সাধারণ জ্ঞান এমন একটি বিষয় যা আমাদের চারপাশের পৃথিবী সম্পর্কে সচেতন করে তোলে এবং নানা ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য অর্জনের জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশের ভূগোল, ইতিহাস, অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
এই গাইডটি বাংলাদেশের সাধারণ জ্ঞানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যা আপনাকে বিসিএস, ব্যাংক, এবং অন্যান্য সরকারি চাকরির পরীক্ষায় সহায়ক হবে।
বাংলাদেশের ভূগোল ও পরিবেশ
বাংলাদেশের অবস্থান ও সীমারেখা
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি ক্ষুদ্র দেশ, যার সীমানা উত্তরে এবং পশ্চিমে ভারত, দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমার এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত। এর ভৌগোলিক অবস্থান ২০°৩৪' থেকে ২৬°৩৮' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°০১' থেকে ৯২°৪১' পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। দেশের মোট আয়তন ১৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার।
প্রধান নদীসমূহ
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, যেখানে প্রায় ৭০০টিরও বেশি নদী রয়েছে। প্রধান নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র এবং তিস্তা। পদ্মা নদী দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী, যা দেশের অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
জলবায়ু ও ঋতু
বাংলাদেশে প্রধানত তিনটি ঋতু রয়েছে—গ্রীষ্ম, বর্ষা এবং শীত। বর্ষা ঋতুতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, যা দেশের কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে বর্ষাকালে বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ও দেশটির অর্থনীতি এবং জীবিকা নির্বাহে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।
বাংলাদেশের প্রাচীন ও সমসাময়িক ইতিহাস
প্রাচীন বাংলার ইতিহাস
বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস পাল ও সেন শাসনামলে সমৃদ্ধ ছিল। এই সময়ে বৌদ্ধধর্ম এবং হিন্দু ধর্মের বিকাশ ঘটেছিল, যা দেশের সাংস্কৃতিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মধ্যযুগে মুসলিম শাসনের শুরু দেশের ইতিহাসে আরেকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে আসে।
ভাষা আন্দোলন (১৯৫২)
ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালির আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম গণআন্দোলন। মাতৃভাষা বাংলার জন্য রক্ত ঝরিয়ে বাঙালি জাতি তাদের ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে। ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে, যা বাংলাদেশের একটি গৌরবময় অর্জন।
মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১)
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শাসন থেকে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ৯ মাসব্যাপী এই যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ করে এবং এই দিনটি জাতীয় বিজয় দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়।
বাংলাদেশের রাজনীতি ও প্রশাসন
সংবিধান ও শাসনব্যবস্থা
বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালে প্রণীত হয়। এটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি দেশের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রধান হিসেবে কাজ করেন। সংসদীয় শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের শাসন পরিচালিত হয়।
প্রশাসনিক বিভাগ ও জেলা
বাংলাদেশ ৮টি প্রশাসনিক বিভাগে বিভক্ত: ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, এবং ময়মনসিংহ। প্রতিটি বিভাগ একাধিক জেলা নিয়ে গঠিত, যা পরে উপজেলা ও ইউনিয়নে বিভক্ত।
বাংলাদেশের অর্থনীতি
প্রধান অর্থনৈতিক খাত
বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাতের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের প্রধান কৃষিজাত পণ্যগুলো হচ্ছে ধান, পাট, এবং চা। তৈরি পোশাক শিল্প দেশের প্রধান রপ্তানি খাত হিসেবে কাজ করছে, যা বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি বড় উৎস।
রপ্তানি পণ্য
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য হচ্ছে তৈরি পোশাক, চামড়া, সামুদ্রিক পণ্য, এবং হস্তশিল্প। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পও ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব পাচ্ছে।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা ও সমাজব্যবস্থা
জনসংখ্যার হার ও জনসংখ্যার ঘনত্ব
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ, যার মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭০ মিলিয়ন। দেশটির জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১,২৬৫ জন।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে, বিশেষ করে নারীদের শিক্ষায় অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। সরকার নারীর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
বাংলা ভাষা বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ ভাষা, এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ অনেক সাহিত্যিকের অবদান এ ভাষাকে বিশ্বজোড়া পরিচিতি এনে দিয়েছে। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ভাষা ও সাহিত্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে আছে।
আরও পড়ুনঃ পদ্মা সেতু সম্পর্কে ভাইবা প্রশ্ন: প্রস্তুতি ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
প্রধান উৎসব ও সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা
বাংলাদেশের প্রধান ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে রয়েছে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, দুর্গাপূজা, এবং পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ বাঙালির নতুন বছরের সূচনা করে, যা একটি সর্বজনীন উৎসব হিসেবে পালিত হয়।
বাংলাদেশের খেলাধুলা
ক্রিকেট এবং ফুটবল
বাংলাদেশে ক্রিকেট সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় বড় সাফল্য অর্জন করেছে। ফুটবলও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনপ্রিয়।
গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ জ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর
১. বাংলাদেশের জাতীয় ফুল কী?
উত্তরঃ – শাপলা (নিম্ফিয়া)।
২. বাংলাদেশের জাতীয় পাখি কী?
উত্তরঃ – দোয়েল (Oriental Magpie Robin)।
৩. বাংলাদেশের জাতীয় পশু কোনটি?
উত্তরঃ – রয়েল বেঙ্গল টাইগার (Royal Bengal Tiger)।
৪. বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ কী?
উত্তরঃ – আমগাছ।
৫. বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা কে দেন?
উত্তরঃ – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
৬. বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কবে পালিত হয়?
উত্তরঃ – ২৬শে মার্চ।
৭. বাংলাদেশের বিজয় দিবস কবে পালিত হয়?
উত্তরঃ – ১৬ই ডিসেম্বর।
৮. বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?
উত্তরঃ – সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
৯. বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?
উত্তরঃ – তাজউদ্দীন আহমদ।
১০. বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী কোথায় ছিল?
উত্তরঃ – মুজিবনগর (মেহেরপুর)।
১১. বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নদী কোনটি?
উত্তরঃ – পদ্মা নদী।
১২. বাংলাদেশের বৃহত্তম জেলা কোনটি?
উত্তরঃ – রাঙ্গামাটি।
১৩. বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষুদ্র জেলা কোনটি?
উত্তরঃ – নারায়ণগঞ্জ।
১৪. বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান কবে প্রণীত হয়?
উত্তরঃ – ১৯৭২ সালে।
১৫. বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা কে?
উত্তরঃ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
১৬. বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু পর্বতশৃঙ্গের নাম কী?
উত্তরঃ – কেওক্রাডং।
১৭. বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু কোনটি?
উত্তরঃ – পদ্মা সেতু।
১৮. বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বীপ কোনটি?
উত্তরঃ – ভোলা।
১৯. বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সমুদ্রবন্দর কোনটি?
উত্তরঃ – চট্টগ্রাম বন্দর।
২০. বাংলাদেশে মোট কতটি বিভাগ রয়েছে?
উত্তরঃ – ৮টি বিভাগ।
২১. বাংলাদেশের প্রথম নোবেল বিজয়ী কে?
উত্তরঃ – ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
২২. বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য কী?
উত্তরঃ – তৈরি পোশাক।
২৩. বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধ কোথায় অবস্থিত?
উত্তরঃ – সাভার, ঢাকা।
২৪. বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী কে?
উত্তরঃ – বেগম খালেদা জিয়া।
২৫. বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় কোনটি?
উত্তরঃ – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (প্রতিষ্ঠিত ১৯২১ সালে)।
উপসংহার: বাংলাদেশের সাধারণ জ্ঞান প্রশ্ন
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য অর্জনের জন্য অপরিহার্য। দেশ সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা অর্জন ও প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য এ প্রবন্ধটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সরবরাহ করে।
0 মন্তব্যসমূহ