সময়ের সাথে সাথে মানুষের শারীরিক সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিন দিন নতুন রোগ দেখা যাচ্ছে। ঠিক একই ভাবে সিস্ট একটি রোগ। এই রোগ হয় মেয়েদের জরায়ুতে। সিস্ট এখন অনেক নারীদের দেখা যায়। ভারতের প্রায় ২৫% নারীদের মধ্যে প্রযজননকালে এই রোগটি হয়।
সিস্ট বা ওভারির সিস্ট এক ধরনের তরলপূর্ণ থলি যা একটিভা দুইটি জড়ার মধ্যে হয়ে থাকে। সিস্ট কি টিউমার, ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার উপায়। সিস্ট হলে সঠিক চিকিৎসা করলে খুব সহজে ভালো হয়ে যায়।
এছাড়াও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে চলাফেরা করলে এই সমস্যাটি থেকে দূরে থাকা সম্ভব। নিম্নে, সিস্ট কি টিউমার, ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
সিস্ট কি?
সিস্ট হলো নারীদের জরায়ুর রোগ। রোগ হলে ডিম্বাশয় তরলপূর্ণ থলি হয়ে থাকে। সিস্ট একটি বা দুইটি জরায়ুর মধ্যে হতে পারে। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম থাকলে সিস্ট হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।
Ovarian CYST মানে কি?
Ovarian CYST ইংরেজি শব্দ। Ovarian CYST শব্দের অর্থ ওভারিয়ান সিস্ট। এ রোগটি মেয়েদের ডিম্বাশয় হয়ে থাকে। এই রোগটি হলে ডিম্বাশয় পানি জমা হয়। যার ফলে অনেক ব্যথা অনুভব হয়।
সিস্ট কেন হয়?
ওভারিতে সিস্ট তৈরি হওয়ার প্রধান কারণ ইস্ট্রজেন হরমোনের ভারসাম্য ঠিক না থাকা। হরমোনের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে ওভিউলেশন অনিয়মিত হয়। আর এই ভাবেই জরায়ু বা ওভারিতে সিস্ট তৈরি হয়। তাই সিস্টকে রুখতে হলে শরীরে ইস্ট্রজেন ব্যালেন্স এর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সিস্ট কি ব্যাথা করে?
সিস্ট জরায়ুতে হয়। সিস্ট হলে তার আশেপাশের কোষে চাপ সৃষ্টি করে। যার কারণে ব্যাথা হয়। তবে যকৃৎ প্রভৃতি স্থানে সিস্ট হলে ব্যাথা নাও হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাথা হয়।
ওভারিয়ান সিস্ট কি?
নারীরা সিস্ট রোগে আক্রান্ত হয়। ওভারিয়ান সিস্ট হলে অনেক জটিলতায় পড়তে হয়। ওভারি বা ডিম্বাশয় এর থলি পানিপূর্ণ থাকলে সিস্ট বলা হয়। এই রোগটি যেকোনো বয়সে নারী হতে পারে। সিস্ট এর অনেক ধরণ রয়েছে।
সিস্ট কি টিউমার?
সিস্ট হল ডিম্বাশয় পানি জমার সমস্যা। আর টিমার হল মাংসপেশীর অতিরিক্ত বৃদ্ধি। টিউমার হলে সেই স্থান শক্ত হয়ে থাকে এবং ব্যথা হয়। কিন্তু সিস্ট হলে সে সব সমস্যা হয় না। কোষের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় থাকে।
আরও পড়ুনঃ ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার কারণ
এই কারণে বলা যায় সিস্ট টিউমার না। তবে সিস্ট এর চিকিৎসা না করলে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ওভারিয়ান সিস্ট এর লক্ষণ
- তলপেটে হালকা ব্যাথা হয়।
- ঠিকমতো মাসিক হয় না।
- মাসিক হওয়ার সময় ব্যথা আগে থেকে অনেক বৃদ্ধি পায়।
- যৌন মিলনের সময় অনেক ব্যথা হয়।
- সিস্ট ফেটে গেলে তীব্র ব্যথা ও রক্ত বের হয়।
- প্রস্রাব বা মলত্যাগের সময় ব্যথা হয়।
সিস্ট হলে কি সমস্যা হয়?
সিস্ট একটি রোগের নাম। আর শরীরে যে কোন রোগ হলে সমস্যা হয়। ইতিপূর্বে সিস্ট এর লক্ষণগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এ রোগের লক্ষণ গুলোই সিস্ট এর সমস্যা। ঠিক একই ভাবে সিস্ট হলেও অনেক ধরনের সমস্যা হয়। নিম্নে, সিস্ট হলে কি সমস্যা হয় তুলে ধরা হলো:
- মাসিক হওয়ার সময় ব্যথা আগে থেকে অনেক বৃদ্ধি পায়।
- যৌন মিলনের সময় অনেক ব্যথা হয়।
- সিস্ট ফেটে গেলে তীব্র ব্যথা ও রক্ত বের হয়।
- প্রস্রাব বা মলত্যাগের সময় ব্যথা হয়।
- তলপেটে হালকা ব্যাথা হয়।
- ঠিকমতো মাসিক হয় না।
Dermoid CYST কি? সিস্ট কি টিউমার, ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার উপায়
Dermoid CYST (ডার্ময়েড সিস্ট) সাধারণত চুল, হাড়, তেলের গন্ধি , ত্বক বা স্নায়ুতে পাওয়া টিস্যুতে ভরা সমান ত্বকের বৃদ্ধি। তারা একটি চর্বিযুক্ত ও হলুদ উপাদান থাকে। এই সিস্ট গুলো কোষ থলিতে আবদ্ধ অবস্থায় থাকে।
প্রায়শই এই সব উপদান ত্বকের মধ্যে বা নিচে বৃদ্ধি পায়। চর্মরোগ সিস্ট শরীরের যে কোন জায়গায় বৃদ্ধি পেতে পারে।
ওভারিতে সিস্ট হওয়ার কারণ কি?
ওভারি থেকে ডিম না ফুটলে অথবা ফোটার পর সেগুলো চুপসে না গেলে সিস্ট হতে পারে। এছাড়াও ওভারিতে যেকোনো ছোট ফুলিকল থাকলে সেগুলো সম্পন্ন বড় না হলেও সিস্ট হতে পারে। অনেক সময় হওয়ার মন জনিত সমস্যার কারণে ওভারিতে সিস্ট হয়।
ওভারিয়ান সিস্ট কত প্রকার ও কি কি?
ওভারিয়ান সিস্ট সাধারণত দুই প্রকার হয়ে থাকে। সেগুলো হল:
- ফাংশনাল সিস্ট
- প্যাথলজিক্যাল সিস্ট
ফাংশনাল সিস্ট:
মাসিকের রক্ত প্রবাহের নিয়মিত কার্যধারায় একটি ফাংশনাল সিস্ট তৈরি হয়। এই সিস্ট গুলো নিরাপদ এবং দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
প্যাথলজিক্যাল সিস্ট:
কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে ওভারিয়ান সিস্ট হয়। কম নিয়মিত হলে, ক প্যাথলজিকাল সিস্ট শরীরের ক্ষতি করে। এটা অনেক শক্তিশালী। এই সিস্ট গুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
- নিরাপদ সিস্ট, ক্যান্সার কোষ বিকাশ করে না।
- ম্যালিগন্যান্ট সিস্ট, যা ক্যান্সার বহন করতে সক্ষম।
ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার উপায়
ওভারিয়ান সিস্ট হলে অনেক ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হয়। তবে সঠিক চিকিৎসা করলে খুব সহজেই ওভারিয়ান সিস্ট দূর করা যায়। ওভারিয়ান সিস্ট হলে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
কারণে ডাক্তারের কাছে গেলে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া যাবে। নিম্নে, ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার উপায় তুলে ধরা হলো:
- ইস্ট্রজেন নিয়ন্ত্রণ
- ডায়েট
- ওজন নিয়ন্ত্রণ
- সাপ্লিমেন্ট
ইস্ট্রজেন নিয়ন্ত্রণ:
ওভারিয়ান সিস্ট হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে হরমোন জনিত সমস্যা। শরীরের ইস্ট্রজেন হরমোন সমান না থাকলে সিস্ট হয়। এই কারণে ইস্ট্রজেন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
ডায়েট:
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। এ কারণে অবশ্যই ডায়েট কন্ট্রোল করতে হবে। ডায়েট কন্ট্রোল করে চললে সিস্ট হওয়ার ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণ:
অতিরিক্ত ওজন ও বিএমআই বেশি হওয়ার কারণে শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। অতিরিক্ত ওজনের কারণে বিএমআই বৃদ্ধি পায়। যার কারণে নারীরা ওভারিয়ান সিস্ট আক্রান্ত হয়। এই কারণে বিএমআই এর মান ২৫ এর নিচে রাখতে হবে।
সাপ্লিমেন্ট:
সিস্ট থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে। কারণ আমাদের শরীরে যেকোনো ধরনের উপাদান কম থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার কারণে অবশ্যই সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে।
ওভারিয়ান সিস্ট মোকাবেলায় ঘরোয়া উপায়:
ওভারিয়ান সিস্ট একটু জটিল রোগ। এই রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা না করাই উত্তম। তবে ঘরোয়া ভাবে কিছু কাজ করলে অনেক উপকৃত হওয়া যায়। এছাড়াও রোগ সম্পূর্ণ ভালো না হলেও অনেকটা কমে যায়। নিম্নে, ওভারিয়ান সিস্ট মোকাবেলায় ঘরোয়া উপায় গুলো তুলে ধরা হলো:
- তাপবা সেক দিতে হবে।
- ব্যায়াম এবং স্ট্রেচিং করতে হবে।
- ম্যাসেজ বা মালিশ করতে হবে।
- অতিরিক্ত ওজন থাকলে কমাতে হবে।
- রিলাক্সেশন বা চিত্তবিনোদন করতে হবে।
- খাদ্য তালিকা পরিবর্তন করতে হবে।
সিস্ট থাকলে কি বাচ্চা নেওয়া যায়:
সিস্ট থাকলে বাচ্চা নেওয়া যায়। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বাচ্চা নিতে হবে। কারণ সিস্ট রোগটি হয় মেয়েদের ডিম্বাশয়। যার কারণে মেয়েদের অনেক সমস্যা হয়ে থাকে। মেয়েদের গর্ভকালীন সময় অনেক কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
আরও পড়ুনঃ জন্ডিস কেন হয়, জন্ডিসের কারণ ও লক্ষণ
এ কারণে সিস্ট রোগটি ভালো হওয়ার পর বাচ্চা নেওয়া উত্তম। তবে রোগ থাকা অবস্থায় বাচ্চা নিতে পারবেন। এতে করে গর্ভকালীন সময় মেয়েদের অনেক সমস্যা হয়।
জরায়ু সিস্ট দূর করার উপায়:
সিস্ট রোগটি মেয়েদের হয়ে থাকে। এই রোগটি মেয়েদের জরায়ুতে হয়। জরায়ুতে সিস্ট হলে অনেকে মানসিকভাবে দুশ্চিন্তায় পড়ে। তবে সঠিক সময় চিকিৎসা নিলে সিস্ট দূর হয়ে যায়। জরায়ু সিস্ট দূর করার উপায় হচ্ছে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করা।
কারণ জরায়ু মেয়েদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এই কারণে জরায়ুর সমস্যা হলে ঘরোয়াভাবে চিকিৎসা না করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।
ওভারি সিস্ট দূর করার ঔষধ:
ওভারি সিস্ট রোগটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে ওভারি সিস্ট রোগের চিকিৎসা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে। যে কোন ওষুধ কিনে খাওয়ালে সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খেলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
এ কারণে, ওভারি সিস্ট দূর করার ওষুধ অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
ওভারি সিস্ট অপারেশন খরচ:
ওভারি সিস্ট মেয়েদের জরায়ুতে হয়ে থাকে। এই সমস্যাটি হলে ডিম্বাশয় পানি জমা হয়। তবে সঠিকভাবে চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যায়। অনেকের ওভারি সিস্ট অপারেশন করতে হয়।
এই জায়গাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অপারেশন একটু সমস্যা হলে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
আরও পড়ুনঃ ওসিডি রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয়?
এই কারণে এই অপারেশনের খরচ অনেক। বর্তমানে ওভারি সিস্ট অপারেশন ভারতে হচ্ছে। ভারতের টাকায় এই খরচ প্রায় ১ লাখ থেকে ১.৫ লাখ টাকার মত। পরিস্থিতি অনুযায়ী অপারেশনের খরচ কম বেশি হয়ে থাকে।
সিস্ট এর ছবি:
বর্তমান সময়ে অনেক মেয়ের সিস্ট রোগ হচ্ছে। এই রোগটি বিশেষ করে হরমোন জনিত সমস্যার কারণে হয়। নিম্নে সিস্ট এর ছবি দেওয়া হল:
শেষ কথা: সিস্ট কি টিউমার, ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার উপায়
সিস্ট রোগটি বিশেষ করে মেয়েদের হয়। ভারতে প্রায় ২৫ পার্সেন্ট মেয়ের এই সমস্যাটি হচ্ছে। তবে সঠিকভাবে চিকিৎসা করলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অনেকে জানতে চায়, সিস্ট কি টিউমার। সিস্ট টিউমার না তবে অনেক দিন চিকিৎসা না করলে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার উপায়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করলে খুব সহজেই সিস্ট দূর করা যায়। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ