যতদিন যাচ্ছে প্রযুক্তি তত উন্নত হচ্ছে। তার সাথে উন্নত হচ্ছে আমাদের জীবন যাপন। বর্তমান সময়ে সকল কিছুতে প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। কিছুদিন আগে গুগল ঘোষণা দিয়েছিল তাদের ফোনে কোন সিম কার্ড ব্যবহার করতে হবে না। বর্তমানে তা বাস্তবায়ন হয়েছে।
এখন ফোনে ফিজিকাল সিমের পরিবর্তে ই-সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। ই-সিম কি? ই সিম কোথায় পাবো? সেই সম্পর্কে ধারণা আমাদের অনেকের মধ্যেই নেই। নিম্নে, ই-সিম কি? ই সিম কোথায় পাবো? সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
সিম কার্ড কে আবিষ্কার করেন?
মোবাইল ফোন ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত চলতে পারিনা। কিন্তু সিম কার্ড ছাড়া মোবাইল ফোন চলে না। কারণ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোনে সিম থাকা প্রয়োজন। কিন্তু সিম প্রথমে কে আবিষ্কার করে সেটা জানার আগ্রহ আমাদের সকলের মধ্যে রয়েছে।
সর্বপ্রথম মোবাইল আবিষ্কার করেন মার্টিন কুপার। কিন্তু সেই সময় ফোনে নির্দিষ্ট করে কোন সিম ব্যবহার করতে হতো না। সর্বপ্রথম সিম তৈরি করে জার্মানি কোম্পানি। সেখানে থেকে কোন ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হয়নি। এ কারণে সিম আবিষ্কারকের নাম বলা যায় না।
সিম কার্ড এর পুরো নাম কি?
আমরা সকলেই ফোনে সিম ব্যবহার করি। কিন্তু সিমের পুরো নাম কি আমরা অনেকেই জানিনা। সিমের পুরো নাম 'সাবসক্রাইবার আইডেনটিটি মডিউল'। SIM = subscriber identification module.
ই-সিম কি?
সাধারণত সিমের মত ই-সিমের কাজ। কিন্তু ই-সিম দেখা যায় না। এটা ব্যবহার করলে শুধু ফোনে কাজ করবে। এটা ব্যবহার করার জন্য একটি কোড স্ক্যান করতে হয়। তাহলে ই-সিম চালু হয়ে যায়।
E Sim Card কি?
সাধারণ ফোনের মতই E Sim Card কিনতে হয়। তবে সাধারণ সিম কার্ডের মত কোন সমি কার্ড পাওয়া যায় না। এছাড়াও ই-সিম কার্ড সকল ফোনে ব্যবহার করা যায় না। বর্তমান সময়ে কিছু কিছু ফোন রয়েছে যেগুলোতে শুধুমাত্র ই-সিম ব্যবহার করা যায়।
ফিজিক্যাল সিম নাকি ইএসআইএম কোনটি ভালো:
বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন যন্ত্রপাতি তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের ফলে আমাদের জীবন অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। এখন সকল কিছু আমরা হাতের নাগালেই পাচ্ছি। এখন মোবাইল ফোনে ফিজিক্যাল সিম এর পাশাপাশি ই-সিম ব্যবহার করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ নতুন ওয়েবসাইটে ভিজিটর বাড়ানোর উপায়
ফিজিক্যাল সিম নাকি ইএসআইএম কোনটি ভালো অনেকে জানে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফিজিক্যাল সিম ব্যবহার করার অনেক সুবিধা রয়েছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইএসআইএম ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। ইএসআইএম ব্যবহার করলে মোবাইল ফোনের মাথা কোম্পানিগুলো অনেক সুবিধা পাচ্ছে।
তাদের মোবাইলে অনেক আপডেট করতে পারছে। বিশেষ করে ব্যাটারির সাইজ বড় করতে পারছে। সিম চেম্বার ছোট করতে পারছে। এর ফলে ওয়াটার প্রুফ মোবাইল তৈরি করতে খুব সহজ হচ্ছে। এছাড়া ব্যবহারকারীর একই সাথে একটি মোবাইলে অনেকগুলো সিম চালানোর সুযোগ পাচ্ছে।
ফিজিক্যাল সিম ও ইএসআইএম এর মধ্যে পার্থক্য কি?
ফিজিক্যাল সিম ও ইএসআইএম এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। নিম্নে পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো:
- ফিজিক্যাল সিম হাত দিয়ে ধরা যায় এবং দেখা যায়। কিন্তু ইএসআইএম দেখাও যায় না হাত দিয়ে ধরাও যায় না।
- ফিজিক্যাল সিম সব মোবাইলে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু ইএসআইএম সকল ফোনে ব্যবহার করা যায় না। কিছু কিছু ফোনে এই সুবিধা রয়েছে।
- ফিজিক্যাল সিম কোন ফোনে দুইটি কোন ফোনে একটি ব্যবহার করা যায়। কিন্তু ইএসআইএম একই সাথে একটি ফোনে অনেকগুলো রাখা যায়। যে কোন সময় দুটি করে ব্যবহার করা যায়।
- ফিজিক্যাল সিম যে কোন সময় ফোন থেকে খোলা যায়। কিন্তু ইএসআইএম ফোন থেকে খোলা যায় না।
গ্রামীণ সিম তুলতে কত টাকা লাগে?
গ্রামীন সিমের গ্রাহকদের বিভিন্ন পদে ভাগ করা হয়। যথা: সিলভার,গোল্ড, নন স্টার, প্লাটিনাম ও প্লাটিনাম প্লাস স্টার। যারা সিলভার,গোল্ড ও নন স্টার গ্রাহক তাদের সিম উঠাতে ২৫০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু যারা প্লাটিনাম ও প্লাটিনাম প্লাস স্টার গ্রাহক তাদের সিম তুলতে কোন টাকা লাগেনা।
ই সিমের সুবিধা অসুবিধা:
সকল কিছুর সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। ঠিক একই ভাবে ই-সিমের সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। নিম্নে সুবিধা অসুবিধা গুলো তুলে ধরা হলো:
ই সিমের সুবিধা:
ই সিমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে যেকোনো দেশে গিয়ে ব্যবহার করা যায়। এই সিম হারিয়ে যাওয়ার কোন ভয় থাকেনা। একই সাথে বিভিন্ন কোম্পানির সিম ফোনে রাখা যায়। যে কোন সময় যেকোনো সিম ব্যবহার করা যায়। ই-সিম পরিবেশ বান্ধব। এটা হাতে ধরা যায় না।
আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার স্লো হওয়ার কারণ!
এই সিমের সকল কাগজপত্র কাগজ দিয়ে তৈরি। যার কারণে পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা থাকে না। কেউ ফোন চুরি করে ফোন থেকে সিম খুলতে পারে না।
ই সিমের অসুবিধা:
ই-সিম নির্দিষ্ট ফোনে ব্যবহার করা যায়। যে কোন সময় যে কোন ফোনে ব্যবহার করা যায় না। হঠাৎ করে ফোনের চার্জ ফুরিয়ে গেলে এক ফোন থেকে অন্য ফোনে সিম ঢোকানো যায় না। বর্তমান সময়ে সকল ফোনে ই-সিম সাপোর্ট করে না। এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু ফোনের প্রয়োজন পড়ে।
মনে করেন আপনার ই-সিমে বিকাশে টাকা রয়েছে কিন্তু ফোন বন্ধ আছে। সেক্ষেত্রে আপনি কোনভাবে ফোন থেকে টাকা উঠাতে পারবেন না।
ই সিম বাংলাদেশ:
বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ই সিম চালু করেন গ্রামীণফোন কোম্পানি। বর্তমানে বাংলাদেশে ই সিম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে বাংলাদেশের সকল ফোনে ই সিম ব্যবহার করা যায় না। আইফোন, স্যামসাং, microsoft এসব কোম্পানির কিছু কিছু ফোনে ই সিম ব্যবহার করা যায়।
গ্রামীনফোন ই সিম:
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সিম কোম্পানি হচ্ছে গ্রামীণফোন। তারা অনেকদিন ধরে বিশ্বাস এর সাথে কাস্টমারদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ই সিম চালু করেন গ্রামীণফোন। বাংলাদেশের প্রতিটি স্থানে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। এর ফলে এর জনপ্রিয়তা সবার উপরে।
ই সিম দাম কত?
ই সিম এর দাম সাধারণ সিমের সমান। এবং এই সিম কিনার জন্য সাধারণ সিমের যেসব কাজ করতে হয় ঠিক একই কাজ করতে হয়। বর্তমান সময়ে গ্রামীণফোনের ই সিমের দাম ২০০ টাকা। কোম্পানি ভেদে দাম অনেক সময় কম বেশি হয়ে থাকে।
ই সিম সাপোর্ট মোবাইল:
ই সিম সকল ফোনে ব্যবহার করা যায় না। কিছু কিছু ফোন রয়েছে যেগুলো ই সিম ব্যবহার করা যায়। ই সিম সাপোর্ট মোবাইল এর নাম নিম্ন তুলে ধরা হলো:
- Iphone 11
- Iphone 12
- Iphone 13
- Iphone 14
- পিক্সেল 2 থেকে 7
- স্যামসাং গ্যালাক্সি এস 20 থেকে ২২
বর্তমানে আরো কিছু ফোন বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যায় যেগুলোতে ই সিম ব্যবহার করা যায়।
ই সিম কিনতে কি করতে হয়?
- প্রথমে সিম নাম্বার পছন্দ করতে হয়।
- আইডি কার্ড নাম্বার দিতে হয়।
- আঙ্গুলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে হয়।
- তারপর ফোন থেকে সিমের কোড স্ক্যান করতে হয়।
ই সিম কোথায় পাবো:
বর্তমানে বাংলাদেশের সকল সিম কোম্পানি ই সিম সিম বিক্রয় করছে। এ কারণে যেকোনো সিম কোম্পানির কাছ থেকে ই সিম ক্রয় করতে পারবেন।
শেষ কথা: ই-সিম কি? ই সিম কোথায় পাবো?
বর্তমান সময়ে সকল কিছু আধুনিক হয়েছে। আর এসব আধুনিকতার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে মোবাইল ফোন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমাদের কাজ অনেক কমে এসেছে। মোবাইলের ফোনের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে সিম।
বর্তমান সময়ে ফিজিক্যাল সিমের পরিবর্তে ই সিম ব্যবহার হচ্ছে। এতে করে সিম বহন করার প্রয়োজন পড়ে না। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ