মধু ও তুলসী পাতার উপকারিতা

মধু ও তুলসী পাতার উপকারিতা অনেক। প্রায় সকল ধরনের ঘরোয়া চিকিৎস মধু ও তুলসীর ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে ঠান্ডা, সর্দি, কাশি এসবের জন্য মধু ও তুলসী অনেক উপকারী। প্রাচীনকাল থেকে মধু ও তুলসীর ব্যবহার হয়ে আসছে। 

মধু ও তুলসী পাতার উপকারিতা

কারণ, মধু ও তুলসী পাতার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। সর্দি কাশি হলে তুলসী পাতার রস খেলে সাথে সাথে ভালো হয়ে যায়। এছাড়াও মধুতে রয়েছে প্রায় সকল ধরনের ভিটামিনের উপাদান। যার কারণে মধু খেলে দ্রুত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 

এ কারণে মধু ও তুলসী পাতার বিভিন্ন রোগের ব্যবহার হয়ে আসছে। নিম্নে মধু ও তুলসী পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

    মধুর উপকারিতা:

    মধু একটা পুষ্টিকর খাবার। মধুতে প্রায় সকল ধরনের ভিটামিনের উপাদান রয়েছে। যার কারণে শরীরের সকল ধরনের সমস্যার সমাধান হয় মধু খেলে। বিশেষ করে শক্তি প্রদায়ী, হজমের সহায়তা, কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তশূন্যতা, যৌন দুর্বলতা, পাকস্থলী সুস্থতা, পানি শূন্যতা, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি, রূপচর্চা, অজানা সহায়তা, হাড়ো দাঁত শক্ত ইত্যাদি। 

    এসব সমস্যার সমাধান মধু খেলে হয়। এই কারণে মধুর উপকারিতা অনেক। মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সুস্থ রাখতে মধুর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই প্রতিদিন মধু হওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

    তুলসী পাতার উপকারিতা:

    তুলসী গাছ একটি ঔষধি গাছ। এই গাছের পাতা থেকে মূল পর্যন্ত উপকারিতায় পরিপূর্ণ। তুলসী পাতার অনেক উপকারীতা রয়েছে। তুলসী পাতা হার্টের রোগীদের জন্য অনেক ভালো। হাড়ের সমস্যা হয়  হাইপারটেনশন, উচ্চ রক্তচাপ এর কারণে। নিয়মিত তুলসী পাতা খেলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।


    এছাড়াও তুলসী পাতা রক্ত জমাট বাঁধা, হার্ট অ্যাটা, সর্দি, কাশি, জ্বর তুলসী পাতার রস খেলে ভালো হয়ে যায়। এছাড়াও রস ক্ষতস্থানে ব্যবহার করলে অনেক দ্রুত ক্ষতস্থান ভালো হয়ে যায়। এই থেকে বোঝা যায় তুলসী পাতার অনেক উপকারিতা রয়েছে।

    তুলসী পাতার ঔষধি গুন:

    তুলসী পাতার একটি ঔষধি গুন সম্পূর্ণ পাতা। তুলসী পাতা সেবন করে অনেক ধরনের রোগ নিরাময় করা সম্ভব। নিম্নে তুলসী পাতার ঔষধি গুনগুলো তুলে ধরা হলো:
    1. সকালে তুলসী পাতা খেলে মুখের রুচি বাড়ে।
    2. ঠান্ডা লেগে কাশি হলে মধু ও তুলসী পাতার রস খেলে ভালো হয়।
    3. তুলসী পাতার রস খেলে জ্বর ভালো হয়।
    4. তুলসী চা শরীর ও মানসিক অশান্তি দূর করে।
    5. তুলসী পাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করে পানি দিয়ে গড় গড়া করলে মুখের জীবাণু দূর হয়। এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
    6. মাথা ব্যথা কমাতে তুলসী পাতা অনেক উপকারী।
    7. নিয়মিত তুলসী পাতার রস খেলে কিডনির সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

    তুলসী গাছের বৈশিষ্ট্য:

    ঘন শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট গাছ তুলসি। তুলসী গাছের উচ্চতা দুই থেকে তিন ফিট হয়ে থাকে। এই গাছটি চিরহরিৎ গুল্ম। এই গাছের পাতার রং সবুজ। এবং পাতার দৈর্ঘ্য ২ থেকে ৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। গাছটির প্রতিটি কান্ডে ফুল ফোটে। ফুল ও ফল ঝাঁঝালো গন্ধ যুক্ত হয়ে থাকে। তুলসী গাছ প্রচুর পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে।

    তুলসী পাতার ব্যবহার:

    তুলসী পাতার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এই গাছটি প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে বিভিন্ন রোগের জন্য বিভিন্নভাবে তুলসী পাতা ব্যবহার করতে হয়। নিম্নে তুলসী পাতার ব্যবহারের নিয়ম তুলে ধরা হলো:
    1. তুলসী পাতা বেটে রস খেতে পারেন।
    2. তুলসী পাতার রস ও মধু খেতে পারেন এতে অনেক উপকার হয়।
    3. আদা ও তুলসী পাতার রস খেতে পারেন।
    4. কুসুম গরম পানিতে তুলসী পাতা ফুটিয়ে পানি খেতে পারেন।, নিম পাতা
    5. তুলসী পাতা, নিম পাতা একত্রে ব্রিটেনিয়া মুখে ব্যবহার করতে পারেন।
    6. চায়ের সাথে তুলসী পাতার রস খাওয়া যায়। এতে অনেক উপকার হয়।
    7. এছাড়াও তুলসী পাতা শুকিয়ে গুড়া করে চা অথবা গরম পানির সাথে খাওয়া যায়।
    8. হাত পায়ের কালো দাগ দূর করতে মধু ও তুলসী পাতা ব্যবহার করতে পারেন।

    তুলসী গাছের শিকড়ের উপকারিতা:

    প্রতিটি হিন্দু বাড়িতে তুলসী গাছ দেখা যায়। হিন্দুদের কাছে তুলসী গাছ অনেক মর্যাদাপূর্ণ। তারা তুলসী গাছের গোড়া অনেক সুন্দর করে বাঁধিয়ে রাখে। হিন্দুরা এটাকে তুলসী মন্দির নামে ডাকে। তবে তুলসী গাছের শিকড়ের অনেক উপকারিতা রয়েছে। তুলসী গাছ ঔষধি গুন সম্পন্ন। 

    এই কারণে তুলসী গাছের পাতা ও শিকড় খেলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়। তুলসী গাছের গাছের শিকড় বা মূল বেটে খেলে শারীরিক অনেক সমস্যা দূর হয়। বিশেষ করে হাড়ের সমস্যার জন্য তুলসী গাছের শিকড় অনেক উপকারী। এছাড়াও জ্বর সর্দি ভালো কাজ করে

    কালো তুলসী পাতার উপকারিতা:

    বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ প্রজাতির তুলসী পাওয়া যায়। যথা: কালো তুলসী, বন তুলসী, রাম তুলসী, বাবুই তুলসী ও শ্বেত তুলসী। এসব তুলসীর মধ্যে অন্যতম হলো কালো তুলসী। যার অপর নাম কৃষ্ণ তুলসী। সকল তুলসীর তুলনায় কালো তুলসীর উপকারিতা অনেক বেশি।


    কালো তুলসী পেট ব্যথা, অম্বল, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস এসব সমস্যার জন্য অনেক ভালো। কালো তুলসীর পাতা বা মূলের রস খেলে এসব সমস্যা খুব সহজে ভালো হয়।

    তুলসী পাতার চা এর উপকারিতা:

    চা খেতে সকলে পছন্দ করে। অনেকে বিভিন্ন ধরনের ভেষজ চা খেতে পছন্দ করেন। ভেষজ চা এর মধ্যে অনেক উপকারী তুলসী পাতার চা। মৌসুম পরিবর্তনের সময় মানুষের ঠান্ডা, জ্বর, কাশি হয়। নিয়মিত তুলসী পাতার চা খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

    এছাড়াও নিয়মিত তুলসী পাতার চা খেলে শ্বাসকষ্টর সমস্যার সমাধান হয়। মানসিক চাপ কমে যায়। মুখে দুর্গন্ধ থাকলে দূর হয়। তুলসী পাতার চা খেলে কটিসল হরমোনের মাত্রা কমায়। এছাড়াও আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে তুলসী পাতা চায়ের।

    মধু ও তুলসী পাতার উপকারিতা:

    মধু ও তুলসী পাতা দুটি উপাদানে অনেক উপকারী। মধু খেলে অনেক ধরনের সমস্যার সমাধান হয়। ঠিক একইভাবে তুলসী পাতা খেলেও অনেক ধরনের সমস্যা দেখে মুক্তি পাওয়া যায়। মধু ও তুলসী পাতা  একত্রে খেলে অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিম্নে মধু ও তুলসী পাতার উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
    1. ঠান্ডা দূর করতে সাহায্য করে।
    2. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
    3. এলার্জি দূর করে।
    4. শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করে।
    5. হার্ট সুস্থ রাখে।
    6. মানসিক চাপ দূর করে।
    7. বয়স ধরে রাখে।

    তুলসী পাতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম:

    তুলসী পাতা ও মধু অনেক উপকারী। তবে তুলসী পাতা ও মধু খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। প্রথমে তুলসী পাতা ভালোভাবে বেটে নিতে হবে। তারপর তুলসী পাতা পরিষ্কার কাপড় অথবা ছাকনা দিয়ে ছেকে নিতে হবে। 

    এরপর তুলসী পাতার রসের সাথে তার সমপরিমাণ মধু মিশাতে হবে। তারপর ভালোভাবে মিশিয়ে  নিতে হবে। প্রতিদিন সকাল করে তুলসী ও মধু খেতে পারেন। এভাবে খেলে অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

    শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম:

    বেশির ভাগ শিশুদেরই সর্দি কাশি লেগেই থাকে। যার কারণে শিশুদের ওষুধ খাওয়াতে হয়। কিন্তু ওষুধ খাওয়ানোর ফলে বাচ্চাদের সমস্যা সমাধান হয়। কিন্তু বাচ্চাদের স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যায়। এসব সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়াতে পারেন। 

    বাচ্চাদের তুলসী পাতা খাওয়ানোর কিছু নিয়ম রয়েছে। প্রথমে ভালোভাবে তুলসী পাতা ধুয়ে নিতে হবে। তারপর ভালোভাবে পেটে রস বের করতে হবে। এই রস বাচ্চাদের খাওয়াতে হবে। যদি শুধু তুলসী বাধার রস না খাই তাহলে সাথে পারেন। এভাবে বাচ্চাদের খাওয়ালে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

    তুলসী পাতার রস খাওয়ার নিয়ম:

    তুলসী পাতায় প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক থাকে। যার কারণে সর্দি, কাশি, জ্বর খুব সহজে ভালো হয়ে যায়। তবে তুলসী পাতার রস খাওয়ার নিয়ম রয়েছে। কচি তুলসী পাতা তুলে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। 

    তারপর বেটে রস বের করতে হবে। তারপর রস খেতে হবে। যদি রস খেতে সমস্যা হয় মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও চায়ের সাথে তুলসী পাতা রস খেতে পারেন। এভাবে খেলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।

    কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম:

    কাশির জন্য তুলসী পাতা মহা ঔষধ। কারণ কাশি হলে তুলসী পাতার রস খেলে সাথে সাথে ভালো হয়ে যায়। বর্তমান সময়ে খুব তাড়াতাড়ি অভাব পরিবর্তন হচ্ছে। যার কারণে মানুষের সর্দি কাশি লেগেই রয়েছে। তবে খাসির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম রয়েছে।

    যদি সর্দি লেগে কাশি হয় তাহলে তুলসী পাতার সাথে মধু মিশ্রিত করে খেতে হবে। এছাড়াও তুলসী পাতার দিয়ে পানি গরম করে পানি খেতে পারেন। এছাড়াও চায়ের সাথে তুলসী পাতা দিয়ে খেতে পারেন। এতে করে কাশি খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।

    রাম তুলসী পাতার উপকারিতা:

    তুলসী গাছ পাঁচ প্রকার। এর মধ্যে একটি হল রাম তুলসী। রাম তুলসী অনেক ঔষধি গুণসম্পন্ন একটি গাছ। রাম তুলসী অনেক ধরনের সমস্যার সমাধান করে। মস্তিষ্কের সমস্যা, যকৃত এর সমস্যা, ঘর্ম উদ্রেককারী ও প্লীহা রোগের ভালো হয় রাম তুলসী খেলে। এছাড়াও সাধারন সমস্যা যেমন সর্দি কাশি এসব ভালো হয় রাম তুলসীর পাতার রস খেলে।

    খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা:

    প্রাচীনকাল থেকে মানুষ বিভিন্ন সমস্যার জন্য তুলসী পাতা খাচ্ছে। কারণ তুলসী পাতায় অনেক উপকারী উপাদান রয়েছে। যা খুব সহজে বিভিন্ন ধরনের রোগ ভালো করে। খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে পাকস্থলীর অনেক উপকার হয়।

    খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে গ্যাস, অ্যাসিডিটি ভালো হয়ে যায়। এছাড়াও হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। নিয়মিত খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যায়। এবং শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

    তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা:

    সকল কিছুরই উপকারী পাশাপাশি অপকারিতা হয়েছে। ঠিক একই ভাবে তুলসী পাতার যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক একই ভাবে অপকারিতা রয়েছে। তবে উপকারিতার পরিমাণ অনেক বেশি। 

    তুলসী পাতার উপকারিতা নেয়। তবে খাওয়ার সমস্যার কারণে অপকারিতা হয়ে থাকে। মাত্রা অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেলে অথবা ভুল সময় খেলে অপকারিতা হওয়া সম্ভাবনা থাকে।

    তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক:

    তুলসী পাতার অনেক ভালো দিক রয়েছে। তবে এর কোন খারাপ দিক নেই। খারাপ দিকগুলো আমাদের কারণে হয়ে থাকে। তুলসী পাতা খেতে হয়। যদি আমরা ভরা পেটে খায় তাহলে ক্ষতি হতে পারে। 

    এছাড়াও কিছুক্ষণ পর পর তুলসী পাতা খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও ভালোভাবে পরিষ্কার না করে খেলে ক্ষতি হতে পারে। তবে তুলসী পাতার মধ্যে কোন ক্ষতিকার উপাদান নেই।

    শেষ কথা: মধু ও তুলসী পাতার উপকারিতা

    তুলসী গাছের সাথে আমাদের সকলের পরিচিত রয়েছে। তুলসী গাছ একটি ঔষধি গুন সম্পূর্ণ কাজ। এই গাছের মূল থেকে পাতা পর্যন্ত সকল কিছুই ঔষধি গুন সম্পন্ন। সর্দি কাশি এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ভালো হয়ে থাকে তুলসী পাতা খেলে। এই কারণে নিয়মিত তুলসী পাতা খেতে পারেন।

    তুলসী গাছ অনেক উপকারী। কারণ এই গাছের ঔষধি গুন এর পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করে। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ