চুল মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। তবে বিভিন্ন কারণে ছেলে ও মেয়ের উভয়ের চুল পড়ে। তবে ছেলেদের চুল মেয়েদের তুলনায় বেশি পড়ে। কারণ ছেলেরা বিভিন্ন কাজের কারণে ঘরের বাইরে থাকে। ঘরের বাইরে থাকার কারণে চুল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চুল পড়া একটি স্বাভাবিক বিষয়।
বর্তমানে কম বয়সী ছেলেদের মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে। এটা হচ্ছে পুষ্টি জনিত সমস্যার কারণে। ছেলেদের চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সম্পূর্ণ সম্পূর্ণ আলোচনা নিম্নে করা হলো।
অল্প বয়সে চুল পড়ার কারণ?
বর্তমান সময়ে অল্প বয়সেই মাথার চুল পড়ছে। সব বয়সেই মাথার চুল পড়ে। তবে মাত্রা অতিরিক্ত চুল পড়লে সেটাই ভাববার বিষয়। কারণ অল্প বয়সে চুল পড়ার ফলে মাথায় টাক পড়ে যায়। এই অল্প বয়সের চুল পড়ার কারণ সমূহ নিম্ন তুলে ধরা হলো:
- অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে।
- চুলের সঠিক সময় যত্ন না নিলে।
- অল্প বয়সে চুল পড়ার কারণ সঠিক পুষ্টির অভাব।
- দূষিত পানিতে গোসল করলে।
- হরমোন জনিত সমস্যার কারণে।
- থাইরয়েড বা অন্য কোন রোগ হলে।
- অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করার ফলে।
ছেলেদের চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার?
আরও পড়ুনঃ চুল ঘন করার তেলের নাম
কারণ কি কারনে চুল পড়ে সে সম্পর্কে ধারণা থাকলে, সঠিক সময় চুলের যত্ন নেওয়া যায়। সঠিক সময় চুলের যত্ন নিলে চুল পড়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চুল পড়ার কারণ জানার পাশাপাশি প্রতিকার সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হবে। কারণ, চুল পড়া শুরু হলে তার প্রতিকার করতে হবে।
চুল পড়ার প্রতিকার বলতে বোঝানো হয় চুল পড়া বন্ধের উপায়। বিশেষ করে হরমোন জনিত এবং পুষ্টিকর খাদ্য অভাবে চুল পড়ে। চুল পড়ার প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ছেলেদের মাথার চুল ঝরে পড়ার কারণ কি?
হরমোন জনিত সমস্যা:
টেস্টোস্টেরন, অ্যান্ড্রোস্ট্রেনডিয়ন, ডিএইচটি হরমোনগুলো সকল মানুষের শরীরে থাকে। বিশেষ করে ছেলেদের শরীরে এই হরমোন গুলো বেশি থাকে। এই হরমোন চুল পড়ার জন্য দায়ী। তবে এই হরমোনের জন্য সকলের চুল পড়ে না। তবে হরমোন উৎপাদনের পরিমাণ শরীর বেশি হলে ছেলেদের চুল পড়ে।
জেনিটিক্যাল সমস্যা:
জেনিটিক্যাল বা বংশগত কারণে মাথার চুল পড়ে। যদি বংশের কোন পূর্বপুরুষের মাথার চুল পড়ার সমস্যা থাকে, তাহলে আপনারও এ সমস্যা হতে পারে। এই চুল পড়ায় আপনার কোন হাত থাকেনা। বংশগত কারণে চুলগুলো পড়ে যায়।
মানসিক চাপ:
অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে মাথার চুল পড়ে। তবে এই চুলগুলো নতুন করে আবার গজায়। যদি মানসিক দুশ্চিন্তা অনেকদিন যাবত স্থায়ী থাকে তাহলে মাথায় টাক পড়া সম্ভাবনা থাকে। কারণ অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে চুল পড়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে।
মাদকাসক্তি:
নিয়মিত অ্যালকোহল, ড্রাগস খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। শেষ করে মাথায় হরমোন জনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়। মাদকাসক্ত থাকলে কম বয়সেই মাথার চুল পড়ে যায়। এবং মাদকাসক্তির কারণে স্বাস্থ্যগত ঝুকি থাকে।
স্বাস্থ্যগত সমস্যা:
স্বাস্থ্যগত সমস্যা বলতে আমরা বুঝি শারীরিক সমস্যা। শারীরিক সমস্যা বিশেষ করে হয় ভিটামিনের ও মিনারেলের অভাবে। শরীরে ভিটামিন ও মিনারেলের পরিমাণ কম থাকলে মাথার চুল পড়ে। দীর্ঘদিন এসব উপাদানের ঘাটতি থাকলে মাথায় টাক পরার সম্ভাবনা থাকে।
চর্মরোগ:
মাথায় অনেক সময় চর্মরোগ হয়। মাথায় চর্মরোগ হলে চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে মাথায় খুশকি হলে চুল ঝরে পড়ে। এই কারণে সব সময় মাথা পরিষ্কার রাখা উচিত।
ছেলেদের চুল পড়ার সমাধান
আরও পড়ুনঃ চুল পড়া বন্ধ করার তেল
সেই উপায় গুলো সঠিকভাবে মেনে চললে খুব সহজে চুল পড়া বন্ধ হয়। নিম্নে ছেলেদের চুল পড়ার সমাধান তুলে ধরা হলো:
- চুল পরিষ্কার রাখা।
- নিয়মিত ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়া।
- মাথার চুলে ভিটামিন ই ক্যাপসুলের ভেতরের অংশ ব্যবহার করা।
- মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকা।
- নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা।
ছেলেদের চুল পড়ার প্রতিকার
কম বেশি সকলের মাথার চুল পড়ে। তবে চুল পড়ার কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে। যদি প্রতিদিন ৫০ টির উপর মাথার চুল পড়ে তাহলে সেটা সমস্যার মধ্যে পড়ে। ৫০ টির কম চুল পড়লে সেটা স্বাভাবিক। পড়ে যাওয়া চুল গুলো আবার নতুন করে গজায়।
তবে মাত্রা অতিরিক্ত চুল পড়লে মাথায় টাক পড়ে যায়। এই কারণে চুল পড়ার প্রতিকার সম্পর্কে জানতে হবে। চলুন জেনে নেই ছেলেদের চুল পড়ার অধিকার সম্পর্কে।
- চুল পরিষ্কার রাখা
- ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্য
- আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা
- ভিটামিন ই ব্যবহার করা
- মাথায় তেল ব্যবহার করা
- পরিষ্কার পানি ব্যবহার করা
- দুশ্চিন্তা কম করা
- ডাক্তারের পরামর্শ
চুল পরিষ্কার রাখা:
চুল অপরিষ্কার থাকলে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের আক্রমণ হয়। যার ফলে মাথায় ঘায়ের সৃষ্টি হয়। এইসব কারণে মাথার চুল পড়ে যায়। এই কারণে মাথার চুল সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। নিয়মিত চুল পরিষ্কার রাখলে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্য:
ভিটামিনের অভাবে সাধারণত মাথার চুল পড়ে যায়। ছেলেদের এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। কারণ ছেলেদের বাইরে ঘোরাফেরার কারণে অনেক পরিশ্রম হয়। কিন্তু সেই অনুপাতে ভিটামিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করে না। এসব কারণে শরীরে ভিটামিনের অভাব দেখা যায়।
আরও পড়ুনঃ ব্রেন স্ট্রোক হলে কি হয়: প্রতিরোধ ও প্রথম সাহায্য
নিয়মিত ভিটামিনযুক্ত খাবার খেলে মাথার কোষগুলো সচল হয়। মাথার কোষ সচল হওয়ার ফলে চুলের গোড়া শক্ত হয়। এবং চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। নিয়মিত ভিটামিন ই যুক্ত খাবার খেলে নতুন চুল গজাতে শুরু করে।
আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা:
মাছ, মাংস, ডিম এগুলো খাবারে প্রচুর পরিমাণ আমিষ থাকে। এছাড়াও অন্যান্য খাবারেও আমিষ থাকে। আমি জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে চুল মজবুত হয়। এবং নিয়মিত আমি খাবার খেলে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
ভিটামিন ই ব্যবহার করা:
ভিটামিন ই রূপচর্চার জন্য খুব কার্যকরী। ভিটামিন ই ক্যাপসুল বাজারে পাওয়া যায়। ভিটামিন ই ক্যাপসুলের ভেতরের তরল অংশ চুলে ব্যবহার করতে হয়। নিয়মিত চুলে ভিটামিন ই ব্যবহার করলে চুলের গোড়া মজবুত হয়। চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
মাথায় তেল ব্যবহার করা:
বর্তমান সময়ে বাজারে অনেক তেল পাওয়া যায়। যেগুলো তেল ব্যবহার করলে খুব সহজেই চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। তবে তেল ব্যবহার করার আগে মাথা পরিষ্কার রাখতে হবে। এবং বাজারে ভালোভাবে যাচাই করে ভালো তেল ব্যবহার করতে হবে।
কারণ বাজারে অনেক ধরনের নকল তেল পাওয়া যায়। যেগুলো ব্যবহার করে চুল পড়া বন্ধ না হয় চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে।
পরিষ্কার পানি ব্যবহার করা:
বিশেষ করে মাথার চুল পড়ে যায় পানির কারণে। অনেক জায়গার পানিতে আর্সেনিক থাকে। আর্সেনিকযুক্ত পানি ব্যবহার করলে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায়। খুব সহজেই মাথার চুল পড়ে যায়।
এ কারণে অবশ্যই পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত পানি ব্যবহার করতে হবে। এবং নিয়মিত পানি খেতে হবে। পরিমাণ মতো পানি খাওয়ার ফলে কোষগুলো সতেজ থাকে এবং চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
দুশ্চিন্তা কম করা:
মানসিক দুশ্চিন্তা করলে মাথার চুল পড়ে যায়। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে নতুন করে মাথায় চুল গজায় না। যার কারণে মাথায় টাক পড়ে যায়। এই কারণে দুশ্চিন্তা কম করতে হবে। তাহলে খুব সহজেই চুল বড় বন্ধ হয়ে যাবে।
ডাক্তারের পরামর্শ:
মাত্রা অতিরিক্ত চুল পড়লে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, উপরে যে সব আলোচনা করা হলো এইসব শুধু প্রাথমিক অবস্থায় চুল পড়া বন্ধ করে। যদি অতিরিক্ত মাত্রায় চুল পড়া শুরু হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করলে খুব সহজে চুল পড়া বন্ধ করা যায়। তাই চুল পড়া শুরু হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
চুল পড়া বন্ধের সঠিক খাদ্য তালিকা
আরও পড়ুনঃ মাথা ব্যাথা হলে কি করা উচিত
এই কারণে চুল পড়া বন্ধ করতে অবশ্যই সঠিক খাদ্য তালিকা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। নিম্নে চুল পড়া বন্ধের জন্য কি কি খাবার খাবেন তার নাম তুলে ধরা হলো:
- সবুজ শাকসবজি। যথা: পালং শাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি, গাজর ইত্যাদি।
- হলুদ ও কমলা রঙ্গের ফল। যথা: পাকা আম, পেপে, কলা, আনারস, কমলা ইত্যাদি।
- সামুদ্রিক মাছ এবং তৈলাক্ত মাছ।
- প্রোটিন জাতীয় খাদ্য।
- কালোজিরা।
ছেলেদের চুল পড়া বন্ধের ঘরোয়া উপায়
নিম পাতার নির্যাস:
মেথি:
পিঁয়াজ:
দই, মধু ও লেবু:
দই, মধু ও লেবু একসঙ্গে মিশ্রিত করে মাথায় ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে চুলের গোড়ার আদ্রতা ফিরে আসে। কারণ এই তিনটি মিশ্রণ একসাথে ব্যবহার করলে ভিটামিন বি ও প্রোটিনের ঘাটতি দূর হয়। সপ্তাহে একবার করে ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হয়। এবং নতুন চুল বাধাতে শুরু করে।
অ্যালোভেরা:
অ্যালোভেরা অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। অ্যালোভেরা চুলে ব্যবহার করার ফলে চুলের কমলতা ফিরে আসে। নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের গোড়া মজবুত হয়। এ কারণে অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
কি তেল ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হবে?
- সাইডার উড অয়েল
- লেমনগ্রাস অয়েল
- বার্গামট অয়েল
- রোজমেরি অয়েল
- অলিভ অয়েল
ছেলেদের চুল ঘন করার উপায়
চুল মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এই কারণে সবাই চাই চুল যেন ঘন ও মজবুত হয়। তার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলাফেরা করলে খুব সহজে চুল ঘন করা যায়। বিশেষ করে চুল ঘন করতে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হয়। কারণ চুল সম্পন্ন প্রোটিন উৎপাদন দিয়ে তৈরি।
এছাড়াও নিয়মিত কমলা ও হলুদ রঙের ফলমূল খেতে হবে তাহলে চুল ঘন করা সম্ভব। চুল ঘন করতে অবশ্যই চুল পরিষ্কার রাখতে হবে। নিয়মিত তেল ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত খাদ্য তালিকা এবং ফটিক চুলের যত্ন নিলেই ছেলেদের চুল ঘন করা সম্ভব।
শেষ কথা: ছেলেদের চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার
বর্তমান সময়ে ছেলেদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে চুল পড়ে যাওয়া। বিশেষ করে এই সমস্যাটি হয় হরমোন জনিত সমস্যার কারণে। ছাড়াও বংশগত কারণেও মাথার চুল পড়ে। মাথার চুল পড়ার অনেক ধরনের কারণ রয়েছে। তবে মাথায় চুল না থাকলে কোন ছেলেকে দেখতে ভালো লাগে না।
এই কারণে অবশ্যই চুলের সঠিক যত্ন নিতে হবে। সঠিকভাবে চুলের যত্ন এবং পুষ্টিকর খাবার খেলে চুল পড়া হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভব। এবং অবশ্যই পরিষ্কার পানিতে গোসল করতে হবে।
কারণ বর্তমান সময়ে ৫০% মানুষের চুল পড়ে পানির সমস্যার কারণে। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ