সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যায়

বর্তমানে প্রচলিত একটি ভাষা সিজার। প্রায় প্রতিটি সন্তানের জন্ম হচ্ছে সিজারিয়ানের মাধ্যমে। এখন প্রায় নরমাল ডেলিভারি দেখাই যায় না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা। মানুষ  গর্ভবতী অবস্থায় অনেক ভয়ে থাকে।

সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যায়

এই সময় কোন সমস্যা হলে মা ও শিশুর প্রাণ যেতে পারে। এই কারণে মানুষ সিজারিয়ান পথ বেছে নিচ্ছে। এছাড়াও প্রাইভেট হসপিটাল গুলোতে গেলে তারা সিজারিয়ানের পরামর্শ দিয়ে থাকে। সিজারিয়ান সেকশন অর্থাৎ অস্ত্র পাচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম হলে মা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।

এবং ভারী কোন কাজ করতে পারে না। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যায়। সিজারের পর ভারী কাজ করা নিজের সুস্থতার উপর নির্ভর করে। সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা হওয়ার ফলে মায়ের পেটের ক্ষতের সৃষ্টি হয়। 

এই ক্ষত ভালো হতে অনেকদিন সময় লাগে। এবং অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। ভারী কোন কাজ করা যায় না। অনেকদিন যাবত সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হয়। নিম্নে আলোচনা করা হলো, সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যায় সেই সম্পর্কে।

    সিজার  কি?

    সিজারিয়ান সেকশন (Caesarean section) যা  (C-section)  সি-সেকশন বা (Caesar) সিজার  নামেও পরিচিত। সিজার শব্দটি সকলের কাছে পরিচিত। বর্তমানে বাচ্চা হওয়ার জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। সিজার হচ্ছে, গর্ভবতী মায়ের পেট কেটে বাচ্চা বের করা। 

    এতে করে মায়েদের প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় না। খুব সহজে ডাক্তারেরা সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা উঠিয়ে নেই। এই পদ্ধতিতে বাচ্চা হলে বাচ্চার কোন আঘাত লাগে না। তবে এই পদ্ধতিতে বাচ্চা হলে মায়ের অনেক সমস্যা হয়ে থাকে।

    সিজার করলে কি কি সমস্যা হতে পারে?

    বাচ্চা হওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হচ্ছে সিজার পদ্ধতি। বর্তমান সময়ে শতকরা ৯০ প্রয়োজন মেয়ের বাচ্চা হয় সিজার পদ্ধতিতে। এতে করে বাচ্চা খুব নিরাপদে হওয়া যায়। বাচ্চার মৃত্যুর কোন সম্ভাবনা থাকে না। 

    এই কারণে দিন দিন মানুষ সিজারিয়ান পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এই পদ্ধতিতে বাচ্চা হলে মাকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। সিজার করলে কি কি সমস্যা হতে পারে? নিম্নে তুলে ধরা হলো:

    1. পেটে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
    2. ডায়াবেটিস থাকলে ক্ষতস্থানে ইনফেকশন হতে পারে।
    3. অপারেশনে সমস্যা হলে রক্তক্ষরণ হয়। এতে করে শারীরিক ঝুঁকিতে পড়তে হয়।
    4. অনেক সময় সিজারের পর সেলাই ছুটে যায়। যার ফলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়।
    5. সিজার করার ফলে ভারী কাজ করা যায় না।
    6. অনেকদিন যাবত মাঝে মাঝে পেট ব্যথা করে।
    7. সিজারে বাচ্চা হওয়ার পর শারীরিকভাবে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
    8. স্বাভাবিক মানুষের মত কাজ করতে পারে না।
    সিজারের বাচ্চা হলে সাধারণত এসব সমস্যায় হয়ে থাকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব সমস্যা হয় না। শতকরা ২০ জন মানুষের এগুলো সমস্যা হয়ে থাকে।

    সিজারের পর সুস্থ হতে কত দিন লাগে?

    এখন বাচ্চা হওয়ার আগে ধরে নিতে হয় সিজার করতে হবে। কারণ নরমালে বাচ্চা হতে অনেক ব্যাথা সহ্য করতে হয়। এবং কোন জটিলতা দেখা দিলে বাচ্চার মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। এসব কারণে মানুষ আর ঝুঁকি নিতে চায় না। 

    এ কারণে বাচ্চা হওয়ার জন্য বিভিন্ন ক্লিনিক বা হাসপাতালে আগে ভর্তি হয়ে যায়। সেখানে কোন ধরনের সমস্যা হওয়ার সাথে সাথে সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা হয়। সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা হওয়ার ফলে মাকে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

    আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় সালোয়ার পড়ার নিয়ম

    সিজার পদ্ধতির মাধ্যমে বাচ্চা হওয়ার ফলে পেটে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই ক্ষত ভালো হতে প্রায় এক মাসের মত সময় লাগে। তাও সঠিকভাবে ভালো হয় না। ভারী কোন কাজ করলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। সাধারণভাবে ভালো হতে প্রায় এক মাস থেকে দুই মাস সময় লাগে। 

    এই সময়টা নির্ভর করে  শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর। যাদের ডায়াবেটিস থাকে তাদের সিজারে বাচ্চা হলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ ডায়াবেটিস থাকবে ক্ষত তাড়াতাড়ি সারেনা।

    সিজারিয়ান জন্মের প্রধান ঝুঁকি বা জটিলতা কি?

    সিজারিয়ান পদ্ধতিতে বাচ্চা হওয়া সাধারণ ব্যাপার। এখন বাচ্চা হলে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে হচ্ছে। বর্তমানে এটা একটি সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে। কেউ আর কোন ধরনের ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। কিন্তু সিজার করে বাচ্চা হওয়ার ফলে বাচ্চার বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সুখের সৃষ্টি হয়। 

    সিজার করে বাচ্চা হওয়ার ফলে বাচ্চার বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি ও জটিলতার সৃষ্টি হয়। নিম্নে, সিজারিয়ান জন্মের প্রধান ঝুঁকি বা জটিলতা কি? তুলে ধরা হলো
    1. সিজারে বাচ্চা হওয়ার ফলে বাচ্চা অপরিণত হয়। কারণ, অনেক সময় সময়ের আগে বাচ্চা হওয়ানো হয়।
    2. বাচ্চা শ্বাসকষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
    3. বাচ্চার ওজন ও আকার ছোট হয়।
    4. বাচ্চা শরীরে ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে।
    5. চোখ ছোট থাকে।
    সাধারণত এইসব সমস্যা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। কারণ সিজার করে বাচ্চা হওয়ানোর ফলে বাচ্চা অপরিপূর্ণ হয়ে থাকে। বেশিরভাগ সময় বাচ্চা প্রসবের সময়ের আগে সিজার করা হয়। এসব কারণে বাচ্চার শারীরিক সমস্যা হয়। এবং সিজার করার ফলে রক্তের কারণে বাচ্চা শরীরে ইনফেকশনের সৃষ্টি হয়।

    সিজারের পর রক্তক্ষরণের কারণ:

    সিজারে বাচ্চা হওয়ার ফলে মায়ের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ঝুঁকি থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম হচ্ছে রক্তক্ষরণ। বিশেষ করে রক্তক্ষরণ সমস্যাটি বেশি দেখা যায় সিজার করে বাচ্চা হলে। এই সমস্যাটি হয় বিভিন্ন কারণে। নিম্নে, সিজারের পর রক্তক্ষরণের কারণ গুলো তুলে ধরা হলো:

    1. রক্তের নালীগুলো ছিঁড়ে যাওয়া
    2.  সেলাইয়ের সমস্যা হলে
    3. ক্ষতস্থানে আঘাত লাগলে
    4. শারীরিক জটিলতা থাকলে

    রক্তের নালীগুলো ছিঁড়ে যাওয়া:

    সিজার করে বাচ্চা হওয়ার সময় পেট কাটতে হয়। এবং সেখান থেকে বাচ্চাদের বের করে নেওয়া হয়। এই সময় পেটের টিস্যু এবং রক্তনালী গুলো কেটে যায়। যার ফলে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে।

    সেলাইয়ের সমস্যা হলে:

    সিজারে বাচ্চা হওয়ালে পেট কাটতে হয়। যার ফলে সেখানে শিলায় যেতে হয়। সেলাইয়ের যদি কোন ধরনের সমস্যা হয় তাহলে সেলাইয়ের পাশ দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে।

    ক্ষতস্থানে আঘাত লাগলে:

    সিজার করার ফলে ক্ষতস্থানের সৃষ্টি হয়। কোন কাজ করতে বা হাটা চলাফেরা করতে যদি সিজারের স্থানে আঘাত লাগে তাহলে রক্তপাত হয়ে থাকে। এ কারণে ক্ষতস্থান শুকানো পর্যন্ত সতর্ক হবে চলাফেরা করতে হবে।

    শারীরিক জটিলতা থাকলে:

    শারীরিকভাবে অনেকের জটিলতা থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের রোগ থাকে। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে পরিচিত একটি রোগ হয়েছে ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস থাকলে সহজে ক্ষতস্থান সুখাই না। সেখানে অনেক ধরনের ইনফেকশন হওয়া সম্ভাবনা থাকবে। এসব কারণেও রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে।

    সিজার সর্বোচ্চ কতবার করা নিরাপদ?

    প্রথম বাচ্চা যদি সিজার এর মাধ্যমে হয়ে থাকে, তাহলে দ্বিতীয় বাচ্চাটি সিজারের মাধ্যমে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই কারণে দুইটা বেশি বাচ্চা নেওয়া ঠিক নয়। সিজার সর্বোচ্চ কতবার করা নিরাপদ সেই সম্পর্কে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডা. দীনা লায়লা হোসেন।

    আরও পড়ুনঃ প্রেগনেন্ট বা গর্ভাবস্থায় কমলা খাওয়ার উপকারিতা

    তিনি বলেন যদি আপনার বাচ্চার কোন সমস্যা না হয় তাহলে দুইটার বেশি বাচ্চা নেওয়া ঠিক নয়। তবে আপনার যদি বাচ্চার কোন ধরনের সমস্যা হয় অথবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছেন তাহলে তিন, চার কিংবা পাঁচবার পর্যন্ত সিজার করা যায়।

    তবে দুইবারের বেশি বাচ্চা নিয়ে মায়ের শারীরিকভাবে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। কারণ সিজারে বাচ্চা হওয়ার ফলে পেট কাটতে হয়। সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়বার বাচ্চা নিলে জরায়ু বৃদ্ধি পায়। এর সাথে সাথে পেট বড় হয়ে যায়। যার ফলে পূর্বের ক্ষতস্থানে টান লাগে। 

    এতে করে গর্ভবতী মায়ের সমস্যার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও একবার সিজার করে বাচ্চা হবে দ্বিতীয়বার নরমালে হওয়া সম্ভব না খুবই কম থাকে। দ্বিতীয় বার সিজার করার ফলে সমস্যা বৃদ্ধি পায়।

    এই কারণে সিজার করে দুইটা বাচ্চা হলে তিনটা না নেওয়া ভালো। যাতে করে বাচ্চা ও মায়ের জীবনের ঝুঁকে থাকে। তবে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে থাকে। তাই সিজারের মাধ্যমে ২ টার বেশি বাচ্চা নেওয়া ঠিক না।

    সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যায়:

    সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা হলে পেটে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই ক্ষতস্থান জোড়া লাগতে সময় লাগে ৪৫ দিন। তারপর থেকেই স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবেন। তবে ভারী কাজ করতে পারবেন তিন মাস পর থেকে। ৩ মাস পর ক্ষতস্থান ভালোভাবে শুকিয়ে যায়। এবং কোন ধরনের সমস্যা থাকে না। 

    ৩ মাস পর থেকে স্বাভাবিকভাবে ভারী কাজগুলো করতে পারবে। তবে আপনি যদি দৌড়াদৌড়ি বা ভার উত্তোলন ব্যায়াম করেন তাহলে সমস্যা হতে পারে। সকল ধরনের কাজ করতে হলে ৬ মাস দেরি করতে হবে। ছয় মাস পর থেকে সকল ধরনের ভারী কাজ করতে পারবে।

    সিজারের কতদিন পর আমি ১০ পাউন্ডের বেশি ওজন তুলতে পারি:

    অনেকেই প্রশ্ন করে, সিজারের কতদিন পর আমি ১০ পাউন্ডের বেশি ওজন তুলতে পারি। সিজার করা হয় পেটে। এবং কোন ধরনের ভারী জিনিস তুলে মাজা ও পেটে চাপ পড়ে। এই কারণে সিজার করার সম্পর্ক ভারী কোন জিনিস তুলা যায় না। 

    সিজার করার পরে পেটে সেলাই দেওয়া হয় পেটের সেলাই কাটা হয় প্রায় ১০ থেকে ১৫ দিন পর। সেই সময় ঠিকমতো হাঁটাচলা করতেও সমস্যা হয়। স্বাভাবিকভাবে পেটের ক্ষত ভালো হতে সময় লাগে ৪৫ দিন। ৪৫ দিন বা দেড় মাস পর থেকে ১০ পাউন্ডের বেশি ওজন তুলতে পারবেন। তাতে কোন ধরনের সমস্যা হবে না।

    সিজার না নরমাল ডেলিভারি ভালো:

    অনেকেই মনে পড়ে সিজার করলে ভালো। সিজার করলে প্রসব ব্যথা সহ্য করতে হয় না। এইসব কারণে সবাই মনে করে সিজার করে বাচ্চা হওয়ানো ভালো। কিন্তু এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ নরমাল ডেলিভারি হলে কোন ধরনের ক্ষদের সৃষ্টি হয় না। 

    মা বাচ্চা হওয়ার পর থেকে সঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারে। কোন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হয় না। এবং বাচ্চা পরিপুষ্ট ভাবে জন্মগ্রহণ করে। বাচ্চার কোন ধরনের শারীরিক সমস্যা থাকে না। এই কারণে, সিজার এর তুলনায় নরমাল ডেলিভারি অনেক ভালো। নরমাল ডেলিভারি হয় প্রকৃতিকভাবে। আর প্রকৃতির সবকিছুই ভালো হয়। 

    শেষ কথা: সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যায়

    মাতৃত্ব একজন মেয়ের জীবনে আনে পরিপূর্ণতা। প্রত্যেক মা চাই তার সন্তান যেন নিরাপদে পৃথিবীর আলো দেখে। এই কারণে সকল ধরনের বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে সিজারের মাধ্যমে বাচ্চার জন্ম দেয়।সিজার করার ফলে মা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। 

    অনেকদিন যাবত সঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না। এবং ভারী কোন কাজ করতে পারে না। ভারী কোন কাজ করলে শারীরিকভাবে অনেক সমস্যা হয়। বিশেষ করে পেটে ব্যথা হয়। কারণ সিজার করলে পেট কাটতে হয়। 

    এই কাঁটা স্থানে কোন ধরনের ভারী কাজ করলে ব্যথা লাগে, তাই সাবধানে কাজ করতে হয়। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ