়োজন পড়ে। আর পাসপোর্ট করার সময় টাকা লাগে। কারণ এই টাকাগুলো সরকারি খাদে জমা হয়। যার কারণে সকলকেই পাসপোর্ট করতে টাকা দিতে।বর্তমান সময়ে পাসপোর্ট করা অনেক সমস্যা হয়েছে। কারণ অনলাইনে মাধ্যমে আবেদন করা যাচ্ছে।
প্রতিটা মানুষেরই পাসপোর্ট ছাড়া প্রয়োজন। পাসপোর্ট থাকলে যেকোনো সময় দেশের বাইরে যাওয়া যায়। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ