ওসিডি একটি মানসিক রোগ। ওসিডি রোগটি হলে মানুষ একই চিন্তা, কোন ছবি বা ইচ্ছা মনের মধ্যে বারবার ঘুরপাক খায়। এ সময় রোগী বুঝতে পারে তারই সব চিন্তা অমূলক, অর্থহীন ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত। তবুও রোগী চিন্তা বা ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
আপনি কি জানেন, ওসিডি রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয়? না জানলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। মানসিক রোগের মধ্যে অন্যতম একটি রোগ হচ্ছে ওসিডি বা শুচিবায়ু। নিম্নের, ওসিডি রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয়? বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ও সি ডি কি?
ও সি ডি (OCD) একটি রোগের নাম। এর পূর্ণর Obsessive Compulsive Disorder। এই রোগটি ১০০ জনের মধ্যে প্রায় দুইজনের মধ্যে দেখা যায়। ওসিডি রোগটিকে সাধারণত শুচিবায়ু রোগ নামে আমরা চিনি। এ রোগ হলে মানুষ সব একই চিন্তা নিয়ে মশগুল থাকে। ইচ্ছা করলেও সেই কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে না।
ওসিডি রোগ কেন হয়?
ওসিডি রোগ দিবে না কারনে হয়ে থাকে। ওসিডি রোগ কেন হয়? নিম্ন তুলে ধরা হলো:
- পরিবারের কারো ওসিডি রোগ থাকলে সে ক্ষেত্রে পরবর্তী প্রজন্মের ওসিডি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- অতিরিক্ত মদ্যপান বা উত্তেজক পদার্থ গ্রহণ করলে ওসিডি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- সেরোটোনিন বা ডোপামিনের তারতম্যের ঠিক না থাকলে ওসিডি রোগ হয়ে থাকে।
- কোন বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করলে ওসিডি বা শুচিবায়ু হয়।
- কিছু মানসিক রোগের লক্ষণ হিসেবে ওসিডি ও হতে পারে। যেমন: সিজোফ্রেনিয়া রোগ।
- মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত বলে ওসিডি রোগ হতে পারে। যেমন: সন্তান জন্মদান বা সন্তান মৃত্যুর কারণে, প্রেমে ব্যর্থ হলে।
ওসিডি রোগের লক্ষণ:
ওসিডি মানসিক রোগ। ওসিডি রোগের কিছু লক্ষণ রয়েছে। নিম্নে, ওসিডি রোগের লক্ষণ গুলো তুলে ধরা হলো:
- ওই কাজ বারবার করে।
- সব সময় অতিরিক্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে।
- যৌনতা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভট চিন্তাভাবনা করে।
- সব সময় মানসিকভাবে চিন্তায় থাকে।
- জিনিস মনের মত করতে পারেনা। যার কারণে সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকে।
কিভাবে OCD থেকে মুক্তি পাবেন?
- সর্বপ্রথম মানসিক ডাক্তারকে দেখাতে হবে।
- যেহেতু ওসিডি একটি মানসিক রোগ। তাই নিজেকে সবসময় ব্যস্ত রাখতে হবে।
- সব সময় মানুষের মধ্যে থাকার চেষ্টা করতে হবে। এতে করে মানসিক চিন্তা দূর হবে।
- প্রথমে অতিরিক্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা দূর করতে হবে।
- ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
ওসিডি কিভাবে আপনার চিন্তা প্রভাবিত করে:
ওসিডি একটি মানসিক রোগ। এই রোগটি হলে রোগী সবসময় চিন্তায় বিভোর থাকে। সঠিক কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এর কারণে, ওসিডি হলে চিন্তার ওপর প্রভাব পড়ে। রোগী সব সময় নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সব সময় কাজ নেই ব্যস্ত থাকে।
আরও পড়ুনঃ ব্রেন স্ট্রোক হলে কি হয়
ওসিডি রোগটি হলে মানুষ সব সময় একই জিনিস নিয়ে ভাবে। সে ইচ্ছা করলেও সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। যদি কোন কাজ শুরু করে তাহলে ওই কাজ বারবার করে। যদি হাত পা পরিষ্কার করতে লাগে তাহলে করতেই থাকে। এবং রোগী চাইলেও সেই কাজ বন্ধ করতে পারে না।
ওসিডি রোগ মানুষের চিন্তা শক্তি কমে যায়। নির্দিষ্ট কিছু গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এই সমস্যা গুলো হয় মানসিকভাবে কোন ধরনের আঘাতপ্রাপ্ত হলে। এ কারণে এসব রোগীকে সব সময় দেখে শুনে রাখতে হয়।
ওসিডি কতদিন থাকে:
ওসিডি একটি মানসিক রোগ। এর রোগ হলে সহজে পরিবারের লোক বুঝতে পারে না। কারণ তারা চলাফেরা সবকিছু সাধারণ মানুষের সাথে মতোই করে। কিন্তু নিজে নিজেই নির্দিষ্ট কিছু চিন্তা ভাবনার মধ্যেই আটকে থাকে। সেটা সে কাউকে বুঝতে দেয় না নিজেও সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না।
এই সমস্যাটি পরিবারের মানুষের জানতে অনেকদিন সময় লেগে যায়। তবে অনেকের মাঝে এক বছরের মধ্যে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যদি ওসিডি আক্রান্ত হওয়ার এক বছরের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা যায় তাহলে সহজে ভালো করা যায়। যদি ওসিডি আক্রান্ত সময় ৬ থেকে ১০ বছর পার হয়ে যায়।
তাহলে রোগীর তাড়াতাড়ি ভালো করা যায় না। এই অবস্থায় রোগীকে ভালো করতে প্রায় এক বছরের মত সময় লেগে যায়। তবে এই রোগের চিকিৎসা না করলে কখনোই ভালো হয় না।
ওসিডি কি ভাল হয়: ওসিডি রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয়?
অনেকেই জানতে চাই, ওসিডি কি ভাল হয়। ওসিডি হলে রোগী নিজেও বুঝতে পারে না। যার কারনে ডাক্তারের কাছে যেতে সময় লেগে যায়। এ কারণে চিকিৎসা করতে অনেকদিন সময় লেগে যায়।
তবে চিকিৎসা করলে ও সি ডি রোগ সহজেই ভালো হয়ে যায়। এর জন্য রোগীকে নির্দিষ্ট কিছু নিয়মের মধ্যে চলাফেরা করতে হয়।
ওসিডি রোগের চিকিৎসা:
ওসিডি বা সুচিবায়ু একটি মানসিক রোগ। এই রোগ হলে রোগী নির্দিষ্ট মানুষের ছবি এবং নির্দিষ্ট চিন্তা ভাবনা বিভোর থাকে। রোগী বুঝতে পারলেও সেখান থেকে ফিরে আসতে পারে না। এই সমস্যাটি হলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। এই রোগের চিকিৎসা নিতে হয় মানসিক ডাক্তারের কাছে।
রোগাক্রান্তর এক বছরের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করলে খুব সহজেই ভালো হয়ে যায়। আর চিকিৎসা শুরু করতে যদি দেরি হয়ে যায় তাহলে প্রায় এক বছরের মত সময় লেগে যায়।
তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করলে ওসিডি রোগ নিরাময় করা সম্ভব। তার জন্য রোগীকে নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে।
ওসিডি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয়:
ও সিডি রোগ সম্পর্কে আমরা ইতিপূর্বে ধারণা পেয়েছি। তবে, ওসিডি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয়। সে সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণা নেই। ওসিডি মানসিক রোগ। যা সম্পূর্ণ মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
এই রোগটি হলে রোগী নিজেও বুঝতে পারে না। যার কারণে চিকিৎসকের কাছে যেতে অনেক সময় লেগে যায়। চিকিৎসকের কাছে যে সময় যাওয়া হয়। সেই সময় রোগী সম্পূর্ণভাবে মানসিক রোগী হয়ে যায়।
সেই সময় রোগী কি করে নিজেও বুঝতে পারে না। যার কারণে এই রোগের চিকিৎসা করতে অনেক সময় লেগে যায়। ওডিসি রোগের ওষুধ ৬ মাস থেকে ১ বছর খেতে হয়। তবে ওষুধ খাওয়ার পর রোগী যদি তাড়াতাড়ি ভালো হতে শুরু করে, তাহলে ছয় মাসের মত ওষুধ খেলে ভালো হয়ে যায়।
আর যদি ছয় মাস হওয়ার পর সম্পূর্ণ ভালো না হয় তাহলে ১ বছর খেতে হয়। যদি রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ না হয়ে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে তাহলে রোগী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারে।
ওসিডি কি সবচেয়ে খারাপ মানসিক রোগ
ওসিডি কি সবচেয়ে খারাপ মানসিক রোগ, অনেকেই জানতে চাই। ওসিডি রোগ হলে রোগী ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে খুব সচেতন থাকে। সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, নিজের ঘর, নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অপ্রয়োজনীয় কাজ বারবার করতে থাকে। রোগী নিজের অজান্তেই এসব কাজ করে থাকে।
সবসময় নিজেকে মানুষের কাছ থেকে দূরে রাখতে পছন্দ করে। এই রোগটি একটি ভয়াবহ মানসিক রোগ। সঠিক সময় রোগের চিকিৎসা না করলে আস্তে আস্তে রোগী পাগল হয়ে যেতে পারে। তবে চিন্তার কোন বিষয় নেই এই রোগের সঠিক সময় চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যায়।
ওসিডি কি স্থায়ীভাবে নিরাময় করা যায়
বর্তমান সময়ে ১০০ জন মানুষের মধ্যে প্রায় দুইজনার ওসিডি বা শুচিবায়ু রোগ হয়ে থাকে। এই রোগে বেশিরভাগ নারীরা আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে ওসিডি রোগের চিকিৎসা করলে তাই ভাবে নিরময় করা যায়। তবে ওসিডি রোগ হলে ঔষধ কতদিন খেতে হয়? সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে।
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। এবং রোগীকে সবসময় মানুষের সাথে রাখতে হবে। কারণ রোগীর একা থাকলে নিজের চিন্তায় বিভোর থাকে। যার কারণে রোগী মানসিক ভাবে বেশি ঝুঁকিতে পড়ে। তবে সঠিকভাবে চিকিৎসা করলে ওসিডি স্থায়ী ভাবে নিরাময় করা যায়।
ওসিডি হলে কি গর্ভবতী হওয়া যায়?
ওডিসি হলে কি গর্ভবতী হওয়া যায়? অনেকেই প্রশ্ন করে। হ্যাঁ হওয়া যায়। কারণ রোগীর স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে। কিন্তু তার ফলাফের এর মধ্যে কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন সব সময় একই কাজ করতে থাকে। একা একা থাকতে পছন্দ করে। তবে ওসিডি হলেও গর্ভবতী হওয়া যায়।
ওডিসি রোগের বাচ্চা হলে তারও এই মানসিক সমস্যা হতে পারে। কারণ অনেক সময় বংশগত কারণে ওসিডি হয়ে থাকে। এই কারণে ওডিসি আক্রান্ত রোগীর বাচ্চা না নেওয়ায় ভালো। তবে বাচ্চা নিলে শারীরিকভাবে বাচ্চার কোন সমস্যা হবে না। সঠিক চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যাবে।
ওসিডি কি মা বা বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়:
অনেকে প্রশ্ন করে, ওসিডি কি মা বা বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়। হ্যাঁ হয়। ওসিডি রোগের আক্রান্ত কারণের মধ্যে বাবা-মা ও পড়ে। অনেক সময় বংশের কারো ওসিডি থাকলে নিজের হওয়া সম্ভাবনা থাকে। তবে মা-বাবা থাকলেই সে সন্তানের হবে এর কোন সঠিক শক্তি নেই।
আরও পড়ুনঃ ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগতে কতদিন সময় লাগে
বেশিরভাগ সময় মা-বাবা থেকেই ওডিসি হয়ে থাকে। এছাড়াও মানসিকভাবে কোন ধরনের আঘাত পেলে ওডিসি রোগ হয়। তবে সঠিক সময় চিগিৎসা নিলে খুব সহজে ভালো হয়ে যায়।
ওসিডি থেকে মুক্তির দোয়া:
ওসিডি থেকে মুক্তির দোয়া রেয়েছে। ইসলাম একটি সম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। সকল কিছুর সমধ্যান রয়েছে ইসলাম র্ধমে। ইসলাম ধর্মের গ্রন্থের নাম কোরআন মাজীদ। কোরআন মাজিদে সম্পন্ন জীবন ব্যবস্থা তুলে ধরার হয়েছে। কিছু আয়াত রয়েছে যেগুলো পাঠ করলে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
নিম্নে, ওসিডি বা মানসিক রোগ থেকে মুক্তির দোয়া তুলে ধরা হলো:
اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ مِمَّا عِنْدَكَ، وَأَفِضْ عَلَىَّ مِنْ فَضْلِكَ، وَانْشُرْ عَلَىَّ رَحْمَتَكَ، وَأَنْزِلْ عَلَىَّ مِنْ بَرَكَاتِكَ.
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিমমা ইনদাকা ওয়া আফিজ আলাইয়্যা মিন ফাদলিকা ওয়াংশুর আলাইয়্যা রহমাতাকা ওয়া আনজিল আলাইয়্যা বারাকাতিকা।
বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! তোমর কাছে যা আছে তাই তোমার কাছে থেকে চাই। তোমার অনুগ্রহের ধারা আমার দিকে প্রবাহিত করো এবং তোমার রহমতের একটু ছায়া আমার উপর বর্ষণ করো আর তোমার বরকত থেকে কিছু খানি আমার প্রতি নাজিল করো।
মানসিক রোগের ঔষধের নাম:
ওডিসি বা মানসিক রোগের ওষুধের নাম জানা প্রয়োজন। তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মানসিক রোগের ওষুধ খেতে হয়। কারণ, মানসিক রোগের চিকিৎসার একটু ভুল হলে রোগীর সম্পূর্ণভাবে পাগল হয়ে যেতে পারে। নিম্নে মানসিক রোগের ওষুধের নাম তুলে ধরা হলো:
- Qupex 200 MG
- Oxat 20 Tablet
- Residon 2 Tablet
- Deprex 5 Tablet
- Nexcital 10 Tablet
- Oxapro 10 Tablet
উপরের ওষুধগুলো মানসিক রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে ডাক্তার পরামর্শ ছাড়াই সব ওষুধ খাওয়া যাবে না। এবং কোন ফার্মেসী আপনাকে প্রেসক্রিপশন ছাড়া দেবে না।
শেষ কথা: ওসিডি রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয়?
ওসিডি একটি মানসিক রোগ। এর রোগ সাধারণত মানুষ কোন ধরনের আঘাত পেলে হয়ে থাকে। এ রোগটি হলে রোগী সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। একই কাজ বারবার করে। তবে সঠিক সময় চিকিৎসা করলে ওসিডি রোগ ভালো হয়ে যায়।
তবে এর জন্য, ওসিডি রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয়? সেটা জানা অত্যন্ত জরুরী। তাহলে খুব সহজেই রোগ নিরাময় করা যায়। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ