আলসার রোগের সাথে আমরা কম বেশি সকলে পরিচিত। গ্যাস্ট্রিক আলসার একটি পরিপাকতন্ত্রের রোগ। এ রোগটি হয় অনিয়মিত খাবার গ্রহণ করার ফলে। এসিডের আধিক্য ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে পাকস্থলীতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
পাকস্থলীর এই ক্ষতকেই গ্যাস্ট্রিক আলসার বলে। এই রোগটি হল রোগীর পাকস্থলীতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে সকলের জানা প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষ গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগে ভুগছি।
গ্যাস্টিক আলসার হলে রোগী অনেক সমস্যা ভোগে। তবে বর্তমান সময়ে চিকিৎসার মাধ্যমে খুব সহজে গ্যাস্ট্রিক আলসার ভালো করা সম্ভব। চলুন জেনে নেই, গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে।
গ্যাস্ট্রিক আলসার কি?
আলসার শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ এলকোস থেকে। যার অর্থ ক্ষত। মূলত পরিপাকতন্ত্রের রোগ গ্যাসটিক আলসার। পাকস্থলীতে এসিড বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে এ রোগটি হয়। গ্যাস্ট্রিক সাধারণত পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রের দেওয়ালের ক্ষত সৃষ্টি করে। পাকস্থলীর এই ক্ষতকে গ্যাসটিক আলসার বলা হয়।
সাধারণ জনগণ গ্যাস্ট্রিক আলসার বলতে যেটা বোঝে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় এটাকে ‘পেপটিক আলসার’ বলে। এ রোগটি হয় সাধারণত অনিয়মিত খাদ্য অভ্যাসের কারণে। অনিয়মিত খাদ্য গ্রহণের ফলে পাকস্থলীতে এসিড উৎপন্ন হয়।
আরও পড়ুনঃ ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগতে কতদিন সময় লাগে
এই এসিড পাকস্থলীর দেওয়ালে ক্ষতস্থানে সৃষ্টি করে। যা ঘায়ে পরিণত হয়। এই ক্ষতস্থানকে গ্যাস্ট্রিক আলসার বলা হয়।
গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ
গ্যাস্ট্রিক আলসার আমাদের সকলের কাছেই একটি পরিচিত রোগ। এই রোগটি হয় পাকস্থলীতে। এর রোগ হওয়ার আগে অনেক ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। চলুন জেনে নেই, গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ কি কি?
- পেট ও বুকের উপরের অংশে ব্যথা।
- বুক জ্বালাপোড়া করা।
- মাত্রা অতিরিক্ত হেঁচকি ওঠা।
- তিক্ত ও টক স্বাদের ঢেকুর ওঠা।
- মেরুদন্ডে ব্যথা অনুভব হওয়া।
- বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া।
- পায়খানার সময় রক্তপাত হওয়া।
- যে কোন খাবার খেলে বুক জ্বালা করা।
- পাকস্থলী স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি ফাঁপা।
- খাবার খাওয়ার প্রতি অনিহা।
গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায়
গ্যাস্ট্রিক আলসার সকলের কাছে পরিচিত। তবে এই রোগটি হলে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কারণ গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে রোগী স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারেনা। এজন্য, গ্যাসটিক আলসার এর লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
এবং বিভিন্ন ধরনের পেটের পরীক্ষা করতে হবে। মাত্রা অতিরিক্ত পাকস্থলীতে ব্যথা অনুভব হলে মেডিকেলে ভর্তি হতে হবে। এবং টেস্টের রিপোর্টে যদি গ্যাস্ট্রিক আলসার ধরা পড়ে তাহলে পাকস্থলীতে অপারেশন করতে হবে।
কারণ, এই রোগের একমাত্র মুক্তির উপায় অপারেশন। অপারেশন করার মাধ্যমে পাকস্থলীর যে জায়গায় গ্যাসটি আলসার হয়েছে সেই জায়গা কেটে বাদ দিতে হবে।
সাধারণত এই প্রক্রিয়ায় গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর চিকিৎসা করা হয়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় গ্যাসটি আলসার ধরা পড়লে সাধারণ চিকিৎসার মধ্যে ভালো করা সম্ভব। তবে যে কোন ধরনের গ্যাসটি আলসারের লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
গ্যাস্ট্রিক আলসারের চিকিৎসা
অনিয়মিত খাদ্য অভ্যাসের কারণে পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রিক হয়। গ্যাস্ট্রিকের মাত্রা অতিরিক্ত হলে পাকস্থলীতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। পাকস্থলীর এই ক্ষতকেই গ্যাস্ট্রিক আলসার বলা হয়। গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগে বর্তমান সময়ে ৭% মানুষ ভুগছে।
যদি গ্যাসটিক আলসার প্রাথমিক অবস্থায় থাকে তাহলে খুব সহজেই সারিয়ে তোলা যায়। যদি গ্যাস্ট্রিক আলসার প্রাথমিক ধাপ পার করে তাহলে উপরে যেসব লক্ষ্যে কথা বলা হয়েছে এগুলো দেখা দিবে। ওপরে লক্ষণ গুলো দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ডাক্তারের পরামর্শ নিলে তারা পেটের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা দিবে। যদি গ্যাস্ট্রিক আলসারের সমস্যা ভয়ানক হয় তাহলে অপারেশন করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ পেঁয়াজের রস চুলে দেওয়ার নিয়ম
কারণ, গ্যাস্ট্রিক আলসার হওয়ার ফলে পাকস্থলীতে ক্ষতস্থানের সৃষ্টি হয়। এবং আস্তে আস্তে পুরো পাকস্থলীতে ছড়িয়ে পড়ে। আলসারের আকার বৃদ্ধি বলে রুগীর মৃত্যু হতে পারে। এই কারণে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।
কি খেলে আলসার ভালো হয়
গ্যাস্ট্রিক আলসার প্রাথমিক অবস্থা সনাক্ত করতে পারলে কিছু খাদ্য অভ্যাস এর মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব। কারণ কিছু কিছু খাদ্যের আলসার ভালো করার মত ঔষধি গুণ রয়েছে। এসব খাবার খেলে আলসারের প্রাথমিক অবস্থা ভালো করা সম্ভব। চলুন জেনে নেই কি খেলে আলসার ভালো হয়।
- মধু
- আদা
- হলুদ
- রসুন
মধু:
মধু একটি পুষ্টিকর খাবার। মধুতে রয়েছে এনজাইম। মধুর মধ্যে থাকা এনজাইম ভেঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড উৎপন্ন হয়।যা আলসার সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া সঙ্গে লড়াই করে। প্রতিদিন গরম পানি, মধু ও দারুচিনির গুঁড় মিশিয়ে খেলে আলসার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আদা:
আদা গ্যাস্ট্রিকের জন্য খুব ভালো কাজ করে। গ্যাস্ট্রিক থেকেই আলসার হয়। এই কারণে নিয়মিত আদা খেলে আলসার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। প্রথমে এক কাপ পরিমাণ পানি নিতে হবে তার সাথে এক চামচ আদা কুচি নিতে হবে।
তারপর পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। ফুটন্ত পানি থেকে আদা ফেলে দিয়ে খেতে হবে। এর সাথে এক চামচ পরিমাণ মধু মিশিয়ে খেলে ভালো কাজ করে।
হলুদ:
হলুদের রয়েছে কারকিউমিন। এছাড়া হলদে রয়েছে আন্টি অক্সিডেন্ট। এই পদার্থগুলো আলসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। হলুদ খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে এক গ্লাস গরম পানির সাথে এক চা চামচ হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর দিনে কমপক্ষে দুইবার খেতে হবে। তাহলে খুব তাড়াতাড়ি উপকার পাবেন।
রসুন:
রসুন একটি ওষুধিগুণ সম্পন্ন খাবার। রসুনে রয়েছে অ্যালিসিন যৌগ। অ্যালিসিন মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, যা আলসার ভালো করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে রসুন খেলে কার্যকারিতা বেশি পাওয়া যায়।
গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। যেমন: ওটস, ব্লকলি, মিষ্টি আলো, ডুমুর, গাজর, আপেল ইত্যাদি।
- ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার। যেমন: পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, পালং শাক, পাকা আম, গাজর ইত্যাদি।
- ফ্লাভোনয়েড সমৃদ্ধ খাবার। যেমন: রসুন, গ্রিন টি, আদা, রঙ্গিন শাকসবজি ইত্যাদি।
- প্রো-বায়োটিক খাবার। যেমন: দই, কিসমিস, মিসো, প্রভৃতি প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার।
উপরে যেসব খাবারে কথা উল্লেখ করা হলো এসব খাবার খেলে আলসার রোগীর সুস্থ থাকে। এবং খুব তাড়াতাড়ি রোগ থেকে মুক্তি পায়।
আলসার হলে কি খাব না
আলসার রোগীদের খাদ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। কারণ, আলসার রোগটি পাকস্থলীর। এই কারণে খাবারের সমস্যা হলে আলসার এর সমস্যা বেড়ে যায়। তাই কিছু কিছু খাদ্য খাদ্য তালিকা থেকে বাদ রাখতে হয়। চলুন জেনে নেই আলসার হলে কি খাব না:
- কফি
- ঝাল যুক্ত খাবার
- লাল মাংস
- দুধ ও দুগ্ধ জাত খাবার
- অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার
- বাইরের ভাজাপোড়া খাবার
আলসার কত দিনে ভালো হয়
আলসার রোগ সম্পর্কে আমরা কম বেশি সকলেই জানি। এই রোগটি হয় পাকস্থলীতে। এই রোগ হলে আমরা সহজে বুঝতে পারি না। কারণ, আমরা মনে করি গ্যাস্টিক হয়েছে। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন করতে করতে আলসার বড় আকার ধারণ করে ফেলে। এর জন্য রোগী হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
আলসার রোগ প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে খুব সহজেই এবং খুব কম সময়ে ভালো করা সম্ভব। যদি আলসার রোগ বড় আকার ধারণ করে তাহলে অপারেশন করতে হয়। এই জন্য অনেক সময় লাগে।
তবে সাধারণভাবে চিকিৎসা করলে ২০ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ভালো করা সম্ভব। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।
আলসারের ঔষধ কতদিন খেতে হয়
আলসার রোগ হলে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কারণ রোগী কোন ধরনের খাবার খেতে পারে না। এই কারণে রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। শরীরে রক্তের ঘাটতি দেখা যায়। আলসার রোগের লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
তাহলেই খুব কম সময়ের মধ্যে আলসার ভালো করা সম্ভব। অনেকেই প্রশ্ন করে, আলসারের ঔষধ কতদিন খেতে হয়। পালসারের ওষুধ কতদিন খেতে হয় সেটা সঠিক করে বলা যায় না। কারণ, ডাক্তার যতদিন খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন ঠিক ততদিনই খেতে হয়।
শেষ কথা: গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায়
বর্তমান সময়ে শতকরা ৭% মানুষের আলসার এর সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যাটি হয় বিশেষ করে খাদ্য অভ্যাসের কারণে। সঠিক সময় সঠিক খাবার না খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রিক হয়। এই গ্যাস্ট্রিকের কারণে পাকস্থলীতে ক্ষতস্থানে সৃষ্টি হয়। এইভাবে গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়।
গ্যাস্টিক আলসার থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে সঠিক খাদ্য তালিকা। এবং মাঝে মাঝে পাকস্থলীর চেকআপ করা। এবং যেসব খাবার খেলে গ্যাসটিক হয় ওইসব খাওয়ার খাওয়া থেকে বিরত থাকা। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ