একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ তার ব্রেস্ট। বর্তমানে ব্রেস্ট কারণে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কারণ, বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ নারীদের ব্রেস্ট টিউমার হচ্ছে। সমগ্র পৃথিবীর নারীদের ক্যান্সার জনিত কারণে মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে ব্রেস্ট টিউমার।
পশ্চিমা বিশ্বে ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বেশি হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে এই সমস্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার কারণ, সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা নেই। তবে ব্রেস্ট টিউমার থেকে ব্রেস্ট ক্যান্সারের উৎপত্তি।
বিশেষ করে ব্রেস্ট টিউমার হয় কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে। তবে ব্রেস্ট টিউমার হওয়া শুরুতেই যদি বোঝা যায় তাহলে খুব সহজে চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব। চলুন জেনে নেই, ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার কারণ সম্পর্কে।
ব্রেস্ট টিউমার কি?
ব্রেস্ট টিউমার বর্তমান সময়ে একটি পরিচিত রোগ। এই রোগটি সাধারণত হয় ৩০ ঊর্ধ্বের নারীদের। মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গের মতো কোষের ও স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। তবে কিছু কিছু সময় স্তনের কিছু কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেতে থাকে।
আরও পড়ুনঃ ওসিডি রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয়?
কোষের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে মাংসের পিন্ড চাকায় পরিণত হয়। মাংসের এই চাকা বা পিন্ড কে আমরা ব্রেস্ট টিউমার হিসেবে চিনি। ব্রেস্ট টিউমার থেকে ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়ে থাকে।
ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার কারণ:
বাংলাদেশের রক্ষণশীল পরিবারের কারনে নারীরা ব্রেস্ট টিউমার ভোগে। কারণ,ব্রেস্ট টিউমার হলে লজ্জায় পরিবারের কারো কাছে বলতে পারেনা। যার কারণে, টিউমার থেকে ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়।
কারণ, বিশেষজ্ঞদের মধ্যে টিউমার হচ্ছে ক্যান্সারের প্রথম ধাপ। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা, ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার কারণ সম্পর্কে।
ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার কারণগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো।
- অতিরিক্ত ওজন
- বংশানুক্রমে
- বন্ধুদের অপপ্রয়োগ
- মদ্যপান বা ধূমপানের কারণ
- ভুল মাপের ব্রা ব্যবহার করা
- বাচ্চাদের ঠিকমতো দুধ না খাওয়ানো
- ব্রেস্ট অপরিষ্কার করে রাখা
উপরে যে কয়টি পয়েন্ট তুলে ধরা হলো সাধারণত এইসব কারণে ব্রেস্ট টিউমার হয়ে থাকে।
ব্রেস্ট টিউমার চেনার উপায়
- ব্রেস্ট ভিতরে শক্ত পিণ্ড অনুভব করা।
- স্তনের বোটার কিছু পরিবর্তন দেখলে। যেমন: কালো হয়ে যাওয়া, ভিতরে ঢুকে যাওয়া বা শক্ত হয়ে যাওয়া।
- স্তনের নির্দিষ্ট কোন স্থানে চুলকালে বা কোন স্থানের রং পরিবর্তন হলে।
- স্তন ব্যথা হয়ে থাকলে।
- স্তনের নির্দিষ্ট কোন অংশ ফুলে উঠলে।
সাধারণত এইসব লক্ষণ থেকেই ব্রেস্ট টিউমার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তবে এইসব লক্ষণ দেখে সরাসরি ব্রেস্ট টিউমার বলা যায় না। এর জন্য কিছু পরীক্ষা এবং পরামর্শের প্রয়োজন। ব্রেস্ট টিউমার চেনার সঠিক উপায় নিম্ন তুলে ধরা হলো:
- ম্যামোগ্রাম নামের এক ধরনের বিশেষ এক্সরে রয়েছে। এই এক্সরে সাহায্যে ব্রেস্ট টিউমার নির্ণয়ের সঠিক পদ্ধতি। আপনারা যদি উপরের কোন লক্ষণ বুঝতে পারেন তাহলে ম্যামোগ্রাম এক্সরে অবশ্যই করবেন। তাহলে নিশ্চিত হতে পারবেন ব্রেস্ট টিউমার হয়েছে কিনা।
- এছাড়াও বাংলাদেশ প্রতিটি জায়গায় বর্তমানে গাইনী স্পেশালিস্ট ডাক্তার রয়েছে। উপরের লক্ষণ গুলো দেখলে সরাসরি তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তাহলে খুব সহজে ব্রেস্ট টিউমার হয়েছে কিনা জানতে পারবেন।
ব্রেস্ট টিউমারের ছবি
ব্রেস্ট টিউমারের সম্পর্কে আমরা কমবেশি সকলেই শুনেছি। তবে সরাসরি আমরা অনেকেই ব্রেস্ট টিউমারের দেখিনি। নিম্নে কিছু ব্রেস্ট টিউমারের ছবি তুলে ধরা হলো:
ব্রেস্ট টিউমারের ছবি 2
ব্রেস্ট টিউমারের ছবি 3
ব্রেস্ট টিউমার হলে করনীয়
ব্রেস্ট টিউমার হলে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। ব্রেস্ট টিউমারের লক্ষণ দেখার সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ ব্রেস্ট টিউমার থেকেই ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়ে থাকে। এই কারণে ব্রেস্ট টিউমার হলে করণীয় সাথে সাথে চিকিৎসা শুরু করা।
বাংলাদেশের ব্রেস্ট টিউমারের চিকিৎসার জন্য স্পেশাল কোন সরকারি হাসপাতাল নেই। তবে বাংলাদেশের প্রতিটি শহরে ব্রেস্ট চিকিৎসার ক্লিনিক রয়েছে। ব্রেস্ট টিউমারের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ক্লিনিক গিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগতে কতদিন সময় লাগে
এছাড়াও আপনি ক্যান্সার হাসপাতালে যেতে পারেন। কারণ, ক্যান্সার হাসপাতালে ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য আলাদা ইউনিট রয়েছে। ওই ইউনিটে যোগাযোগ করলে ব্রেস্ট টিউমারের সঠিক চিকিৎসা পাবেন। তাই ব্রেস্ট টিউমার উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ক্যান্সার হাসপাতাল যোগাযোগ করতে পারেন।
ব্রেস্ট টিউমার অপারেশন খরচ:
যেকোনো ধরনের অপারেশনের খরচ নির্ভর করে অপারেশনের ধরন ও রোগের ধরনের উপর। যেহেতু ব্রেস্ট টিউমারের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। তাই ব্রেস্ট টিউমারের উপর নির্ভর করে খরচ কম বেশি হয়ে থাকে। এছাড়াও আপনি যদি অপারেশন ক্লিনিক থেকে করেন তাহলে খরচ বেশি পড়বে।
আর সরকারি হাসপাতাল থেকে অপারেশন করে তাহলে খরচ কম হবে। কারণ, সরকারি হাসপাতালে অনেক কিছু ফিরে পাওয়া যায়। তবে আপনি যদি প্রার্থমিক অবস্থায় ব্রেস্ট টিউমারের অপারেশন তাহলে খরচ কম হবে। প্রাথমিক অবস্থায় অপারেশন করলে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।
ব্রেস্ট টিউমারের ঘরোয়া চিকিৎসা:
ব্রেস্ট টিউমারের হলে আমরা মনে করি এই রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছে। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, ব্রেস্ট টিউমারের হয়ে থাকে ব্রেস্ট ভিতরে। যাওয়ার কারণে এটা কোনভাবেই ঘরোয়া চিকিৎসা দিয়ে ভালো করা সম্ভব না।
এর সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন করা।ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে কিছুটা প্রশান্তি পাওয়া যায়। যেমন ব্যাথা অনুভব করলে গরম কিছু দিয়ে সেত দেওয়া। ধীরে ধীরে ব্রেস্ট মেসেজ করা। এইসব করলে কিছুক্ষণের জন্য আরাম পাওয়া যায়।
তবে এসব করলে ব্রেস্ট অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই ব্রেস্ট টিউমারের ভালো হলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ব্রেস্ট টিউমারের সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তাড়াতাড়ি সুস্থ করা উচিত। কারণ ব্রেস্ট টিউমারের থেকে ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়ে থাকে।
ব্রেস্ট টিউমার মানেই কি ক্যান্সার?
অনেকেই মনে করে ব্রেস্ট টিউমার হলেই তার ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছে। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। তবে ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায় হল টিউমার। টিউমার থেকে আস্তে আস্তে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। তবে টিউমার এবং ক্যান্সার দুইটা ভিন্ন রোগ। তবে বেশিরভাগ ব্রেস্ট টিউমার হলেই ক্যান্সার ধরা পড়ে।
এর কারণ হচ্ছে, ব্রেস্ট টিউমার হলে মেয়েরা সহজে পরিবারের কাউকে বলতে পারেনা। কারণ এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে অনেকে লজ্জা পায়। যার কারণে, ব্রেস্ট টিউমার থেকে আস্তে আস্তে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়।
আরও পড়ুনঃ ব্রেন স্ট্রোক হলে কি হয়: প্রতিরোধ ও প্রথম সাহায্য
এই কারণেই বেশিরভাগ মেয়েদের ব্রেস্ট টিউমার থেকে ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়ে থাকে। তবে, ব্রেস্ট টিউমার মানে ক্যান্সার নয়।
ব্রেস্ট টিউমারের চিকিৎসা কি?
ব্রেস্ট টিউমার কোন সাধারণ রোগ নয়। ব্রেস্ট হওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, ব্রেস্ট টিউমার থেকে ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়। অনেকে ব্রেস্ট টিউমার হলে হোমিও চিকিৎসা নিয়ে থাকে। এতে করে অনেক সময় ব্রেস্ট ভালো হয়ে যায়।
তবে অনেকের সম্পূর্ণভাবে ভালো হয় না। যার ফলে সেখানে ক্যান্সার হয়। এ কারণে, ব্রেস্ট টিউমার হলে সাথে সাথে ক্যান্সার স্পেশালিস্ট শরণাপন্ন হতে হবে। ক্যান্সার স্পেশালিস্টেরা টিউমারের ধরন দেখলে বলে দিতে পারে কি সমস্যা হয়েছে।
ব্রেস্ট টিউমারের সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন করা। প্রাথমিক অবস্থায় অপারেশন করলে অপারেশনের খরচ। এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারের সম্ভাবনা থাকে না। এই কারণে ব্রেস্ট টিউমার হলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
শেষ কথা: ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার কারণ
বর্তমান সময়ে মেয়েদের বিশেষ করে ব্রেস্ট টিউমার হয়ে থাকে। এই সমস্যাটি হয় শরীরের সঠিক যত্ন অভাবে। আবার অনেকের স্বাভাবিকভাবে হয়ে থাকে। এইটা একটি জটিল রোগ। এই রোগের চিকিৎসা নিতে দেরি হলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
তাই যদি ব্রেস্ট টিউমার কোন লক্ষণ দেখা যায় তাহলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তাহলে খুব সহজে ব্রেস্ট টিউমার ভালো করা সম্ভব। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ