আমরা জানি দিন দিন চাকরি পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই সময়ে উদ্যোক্তা হওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। এই সময় সঠিক পরিকল্পনা থাকলে খুব সহজেই সফল উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব। তবে উদ্যোক্ত হওয়ার জন্য সঠিক প্লান ও অর্থের প্রয়োজন।
ব্যবসায় উদ্যোক্তা কি?
ব্যবসায় উদ্যোক্তা বলতে কোন ধারণা থেকে অর্থনৈতিক মূল্য সৃষ্টি বা মূল্য রোজগার করার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। সাধারণভাবে বলতে নতুন কোন পণ্য বা সেবাদ তৈরি করে তারপর বাজারজাত করে অর্থ উপার্জন করাই হলো ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা।
নতুন কোন কিছু শুরু করতে অনেক ঝুঁকি থাকে। সেই ঝুঁকি কাটিয়ে ওঠে সফলভাবে অর্থ উপার্জন করা একজন ব্যবসায়ী উদ্যোক্তার মূল লক্ষ্য। তবে অনেক সময় ব্যর্থতাও আসতে পারে।
উদ্যোক্তা ও এর গুরুত্ব:
একটি ধারণাকে সম্পূর্ণভাবে সফল করা প্রক্রিয়া হল উদ্যোক্তার লক্ষ্য। বর্তমান সময়ে অনেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কারণ বর্তমানে চাকরি পাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ব্যবসা করতে শুধু পরিশ্রম এবং অর্থের প্রয়োজন। উদ্যোক্তা হলে দেশের অনেক উন্নয়ন ঘটে।
আরও পড়ুনঃ নতুন ব্যবসার আইডিয়া বা হালাল ব্যবসার আইডিয়া
কারণ একজন উদ্যোক্তার আন্ডারে অনেকজন কাজ করে। যার ফলে সেসব লোকের কর্মসংস্থান হয়। এর পাশাপাশি অনেক ধরনের নতুন নতুন পণ্য ও সেবা উৎপন্ন হচ্ছে। যার ফলে দেশ উন্নতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই কারণে উদ্যোক্তা ও এর গুরুত্ব অনেক।
ব্যবসা করতে কি টাকা লাগে?
অনেকে জানতে চাই ব্যবসা করতে কি টাকা লাগে। অবশ্যই ব্যবসা করতে টাকা লাগে। কারণ টাকা ছাড়া কোন কিছুই করা সম্ভব না। তবে সঠিক পরিকল্পনা থাকলে টাকা সংগ্রহ করা যায়। বর্তমান সময়ে অনেক ব্যাংক ও ইনজিও রয়েছে যারা টাকা প্রদান করে থাকে।
কিন্তু তার জন্য কিছু ডকুমেন্টস জমা দিতে হয়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ব্যবসা শুরু করতে কিছু টাকার প্রয়োজন পড়ে। কিছু কিছু ব্যবসা রয়েছে যেগুলো শুরু করতে কম পরিমাণ টাকাতে হয়। কারণ পণ্য কেনাবেচার করার মাধ্যমে টাকা আদান-প্রদান হতে থাকে।
লাভের অংশ যেটা সেটা ব্যবসায়িক বা উদ্যোক্তা পেয়ে থাকে। তবে বড় ধরনের কোন ব্যবসা শুরু করতে হলে অবশ্যই টাকার প্রয়োজন। কারণ একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করলে তার লাইসেন্সের প্রয়োজন। আর লাইসেন্স করতেও কিছু টাকার প্রয়োজন পড়ে।
ব্যবসা শুরু করা কি বুদ্ধিমানের কাজ:
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যবসা শুরু করা বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ সরকারি চাকরি পাওয়া অনেক কঠিন কাজ। কিছু কিছু কোম্পানি রয়েছে যারা অনেক সময় কর্মচারী কমিয়ে দেয়। যার ফলে অনেকেই চাকরি হারায়। এসব সমস্যা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হলে অবশ্যই ব্যবসা শুরু করা বুদ্ধিমানের কাজ।
কিভাবে অল্প পুঁজিতে ব্যবসা করা যায়?
বর্তমান সময়ে অনেক ব্যবসা রয়েছে যেগুলো অল্প পুঁজিতে শুরু করা যায়। তবে অল্প পুঁজির ব্যবসার লাভ অল্প হয়ে থাকে। অনেকে জানতে চাই কিভাবে অল্পতে ব্যবসা করা যায়। অল্প কিছু ব্যবসা করার জন্য সর্বপ্রথম ব্যবধান নির্ধারণ করতে হবে। তারপর ব্যবসা শুরু করতে হবে।
অল্প পুঁতে ব্যবসা করতে হলে সবচেয়ে ভালো ব্যবসা হচ্ছে ক্রয় বিক্রয়ের ব্যবসা। প্রথম অবস্থায় কিছু পরিমাণ টাকা দিয়ে পণ্য কিনে তারপর বিক্রয় করার পর সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করা। এইসব ব্যবসা সবচেয়ে ভালো হয় গ্রাম অঞ্চলে। এসব ব্যবসা করতে তেমন প্রয়োজন পড়ে না।
আরও পড়ুনঃ শেয়ার বাজার কি? নতুনদের জন্য শেয়ার বাজার
এছাড়াও অল্প পুজিতে ব্যবসা শুরু করে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা সম্পূর্ণভাবে শুরু করা। তারপর ব্যাংকের টাকা আস্তে আস্তে পরিশুধ করে দেওয়া। এইভাবে অল্প পুজিতে ব্যবসা শুরু করা যায়।
উদ্যোক্তা হওয়ার সুবিধা ও অসুবিধা:
বর্তমানে উদ্যোক্তা হয়ে টিকে থাকা অনেক চ্যালেঞ্জের বিষয়। কারণ উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজন। পরিকল্পনা এবং পরিশ্রম যদি ভুল হয় তাহলে উদ্যোক্তা হয়ে কোন কিছু করা সম্ভব না। এ কারণে উদ্যোক্তা হওয়ার সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই রয়েছে।
উদ্যোক্তা হওয়ার সুবিধা নিম্নে তুলে ধরা হলো:
- কর্মজীবনে স্বাধীনতা পাওয়া যায়।
- খুব কম সময়ের মধ্যে অনেক টাকা আয় করা যায়।
- ইচ্ছা মতো ইনভেস্ট করা যায়।
- বেকারত্বের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- নিজের ইচ্ছাকে মূল্যায়ন করে কাজ করা যায়।
- প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ভূমিকা রাখতে পারা যায়।
- ব্যর্থতার ঝুঁকি থাকে।
- অনেক দায়িত্ব নিজেকে সামলাতে হয়।
- মুনাফা কম বেশি হয়ে থাকে।
- উদ্যোক্তা হওয়ার প্রথম অবস্থায় অনেক অর্থনীতি সংকটে পড়তে হয়।
- বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপ সহ্য করতে হয়।
ক্ষুদ্র ব্যবসা ও উদ্যোক্তার মধ্যে পার্থক্য কি?
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তার মধ্যে পার্থক্য অনেক। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হলো কোন পণ্য কেনাবেচা করা। সাধারণভাবে বলতে গেলে বাজার থেকে কোন কিছু কম দামে কিনে আনার পর একটু বেশি দামে বিক্রয় করাই হলো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর বড় ধরনের কোনো ক্ষতি সম্ভাবনা থাকে না।
আর উদ্যোক্তা হলো নিজে থেকে কোন কিছু তৈরি করে, বাজারজাত করে অর্থ উপার্জন করা। এখানে অনেক ঝুঁকি থাকে। কারণ একজন উদ্যোক্তা সম্পন্ন হবে সফল না হতে পারে। কিন্তু ছোট ব্যবসায়ীদের কোন ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকি থাকে না।
উৎপাদনমুখী ব্যবসার আইডিয়া:
বর্তমান সময়ে অনেক ধরনের উৎপাদনমুখী ব্যবসার আইডিয়া রয়েছে। যেগুলো খুব সহজেই করা সম্ভব। এসব উৎপাদন মুখী ব্যবসা করতে তেমন অর্থের প্রয়োজন পড়ে না। নিম্নে কিছু উৎপাদন মুখী ব্যবসার আইডিয়া তুলে ধরা হলো:
- কাগজের ব্যাগ তৈরির ব্যবসা।
- ঘরে বসে বিস্কুট তৈরির ব্যবসা।
- জৈব সার তৈরির ব্যবসা।
- কাঠের আসবার পত্র তৈরির ব্যবসা।
- নুডুলস তৈরির ব্যবসা।
- হলুদ, মরিচের পাউডার তৈরির ব্যবসা।
- আটা তৈরির ব্যবসা।
- টিস্যু ব্যাগ তৈরির ব্যবসা।
- মধু উৎপাদনে ব্যবসা।
- চানাচুর ও নিমকি তৈরির ব্যবসা।
- পনির, মাখন ও ঘি তৈরি ব্যবসা।
স্মার্ট ব্যবসা আইডিয়া:
বর্তমানে স্মার্ট ভাবেও অনেক ব্যবসা করা যায়। সেগুলো ব্যবসা করতে তেমন পরিশ্রমের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু অর্থের প্রয়োজন পড়ে। নিম্নে, স্মার্ট ব্যবসা আইডিয়া তুলে ধরা হলো:
- কফি শপের ব্যবসা।
- ফার্নিচারের ব্যবসা।
- ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরিজম ব্যবসা।
- ইলেকট্রনিক্স দোকান।
- ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা।
- পার্লার ব্যবসা।
- কসমেটিক শপ।
নতুন ব্যবসার আইডিয়া:
যত দিন যাচ্ছে ব্যবসার সুবিধা তত বাড়ছে। কারণ দিন দিন যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক অগ্রগতি হচ্ছে। এছাড়াও ইন্টারনেট সেবার কারণে খুব সহজেই ব্যবহার প্রচারণা করা যাচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনা থাকলে খুব সহজে নতুন ব্যবসা শুরু করে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব।
তবে ব্যবসা শুরু করার আগে সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজন। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া কোন ভাবে ব্যবসা করে উন্নতি করা সম্ভব না। নিম্নে নতুন ব্যবসার আইডিয়া তুলে ধরা হলো:
- ফ্যাশন হাউজের ব্যবসা।
- কসমেটিক্স দোকানের ব্যবসা।
- পণ্য কেনাবেচার ব্যবসা।
- খেলা ঘরের দোকান।
- গিফট শপ।
- ফুচকা ও চটপটি ব্যবসা।
- কোচিং ব্যবসা।
- বিভিন্ন মিডিয়া এজেন্সির ব্যবসা।
বিদেশি ব্যবসার আইডিয়া:
বর্তমান সময়ে কিছু পণ্য রয়েছে যেগুলো বিদেশ আমদানি এবং রপ্তানি করে অনেক অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। বিদেশি ব্যবসা করে খুব কম সময়ের মধ্যে অনেক অর্থ উপার্জন করা যায়। তবে এই ব্যবসায় অনেক ঝুঁকি থাকে। তবে বিদেশী ব্যবসা গুলো করতে অনেক অভিজ্ঞতার প্রয়োজন।
তবে বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের সুবিধা খুব সহজে বিদেশী ক্লায়েন্টের সাথে ব্যবসা করা সম্ভব। নিম্নে, বিদেশী ব্যবসার আইডিয়া গুলো তুলে ধরা হলো:
- ফার্মাসিটিক্যাল প্রোডাক্ট এক্সপোর্ট ব্যবসা।
- বিভিন্ন শাকসবজি এক্সপোর্ট এর ব্যবসা।
- ইলেকট্রনিক পণ্য ইমপোর্ট এর ব্যবসা।
- মাছ এক্সপোর্ট এর ব্যবসা।
- সামুদ্রিক মাছ ইমপোর্ট এর ব্যবসা।
- কসমেটিক পণ্য ইমপোর্ট এর ব্যবসা।
- ইলিশ মাছ রপ্তানির ব্যবসা।
- বিভিন্ন ধরনের ফল আমদানির ব্যবসা।
পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া:
অর্থ থাকলে খুব সহজেই ব্যবসা করা যায়। কম পরিশ্রমে সবথেকে ভালো ব্যবসা হচ্ছে পাইকারি ব্যবসা। নিম্নে, পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া গুলো তুলে ধরা হলো:
- চা-পাতার পাইকারি ব্যবসা।
- স্টেশনারি পণ্যের পাইকারি ব্যবসা।
- টি-শার্টের পাইকারি ব্যবসা।
- কেক, বিস্কুট ও পাউরুটির পাইকারি ব্যবসা।
- কাঁচামালের ব্যবসা।
শেষ কথা: উৎপাদনমুখী ব্যবসার আইডিয়া, স্মার্ট ব্যবসা আইডিয়া
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে ভালো এবং নিরাপদ কর্মসংস্থান হচ্ছে উদ্যোক্ত হওয়া। কারণ, সঠিক পরিকল্পনা থাকলে খুব সহজে নিজে নিজে ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ