মাথা ব্যাথা হলে কি করা উচিত

মাথা ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা। বর্তমান সময়ে প্রতি ১০০ জন মানুষের মধ্যে প্রায় ৭০ জন মানুষ মাথা ব্যথায় ভোগেন জীবনে কোন না কোন সময়। বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথা হয়ে থাকে। 

মাথা ব্যাথা হলে কি করা উচিত

বিশেষ করে অতিরিক্ত চিন্তা কারণে মাথাব্যথার সমস্যাটি হয়ে থাকে। মাথা ব্যাথা হলে কি করা উচিত? এই সম্পর্কে জান আমাদের অত্যন্ত জরুরী। কারণ প্রায় প্রতিটি মানুষের মাথাব্যথা সমস্যা রয়েছে। 

তাই মাথা ব্যাথা দূর করার উপায় সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাহলেই খুব সহজেই মাথাব্যথা দূর করা যাবে। নিম্নে,মাথা ব্যাথা হলে কি করা উচিত বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

    মাথা যন্ত্রণা কেন হয়?

    মাথা ব্যাথা বর্তমান সময়ে প্রায় মানুষের নিত্য দিনের সঙ্গী। তবে মাথা ব্যাথা থেকে কোন রোগীর মৃত্যু হয় না। মাথা যন্ত্রণার কারণ হচ্ছে  অপর্যাপ্ত ঘুম, অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগ, অ্যালকোহল সেবন করা, মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকলে মাথা যন্ত্রণা হয়। সাধারণত এইসব কারণে মাথা যন্ত্রণা করে।

    মাথায় তীব্র ব্যথার কারণ কি?

    মাথা আমাদের দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কারণ মাথার কোনো সমস্যা হলে পুরো শরীর অকেজ হয়ে যায়। সম্পূর্ণ দেহ পরিচালনা করে থাকে মাথা। তবে বিভিন্ন কারণে মাথা তীব্র ব্যথা করে। সাধারণত ঘুম না হলে, অ্যালকোহল পান করলে, অতিরিক্ত চিন্তা করলে, না খেয়ে থাকলে মাথায় তীব্র ব্যথা করে।

    মাইগ্রেনের লক্ষণ কি? মাথা ব্যাথা হলে কি করা উচিত

    মাইগ্রেন শব্দটি মানুষের কাছে একটি আতঙ্ক। কারণ, মাইগ্রেন মাথা ব্যথার একটি ধরণ। মাইগ্রেনের আক্রান্ত হলে তীব্র ব্যাথা হয়। নিম্নে, মাইগ্রেনের লক্ষণ তুলে ধরা হলো:
    1. আবছা দেখা।
    2. ঘাড়সহ মাথা ব্যথা।
    3. বিষন্নতা।
    4. অনিয়মিত ঘুম।
    5. আলো ও শব্দ সহ্য করতে পারে না।

    মাইগ্রেন কতদিন থাকে?

    মাইগ্রেন একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। এই সমস্যাটি পুরুষের তুলনায় নারীদের তিনগুণ বেশি হয়ে থাকে। যখন কোন ব্যক্তির মাইগ্রেন হয় তখন মাথার এক পাশে মাঝারি মাথাব্যথা হয়। 


    এই মাথাব্যথা ৪-৭২ স্থায়ী হয়ে থাকে। মাইগ্রেন শুরু হলে বমি বমি ভাব, মাথা ঘুরা, আলো শব্দ সহ্য না করতে পারা ইত্যাদি সমস্যা হয়।

    ঘন ঘন মাথা ব্যথা কেন হয়?

    ঘন ঘন মাথা ব্যথা একটি সাধারন বিষয়। কারণ মানুষের সব সময় বিভিন্ন ধরনের অসুখ লেগেই থাকে। যার প্রভাবে মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। ঘন ঘন মাথা ব্যথা কেন হয়? নিম্ন তুলে ধরা হলো:
    1. অ্যালার্জি।
    2. মাইগ্রেন।
    3. ক্যাফেইন এর প্রভাব।
    4. রোদ বা অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া।
    5. ধূমপান ও মদ্যপান করা।
    6. অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম।
    7. ক্ষুধার্ত থাকা।
    8. অতিরিক্ত মানসিক।
    9. সর্দি লাগলে।
    10. জ্বর আসলে।
    11. ওষুধের পার্শ্ব প্রতিকার কারণে।
    12. অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন করলে।

    মাথা ব্যথা কত প্রকার?

    মাথাব্যথা সাধারনত দুই প্রকার। প্রাইমারি হেডেক ও সেকেন্ডারি হেডেক। প্রাইমারি হেডেক: টেনশন টাইপ হেডেক, ক্লাস্টার হেডেক, মাইগ্রেন ইত্যাদি। সেকেন্ডারি হেডেক:  মাসটয়ডাইটিস, গ্লুকোমার,  সাইনোসাইটিস, স্ট্রোক, মাথার আঘাতজনিত, মস্তিষ্কের টিউমার ইত্যাদি।

    মাথা ব্যথার কারণ কি কি?

    বর্তমান সময়ে মাথা ব্যাথা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। নিম্নে মাথা ব্যথার কারণ কি কি তুলে ধরা হলো:
    1. অ্যালার্জি।
    2. মাইগ্রেন।
    3. ক্যাফেইন এর প্রভাব।
    4. রোদ বা অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া।
    5. ধূমপান ও মদ্যপান করা।
    6. অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম।
    7. ক্ষুধার্ত থাকা।
    8. অতিরিক্ত মানসিক।
    9. সর্দি লাগলে।
    10. জ্বর আসলে।
    11. ওষুধের পার্শ্ব প্রতিকার কারণে।
    12. অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন করলে।
    উপরে যে সব তথ্য তুলে ধরা হলো এগুলোই মাথাব্যথার কারণ। এই কারণে এসব সমস্যা যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাহলে মাথাব্যথা দূর করা সম্ভব।

    মাথা ব্যাথা হলে কি করা উচিত:

    বর্তমান সময়ে সকল বয়সী মানুষের মাথা ব্যথার সমস্যা রয়েছে। মাথাব্যথা হলে কি করা উচিত আমরা অনেকেই জানিনা। মাথা ব্যথা হলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ জীবন করতে হবে। এছাড়াও ঘরোয়া ভাবে চিকিৎসা করে মাথাব্যথা দূর করা যায়।


    বিশেষ করে মাথা ব্যাথা হলে বিশ্রাম নিতে হবে। এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মলম পাওয়া যায়। যেগুলো ব্যবহার করলে খুব সহজে মাথা ব্যথা দূর হয়। মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে বিরত রাখতে হবে তাহলে মাথাব্যথা দূর করা সম্ভব।

    মাথার তালুতে ব্যথা হলে করণীয়:

    মানসিক চাপ বা উদ্বেগ থেকে মাথার তালুতে ব্যথা হয় বলে মনে করা হয়। ব্যথা হালকা থেকে মাঝারি অথবা তীব্র হয়ে থাকে। মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকলে সমস্যাটি বেশি হয়। এই সমস্যাটি দূর হয়ে যায় বিশ্রাম নিলে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমালে। অতিরিক্ত ব্যাথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারে না।

    মাথা ব্যাথা কমানোর উপায় কি?

    মাথা ব্যাথা কমানোর উপায় কি? অনেকে জানতে চাই। মাথা ব্যাথা কমানোর অনেক উপায় রয়েছে। নিম্নে মাথা ব্যাথা কমানোর উপায় গুলো তুলে ধরা হলো:
    1. ল্যাভেন্ডার বা পিপারমিন্টের তেল মাথায় ব্যবহার করা।
    2. চা - কফি পান করা।
    3. মাথায় মলম ব্যবহার করা।
    4. পানি পান করুন।
    5. আদা চিবুতে পারেন।
    6. মাথা ব্যথা কমানোর ওষুধ খেতে পারেন।

    মাথা ভার হয়ে থাকলে কি করা উচিত?

    মাথা ভার হয়ে থাকা রোগের লক্ষণ। বিশেষ করে বৃষ্টিতে ভিজলে বা অতিরিক্ত গরম লাগলে মাথা ভার হয়। মাথা ভার হওয়া জ্বর ও সর্দির লক্ষণ। মাথা ভার হয়ে থাকলে মাথায় তেল ব্যবহার করতে হবে। এবং অতিরিক্ত মাথা ভার হয়ে থাকলে প্যারাসিটামল খেতে হবে। তাহলে মাথা ভার দূর হয়ে যাবে।

    এছাড়াও গরম পানি, চা অথবা কফি খেতে পারেন। এসব খাবার খেলে খুব সহজেই মাথা ভার কমে যায়। এবং খুব সহজেই নিজেকে সুস্থ মনে হয়। অথবা আদা দিয়ে গরম পানি খেতে পারেন।

    মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায়:

    যাদের মাথার যন্ত্রণা হয় তারা খুব নিজেকে অসহায় মনে করে। কারণ মাথাব্যথা শুরু হলে খুব খারাপ লাগে। এবং কোন কাজে মন বসে না। সবসময় অস্বস্তি বোধ হয়। তবে মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় রয়েছে। নিম্নে উপায় গুলো তুলে ধরা হলো:

    আদা:

    আদা মাথার রক্তনালীর প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে। এতে করে মাথাব্যথা খুব সহজেই কমে যায়। এছাড়াও আদা ও লেবুর রস মিশিয়ে খান। মাথা ব্যাথা অতিরিক্ত থাকলে দিনে দুই থেকে তিনবার খেলেই ভাল হয়ে যাবে। আদা দিয়ে চা খেলে মাথা ব্যথা খুব সহজে দূর হয়ে যায়।

    পুদিনা পাতার রস:

    ম্যানথল ও ম্যানথন রয়েছে পুদিনা পাতায়। এই উপাদানগুলো মাথাব্যথা দূর করতে খুব কার্যকরী। পুদিনা পাতার পেস্ট করে মাথায় লাগান খুব সহজেই মাথাব্যথা ভালো হয়ে যাবে।

    বরফের প্যাক:

    বরফ প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এর জন্য বরফ মাথায় দিতে পারেন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় একটি গামছা বা তোয়ালের মধ্যে কয়েক টুকরো বরফ নিন। তারপর সেই কাপড় দিয়ে মাথায় কিছুক্ষণ সেত দিতে হবে। কিছুক্ষণ পর দেখবেন মাথা ব্যথা অনেক কমে গেছে।

    মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ:

    মাথা ব্যথা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। তবে অনেক সময় বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হিসেবে মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। যেমন সর্দি, কাশি বা জ্বর এর আগে মাথাব্যথা হয়। গর্ভবতী নারীদের মাথাব্যথা হয়। চোখের সমস্যা হলে মাথা ব্যথা হয়। অসাড়তা, চেতনা হ্রাসের , দুর্বলতা ইত্যাদি কারনে মাথা ব্যাথা হয়ে থাকে।


    সাধারণত এইসব রোগের কারণে মাথাব্যথা হয়ে থাকে। এছাড়াও ব্রেনের সমস্যা হলে মাথা ব্যথা হয়। অনেকক্ষণ শুয়ে থাকলে মাথা ব্যথা হতে পারে। তবে মাথা ব্যাথা বিভিন্ন রোগের লক্ষণের কারণে হয়ে থাকে।

    মাথা ব্যথা কমানোর দোয়া:

    মাথা ব্যাথার দোয়া কোরান ও হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। আলেম-ওলামা ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ধরনের আমল নির্ণয় করেছেন। বিভিন্ন রোগের জন্য বিভিন্ন ধরনের দোয়া রয়েছে। মাথা ব্যাথা হলে দোয়া পাঠ করলে মাথা ব্যথা দূর হয়ে যায়। নিম্নে, মাথা ব্যথা কমানোর দোয়া তুলে ধরা হলো:

    اللهم صل على سيدنا محمد وعلى اله وصحبه وسلم

    বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়িদিনা মুহাম্মাদিন, ওয়ালা আলিহি ওয়া সাহবিহি ওয়া সাল্লাম।

    এই সাতবার পড়ুন। তাহলে মাথা ব্যথা আল্লাহর রহমতে ভালো হয়ে যাবে।

    لَّا يُصَدَّعُونَ عَنْهَا وَلَا يُنزِفُونَ

    বাংলা উচ্চারণ:লা ইউসাদ্দাউনা আনহা ওয়া লা ইয়ুংযিফুন।’ (সুরা ওয়াকিয়া : আয়াত ১৯)

    ডান হাত দিয়ে মাথা ধরে দোয়াটি তিনবার পড়ুন তাহলে মাথাব্যথা আল্লাহর রহমতে ভালো হয়ে যাবে।

    গ্যাস থেকে মাথা ব্যথা কমানোর উপায়:

    বর্তমান সময়ের প্রতিটি মানুষের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে। কোন ধরনের ভাজাপোড়া বা বাসি খাবার খেলে গ্যাস হয় আর গ্যাসের কারণে মাথাব্যথা হয়ে থাকে। তবে গ্যাস থেকে মাথা ব্যথা কমানোর উপায় রয়েছে। গ্যাস কমানোর জন্য লেবুর রস হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে পান করুন।

    এতে করে গ্যাস ভালো হয়ে যাবে এবং মাথা ব্যথা কমে যাবে। এছাড়াও গ্যাস কমানোর জন্য গ্যাসের ট্যাবলেট খেতে পারেন। এতে করে খুব সহজেই গ্যাস ভালো হয়ে যাবে এবং মাথা ব্যাথা দূর হবে।

    তীব্র মাথা ব্যাথার ঔষধ:

    স্বাভাবিক মাথা ব্যাথা থাকলে আস্তে আস্তে ভালো হয়ে যায়। তবে অনেক সময় তীব্র মাথাব্যথা শুরু হয়। তখন আর ঘরোয়া হবে চিকিৎসা করে কোন ফল পাওয়া যায় না। আস্তে আস্তে ব্যথার তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই কারণে তীব্র মাথা ব্যথার ওষুধ সেবন করতে হয়। নিম্নে মাথা ব্যথার ওষুধের নাম তুলে ধরা হলো।

    মাথা ব্যথা কমানোর ১০টি ঔষধের নাম:

    মাথা ব্যথা হলে অবশ্যই ওষুধ খেতে হবে। ওষুধ না খেলে মাথা ব্যথা কমানো সম্ভব না। মাথা ব্যথা কমানোর ১০ টি ওষুধের নাম নিম্নে তুলে ধরা হলো:
    1. Arain 200 mg
    2. Anilic 200 mg
    3. Lograin 200 mg
    4. Migrex 200 mg
    5. Napa 500 mg
    6. Migratol 200 mg
    7. minopa 200 mg
    8. Mygan 200 mg
    9. tolfi 200 mg
    10. Namitol 200 mg

    শেষ কথা: মাথা ব্যাথা হলে কি করা উচিত

    বর্তমান সময়ে মাথাব্যথা একটি স্বাভাবিক বিষয়। কোন ধরনের শারীরিক সমস্যা হলে মাথা ব্যথা হয়। তবে মাথা ব্যথা হলে কোন চিন্তার বিষয় নেই। সঠিক চলাফেরা করলে মাথা ব্যথা ভালো হয়ে যায়। বিশেষ করে চিন্তা মুক্ত জীবন যাপন করতে হবে।

    মাথা ব্যাথা হলে কি করা উচিত উপরে আলোচনা করা হয়েছে। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ে থাকলে খুব সহজে মাথাব্যথা দূর করতে পারবে। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ