সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

 সিটি ব্যাংক বাংলাদেশের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এই ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করে ১৯৮৩ সালে। তারপর থেকে সাধারণ মানুষদের আর্থিক সেবা প্রদান করা যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে সিটি ব্যাংক সকলের কাছে পরিচিত। এবং সকলের কাছে বিশ্বস্ত হয়ে উঠেছে। সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম। 

সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

এই বিষয়ে জানার অনেকের আগ্রহ রয়েছে। কারণ, অনেকেই চাই সিটি ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে। এবং কি কি ধরনের অ্যাকাউন্ট করা যায় সেই সম্পর্কে জানতে। আজ আমি আলোচনা করব, সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে। সিটি ব্যাংক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ুন।

সিটি ব্যাংক কত সালে প্রতিষ্ঠিত?

বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক চিঠি ব্যাংক। প্রথম অবস্থায় তাদের নাম ছিল দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড। সিটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৩ সালের ২৭শে মার্চ। পর্ব প্রথম সিটি ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম।

ব্যাংক একাউন্টে সর্বনিম্ন কত টাকা রাখা যায়?

ব্যাংক একাউন্টে সর্বনিম্ন কত টাকা রাখা যায়? অনেকেই জানে না। কোন ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে হলে সর্বপ্রথম কিছু টাকা জমা রাখতে হয়। কোন ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে হলে, সেই একাউন্টে কিছু পরিমাণ টাকা রাখতে হয়। একাউন্ট চালু রাখার জন্য। 

ব্যাংক একাউন্টে সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা রাখা যায়। এই টাকা না রাখলে ব্যাংক আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে পারে। এইসব কারণে সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা রাখা হয়। যাতে যে কোন সময় আপনি একাউন্টে টাকা রাখতে পারেন।

সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম:

বাংলাদেশের সকল ব্যাংকের মতোই সিটি ব্যাংকের একাউন্ট খোলার নিয়ম। সিটি ব্যাংক একাউন্ট করতে হলে সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর হতে হবে। এবং যার নামে একাউন্ট হবে তার তথ্য জানার জন্য কিছু কাগজপত্র দিতে হবে। এবং একজন নমিনি করতে হবে।

যে ব্যাক্তি নমিনি হবে তারও কিছু কাগজপত্র দিতে হবে। এসব প্রক্রিয়া অবলম্বন করে সিটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হয়। সিটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খুলতে কি কি কাগজ লাগে নিম্নে তুলে ধরা হলো। 

সিটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি প্রয়োজন?

সিটি ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন পড়ে। নিম্নে, সিটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি প্রয়োজন? তুলে ধরা হলো:
  1. যার নামে একাউন্ট হবে তার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
  2. চেয়ারম্যান কর্তৃক নাগরিকত্ব।
  3. দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
  4. নমিনির জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
  5. নমিনির চেয়ারম্যান কর্তৃক নাগরিকত্ব।
  6. নমিনির পাসপোর্ট সাইজ এক কপি ছবি।
  7. আয়ের উৎসের এক কপি নথি।

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে?

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে অনেকেই জানতে চাই। ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কোন টাকা লাগে না। তবে একাউন্ট চালু করার জন্য কিছু টাকা রাখতে হয়। সেই টাকা আপনি পরবর্তীতে উঠাতে পারবেন। ব্যাংক একাউন্ট খুলতে সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা লাগে।

সিটি ব্যাংক একাউন্ট সুবিধা: সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম 

বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যাংকের মতো সিটি ব্যাংক। এরা সকল ব্যাংকের মতোই সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে।নিম্নে, সিটি ব্যাংক একাউন্ট সুবিধা গুলো তুলে ধরা হলো:
  1. চেকবুকের সুবিধা পাওয়া যায়।
  2. সহজে নগদ টাকা উত্তোলন করা যায়।
  3. বর্তমানে ডেবিট কার্ড সুবিধা রয়েছে কেনাকাটার জন্য।
  4. সিটি মেক্স কার্ডের সাহায্যে খরচের টাকা ক্যাশব্যাক করা যায়।
  5. টাকা এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় পাঠানো যায়।
  6. লোন নেওয়া যায়।
  7. অফলাইন এবং অনলাইন দুই ভাবে সেবা পাওয়া যায়।

সিটি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং:

বর্তমান সময়ে সিটি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে। এটা একটি ডিজিটাল এবং আধুনিক ব্যাংকিং সেবা। যারা এই সেবার আওতায় রয়েছে তারা মোবাইলের মাধ্যমে সকল ধরনের সেবা পাবেন। এর জন্য ব্যাংকের কোন এজেন্টের সাথে কথা বলতে হবে না।

তারা মোবাইল থেকে অ্যাকাউন্ট নাম্বার ও টেলিফোন আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (Telephone Identification Number-TPIN) (টিপিন) প্রদান করে একাউন্টে সকল কিছু চেক করতে পারবে। এবং বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবা মোবাইলের মাধ্যমে নিতে পারবে। এছাড়াও সার্ভিসের জন্য কোন ধরনের সার্ভিস ফি দিতে হয় না।

সিটি ব্যাংক একাউন্ট চার্জ: 

সিটি ব্যাংকের একাউন্টের কিছু নিয়ম রয়েছে। যদি চলতি অ্যাকাউন্ট করা হয় তাহলে আপনার অ্যাকাউন্ট চার্জ দিতে হয়। যদি আপনার একাউন্টে ৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা থাকে তাহলে বছর  আপনাকে ১০০ টাকা দিতে হবে।

আর যদি আপনার একাউন্টে ২৫ হাজার টাকা থেকে যদি বেশি থাকে তাহলে বছর শেষে ৩০০ টাকা প্রদান করতে হবে। অন্য একাউন্ট এর চার্জ দিতে হয় না। কারণ ওইসব একাউন্ট এর টাকা সুদে খাটে। এ কারণে ওইসব অ্যাকাউন্ট থেকে সুদ পাওয়া যায়।

সিটি ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট সুবিধা:

অন্যান্য সকল ব্যাংকের মতো সিটি ব্যাংকেও সেভিংস একাউন্ট খোলা যায়। সেভিংস একাউন্ট খুললে খুব সহজেই টাকা জমানো যায়। অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় সিটি ব্যাংকের সুদের হার একটু বেশি। সিটি ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট সুবিধা নিম্ন তুলে ধরা হলো:
  1. যেকোনো অ্যামাউন্ট এর টাকা জমানো যায়।
  2. প্রতি মাসে হিসাব করে সুদের টাকা উঠানো যায়।
  3. তিন বছর থেকে শুরু করে যেকোনো সময়ের জন্য সেভিংস একাউন্ট খোলা যায়।
  4. সেভিংস একাউন্ট এর সুদের টাকা কার্ডের মাধ্যমে উঠানো যায়।
  5. কোন ধরনের সমস্যা হলে সেটিংস একাউন্টের টাকা উঠিয়ে নেওয়া যায়।
  6. তবে সে ক্ষেত্রে সুদের হার কম পাওয়া যায়।
  7. একাউন্টের মালিক মারা গেলে নমিনি টাকা উঠিয়ে নিতে পারে।

সিটি ব্যাংক একাউন্ট চেক করার নিয়ম:

সিটি ব্যাংক একাউন্ট চেক করার নিয়ম অন্য ব্যাংকের মতোই। সিটি ব্যাংকের যেকোনো ব্রাঞ্চে গিয়ে আপনার অ্যাকাউন্ট নাম্বার দিয়ে একাউন্ট চেক করতে পারবেন। এছাড়াও বর্তমানে সিটি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে। যাদের মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট রয়েছে তারা ঘরে বসে মোবাইলের সাহায্যে অ্যাকাউন্ট চেক করে নিতে পারবেন।

সিটি ব্যাংকের ব্যালেন্স চেক:

আমরা অনেক সময় ব্যাংকে টাকা রাখার পর ভুলে যায় কত টাকা আছে। যার জন্য ব্যালেন্স চেক করার প্রয়োজন পড়ে। সিটি ব্যাংকের ব্যালেন্স চেক করার জন্য ব্যাংকে যেতে হয়। আপনার অ্যাকাউন্ট নাম্বার দিলে তাহলে আপনাকে জানাবে আপনার একাউন্টে কত ব্যালেন্স রয়েছে।

এছাড়াও আপনার সিটি ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু থাকলে মোবাইলের মাধ্যমে ব্যালেন্স চেক করতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে অ্যাকাউন্ট নাম্বার দিতে হবে এবং আপনার পিন নাম্বার দিতে হবে। তাহলে আপনার অ্যাকাউন্ট লগিন হয়ে যাবে। তাহলে আপনি ব্যালেন্স চেক করতে পারবেন।

একাউন্ট নাম্বার দিয়ে কি ব্যালেন্স চেক করা যায়:

একাউন্ট নাম্বার দিয়ে কি ব্যালেন্স চেক করা যায় অনেকে জানতে চাই। অ্যাকাউন্ট নম্বর ছাড়া কোনোভাবেই আপনি ব্যালেন্স চেক করতে পারবেন না। কারণ প্রতিটা মানুষের অ্যাকাউন্ট নাম্বার আলাদা হয়ে থাকে। এই কারণে আপনার একাউন্ট নাম্বার দিয়েই আপনার  ব্যালেন্স চেক  করতে হবে।

একাউন্ট নাম্বার ছাড়া কোনোভাবেই আপনি ব্যালেন্স চেক করতে পারবেন না। কারণ, ব্যাংক আপনার অ্যাকাউন্ট নাম্বার ছাড়া আপনার একাউন্ট খুঁজেই পাবে না। আর আপনার অ্যাকাউন্ট না পেলে আপনার ব্যালেন্স চেক করবে কি করে।

সিটি ব্যাংক একাউন্ট কোনটি ভালো:

বাংলাদেশের প্রতিটি স্থানে সিটি ব্যাংকের শাখা রয়েছে। এই কারণে সকলের কাছে বিশ্বস্ত হয়ে উঠেছে। অনেকে জানতে চাই, সিটি ব্যাংক একাউন্ট কোনটি ভালো। সিটি ব্যাংকে অনেক ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। যেমন: সেভিংস একাউন্ট, ফিক্সট একাউন্ট, রানিং একাউন্ট।

আপনার টাকার আয়ের উৎস অনুযায়ী আপনাকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। সেভিংস একাউন্টে টাকা জমাতে পারবেন। আপনার কাছে অনেক টাকা থাকলে একবারে ফিক্সড একাউন্টে রাখতে পারেন। আর নিয়মিত রাখা এবং তোলার জন্য রানিং একাউন্ট খুলতে পারেন।

সিটি ব্যাংক হেল্পলাইন:

সিটি ব্যাংক দিনরাত ২৪ ঘন্টা সেবা দিয়ে থাকে হেল্প লাইনের মাধ্যমে। সিটি ব্যাংকের হেল্পলাইন নম্বর ১৬২৩৪। এই নাম্বারে ফোন দিয়ে বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে সিটি ব্যাংকের সেবা পাবেন।

সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান কে?

সিটি ব্যাংক সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি। তবে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান কে আমরা অনেকেই জানিনা। দেশের অন্যতম শিল্পপতি আজিজ আল কায়সার সিটি ব্যাংকের একজন উদ্যোক্তা পরিচালক। তিনি সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান রয়েছেন তৃতীয় বারের মতো। বর্তমানে আজিজ আল কায়সার সকল দায়িত্ব পালন করে থাকে।

সিটি ব্যাংক অনলাইন লগইন করতে পারছি না কেন?

সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি। বর্তমানে সিটি ব্যাংক অনলাইনে সেবা প্রদান করছে। যাদের অনলাইন একাউন্ট রয়েছে শুধু তারা সেবাটা পায়। অনেকেই জানতে চাই, সিটি ব্যাংক অনলাইন লগইন করতে পারছি না কেন? এর অনেক কারণ রয়েছে।

প্রথমত অ্যাকাউন্ট নাম্বার ভুলে গেলে অনলাইনে লগইন করতে পারবেন না। এ ছাড়াও পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে লগইন করতে পারবেন না। অনেক সময় সার্ভারের সমস্যা থাকে এই কারণেও অনলাইনে লগইন করা যায় না। আপনার ফোনের সমস্যা থাকতে পারে। সাধারণত এইসব কারণে সিটি ব্যাংকে করা যায় না।

শেষ কথা: সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম 

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের একটি বিশ্বস্ত ব্যাংক সিটি ব্যাংক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত জনগণের আর্থিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এই কারণে এই ব্যাংকের প্রতি প্রতিটা মানুষের আস্থা রয়েছে। এছাড়াও সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম খুব সহজ।

১৮ বছর হলে যে কোন ব্যক্তি সিটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবে। তবে তার জন্য কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হবে। উপরে সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ