হিট স্ট্রোক কী এবং কেন এটি বিপজ্জনক?
হিট স্ট্রোক হলো শরীরের তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে যাওয়ার একটি মারাত্মক অবস্থা, যা সাধারণত ১০৪°F (৪০°C) বা তার বেশি হলে ঘটে। এটি তাপমাত্রাজনিত সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থা, যা দ্রুত চিকিৎসা না করলে মৃত্যুও ঘটাতে পারে।
বিশেষজ্ঞ মত: “হিট স্ট্রোক হচ্ছে একটি মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি। একটু অবহেলাও মারাত্মক হতে পারে।” – ডা. আব্দুল মুকিত, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
হিট স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ
হিট স্ট্রোকের কিছু সাধারণ লক্ষণ নিম্নরূপ:
- অতিরিক্ত শরীর গরম হয়ে যাওয়া (১০৪°F বা তার বেশি)
- মাথা ঘোরা ও বমি ভাব
- ঘাম না হওয়া (বিশেষ করে গরমে)
- দ্রুত হৃদস্পন্দন ও শ্বাস প্রশ্বাস
- চেতনা হারানো বা খিঁচুনি
যদি এদের যেকোনো লক্ষণ দেখা যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
হিট স্ট্রোক হওয়ার প্রধান কারণসমূহ
বাংলাদেশে হিট স্ট্রোক সাধারণত নিচের কারণগুলো থেকে বেশি হয়ে থাকে:
- তীব্র রোদের মধ্যে কাজ করা বা হাঁটা
- অতিরিক্ত ঘাম ও শরীরের পানিশূন্যতা
- আঁটসাঁট ও ঘাম আটকায় এমন পোশাক পরা
- গরমের দিনে পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া
- দীর্ঘ সময় ধরে বাইরে থাকা, বিশেষ করে দুপুরে
হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়
এই গরমে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে নিচের উপায়গুলো মেনে চলুন:
১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
প্রতিদিন অন্তত ২.৫ থেকে ৩ লিটার পানি পান করুন। ডাবের পানি, লেবুর শরবত বা ওরস্যালাইন খাওয়া যেতে পারে।
২. সূর্যের আলো এড়িয়ে চলুন
সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রোদ বেশি থাকে। এই সময়ে সম্ভব হলে বাইরে বের হওয়া এড়িয়ে চলুন।
৩. সঠিক পোশাক পরুন
ঢিলা ও হালকা রঙের কাপড় পরুন। সুতি কাপড় হলে সবচেয়ে ভালো হয় কারণ এটি শরীর ঠান্ডা রাখে।
৪. শীতল স্থানে থাকুন
গরমে ঘরের জানালা-দরজা খোলা রাখুন, ফ্যান বা এসি ব্যবহার করুন। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করাও উপকারী।
৫. পুষ্টিকর খাবার খান
গরমে হালকা খাবার খাওয়া উচিত। তাজা ফলমূল, শাকসবজি ও পানিযুক্ত খাবার বেশি খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে।
৬. অতিরিক্ত শারীরিক কাজ এড়িয়ে চলুন
রোদে দৌড়ানো, খেলাধুলা বা ভারি কাজ গরমের সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে। সকালে বা বিকেলে এসব কাজ করাই ভালো।
হিট স্ট্রোক হলে তাৎক্ষণিক করণীয়
যদি কেউ হিট স্ট্রোক আক্রান্ত হয়, তাহলে নিচের ব্যবস্থা দ্রুত নিন:
- আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঠাণ্ডা স্থানে নিন
- শরীরের কাপড় ঢিলা করে দিন
- ঠাণ্ডা পানি দিয়ে শরীর মোছান বা গায়ে পানি ঢালুন
- ওরস্যালাইন খাওয়াতে চেষ্টা করুন (জ্ঞান থাকলে)
- দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান
বয়স্ক ও শিশুদের জন্য বিশেষ সতর্কতা
শিশু ও বয়স্কদের শরীর তাপমাত্রা সামলাতে পারে না। তাই:
- তাদের বেশি সময় রোদে রাখা যাবে না
- নিয়মিত পানি পান করাতে হবে
- ঠাণ্ডা ও আরামদায়ক পোশাক পরাতে হবে
বাংলাদেশে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি ও পরিসংখ্যান
বাংলাদেশে প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে তাপদাহে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিছু তথ্য নিচে দেওয়া হলো:
বছর | হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত | মৃত্যুর সংখ্যা |
---|---|---|
২০২৩ | ৩৫০+ | ২৭+ |
২০২২ | ২৯০+ | ১৯ |
২০২১ | ২৪০+ | ১৪ |
সূত্র: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ
চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নেওয়া উচিত?
নিম্নোক্ত অবস্থায় দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন:
- শরীরের তাপমাত্রা ১০৪°F বা তার বেশি হলে
- বারবার বমি হলে
- চেতনা হারালে বা খিঁচুনি শুরু হলে
- ৩০ মিনিট ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করেও উন্নতি না হলে
প্রতিরোধই হোক মূল উপায়: সারসংক্ষেপমূলক বার্তা
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য একটি বিপদ। শুধু একটু সচেতন হলেই এই গরমে আপনি ও আপনার পরিবার নিরাপদ থাকতে পারেন। পানি খেতে ভুলবেন না, সঠিক পোশাক পরুন, এবং নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল রাখুন।
0 মন্তব্যসমূহ