আমাদের বয়স বাড়লে অনেক কিছুই ভুলে যেতে থাকি। যখন এই ভুলে যাওয়া গুরুতর আকার ধারণ করে এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনে অসুবিধা সৃষ্টি করে, তখন তাকে স্মৃতিভ্রম বা ডিমেনশিয়া বলে। অনেক কারণে স্মৃতিভ্রম রোগ হয়ে থাকে।
এই রোগের পরিনাম হতে পারে ভয়ংকর। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে সঠিকভাবে চলাফেরা করবে এবং খাবার খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা সম্ভব। স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে।
প্রায় সকল মানুষের স্মৃতিশক্তি সমান। কিন্তু অনেক কারণে এই মাত্রা কম বেশি হয়। বিশেষ করে ভিটামিনের অভাবে স্মৃতিশক্তি কমে যায়। এই কনটেন্ট এ স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়লে স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় জানতে পারেন।
নিয়মিত ব্যায়াম ও মেডিটেশন | স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায়
নিয়মিত ব্যায়াম ও মেডিটেশনের মাধ্যমে শরীর ফিট থাকে। এবং তার পাশাপাশি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাসের অংশগুলোতে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে। এবং ভলিউম বাড়িয়ে স্মৃতির সঙ্গে জড়িত কর্মক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
মস্তিষ্কের একটি অংশ হিপোক্যাম্পাস। যা স্মৃতিশক্তির এবং শেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই ব্যায়াম আমাদের স্মৃতিশক্তির উন্নতির জন্য দুর্দান্ত উপায় হতে পারে।
নিয়মিত মেডিটেশন করার ফলে আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। কারণ প্রতিদিন মেডিটেশন করার ফলে মানসিক দুশ্চিন্তা দূর হয়। মনোযোগ সহকারে কাজ করতে সাহায্য করে। এই কারণে মেডিটেশন স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
নিয়মিত মেডিটেশন এবং ব্যায়াম করার ফলে শারীরিক ওজন ঠিক থাকে। এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এ কারণে সকলেরই নিয়মিত ব্যায়াম করা প্রয়োজন।
নিয়মিত হাঁটাহাটি করা:
একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে নিয়মিত হাটাহাটি করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। কোন কিছু যদি মনে রাখতে না পারেন তাহলে হাঁটাহাঁটি করে সে জিনিসটি মনে রাখার চেষ্টা করবেন।
আরও পড়ুনঃ ছেলেদের চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার
এভাবে কোন কিছু মুখস্ত করলে অনেক দিন ধরে আপনার মনে থাকবে। কোন কিছু মুখস্ত করলে সমস্যা হলে অবশ্যই এই ট্রিকস এপ্লাই করবেন। নিয়মিত হাটাহাটি করলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবেন।
পায়ের আঙ্গুল ম্যাসেজ:
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন পাঁচ মিনিট করে পায়ের আঙ্গুল ম্যাসাজ করুন। পায়ের আঙ্গুল ম্যাসাজ করার নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে আঙ্গুলের উপর থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে নিচের দিকে টিপুন।
পায়ের আঙ্গুলের সাথে মস্তিষ্কের স্নায়ুর সংযোগ রয়েছে। নিয়মিত পায়ের আঙ্গুল মেসেজ করলে মস্তিষ্কের কোষের ব্যায়াম হয়ে যায়। যার ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
নিয়মিত ঘুম:
সারাদিন কাজ করার পর আমাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। যার ফলে কার্যক্ষমতা কমে যায়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন। নিয়মিত ঘুমানোর ফলে আমাদের শরীরে নতুন কোষের উৎপন্ন হয় তার ফলে পুনরায় কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
একইভাবে সারাদিন কোন কাজ করলে আমাদের মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। যার ফলে কোন কিছু নতুন করে মনে রাখা সম্ভব হয় না। এই সমস্যার সমাধানের জন্য নিয়মিত ঘুমাতে হবে। নিয়মিত ঘুমানোর ফলে আমাদের মস্তিষ্ক স্বদেশ থাকে এবং খুব সহজে সকল কিছু মনে রাখা সম্ভব।
পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে স্মৃতিশক্তি কমে যায়। কিন্তু নিয়মিত ঘুম হলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এ কারণে স্মৃতিশক্তি ভিত্তিতে ঘুমের বিকল্প নেই।
স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য সঠিক খাদ্য তালিকা:
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন পুষ্টিকর খাদ্য তালিকা। কারণ নীতি শক্তি বৃদ্ধি করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, জিংক, ভিটামিন বি এবং ওমেগা ফ্যাট থ্রি ইত্যাদি। এসব খাবার খেলে স্মৃতিশক্তি পায়। নিম্নে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির খাদ্য তালিকা আলোচনা করা হলো।
দুধ:
দুধ একটি সুসম খাবার। দুধে ভিটামিনের সকল উপাদান রয়েছে। নিয়মিত দুধ খাওয়ার ফলে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখার পাশাপাশি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত দুধ খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্য ঠিক থাকে।
ডালিমের রস:
ডালিমের রসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেতে সাহায্যা করে। এছাড়াও ডালিমের রস খেলে ব্লাড সার্কুলেশন বজায় থাকে। যার ফলে মস্তিষ্কের অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক থাকে। নিয়মিত ডালিমের রস খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
গ্রিন টি:
আমরা সকলেই জানি গ্রিন টি অনেক উপকারী স্বাস্থ্যের জন্য। গ্রিন টি নিয়মিত খেলে ওজন ঠিক থাকে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মস্তিষ্কে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপস্থিতি নিউরোট্রান্সামিটারের ক্রিয়াকালাপ বাড়াতে ভূমিকায় রাখে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে নিয়মিত গ্রিন টি খেতে পারেন।
বাদাম:
বাদাম একটি উপকারী খাদ্য। বাদাম এ প্রায় সকল ধরনের ভিটামিনের উপাদান রয়েছে। নিয়মিত বাদাম খেলে শর্ট টাইম মেমোরি লস রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নিয়মিত বাদাম খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। কারণ বাদামে রয়েছে, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ ইত্যাদি।
এসব উপাদান স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে বাদাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত বাদাম খেলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়।
মাছ:
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে ফ্যাটি অ্যাসিড এর প্রয়োজন। এটা আমাদের শরীরে এমনি এমনি উৎপাদন হয় না। এর ঘাটতি পূরণের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায় মাছে। বিশেষ করে যেসব মাছে তেলের পরিমাণ বেশি থাকে সেসব মাছে ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি থাকে।
আরও পড়ুনঃ ব্রেন স্ট্রোক হলে কি হয়
এছাড়াও মাছে রয়েছে আমিষ, ভিটামিন এ, ওমেগা ফ্যাট থ্রি যা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। খাদ্য তালিকায় অবশ্যই মাছ রাখতে হবে। তাহলে স্মৃতিশক্তি বাড়ানো সম্ভব।
টমেটো:
টমেটোতে রয়েছে লাইকোপেন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের রেডিকল ক্ষয়ের বিরুদ্ধে কাজ করে। যার ফলে স্মৃতিভ্রংম হ্রাস পায়। যার ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন এ। যা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে প্রতিদিন সালাত করে টমেটো খেতে পারেন।
পালংশাক:
পালংশাক একটি পুষ্টিকর সবজি। পালংশাক রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই। যা মস্তিষ্কের বয়সের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
লাউয়ের বীজ:
লাউ একটি পুষ্টিকর খাবার। নিয়মিত লাউ খাওয়ার ফলে মাথা ঠান্ডা থাকে। এবং লাউয়ের বীজ অনেক পুষ্টিকর। লাউয়ের বীজ প্রচুর পরিমাণ জিংক থাকে। জিংক স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি এবং চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করে। এ কারণে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে লাউয়ের বীজ খেতে পারে।
অবসর সময় কাটানো:
সব সময় কাজ করার ফলে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। প্রতিদিন একই ধরনের কাজ করতে হয়। যার ফলে কাজের প্রতি বিরক্ত বোধ হয়। একই কাজ করার ফলে সৃজনশীল শক্তি লোভ পায়। এভাবে স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে। এ সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য অবসর সময় কাটানো প্রয়োজন।
অবসর সময় কাটালে মানসিক দুশ্চিন্তা দূর হয়। এবং নতুন ভাবনার সৃষ্টি হয়। নতুন নতুন ভাবনা করলে স্মৃতিশক্তি সচল থাকে। যার ফলে কোন কাজ করলে অনেকদিন স্মরণ থাকে। এ কারণে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে অবসর সময় কাটাতে পারেন।
সামাজিকীকরণ:
সামাজিকীকরণের সঙ্গে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন উচ্চমানের সম্পর্কের সাথে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৭ সালের গবেষণায় দেখা দিয়েছে ৮০ বছর বা তার বেশি বয়সী যাদের অন্যের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে তাদের স্মৃতিশক্তি ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সী মানুষের মত।
আরও পড়ুনঃ কালো দাঁত সাদা করার উপায়
আর একটি গবেষণা দেখা দিয়েছে, নিয়মিত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার ফলে স্মৃতিভ্রম সমস্যার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ কারণে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে নিয়মিত বন্ধুদের সাথে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন।
অনুশীলন:
মানসিক দুশ্চিন্তার হলে স্মৃতিভ্রম হয়ে থাকে। যার ফলে স্মৃতিশক্তি কমে যায়। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ মনে করেন কোন কিছু ছোট ছোট করে মনে রাখার চেষ্টা করলে খুব সহজে মনে রাখা সম্ভব। এছাড়াও কোন কিছু বিভিন্ন আঙ্গি থেকে বলার চেষ্টা করলে অনেক দিন মনে থাকে।
কোন কিছু শেখার পর সেটাকে মনে রাখার জন্য লেখালেখি করতে পারেন। এছাড়াও, ড্রয়িং এর মাধ্যমে মনে রাখতে পারেন। এ কারণে কোন কিছু মনে রাখতে হলে অনুশীলন করতে হবে। নিয়মিত অনুশীলন করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
খেলাধুলা:
খেলাধুলা মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত খেলাধুলা করলে সকল ধরনের দূর চিন্তা দূর হয়। এর পাশাপাশি অনেক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ স্থাপন হয়। এবং শারীরিক ব্যায়াম হয়।
নিয়মিত খেলাধুলা করার ফলে মাথার রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। যার ফলে ব্রেন সতেজ থাকে। নিয়মিত খেলাধুলা করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শারীরিকভাবে ফিট থাকা যায়।
শেষ কথা: স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায়
আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে মস্তিষ্ক। মস্তিষ্ক ছাড়া সুস্থ ভাবে কোন মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। মস্তিষ্কের সমস্যার ফলে মানুষ পাগল হয়ে যায়। যার ফলে মস্তিষ্ক মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ। অনেক সময় স্মৃতিশক্তি কমে যায়।
কিন্তু সঠিকভাবে চলাফেরা এবং খাদ্য গ্রহণ করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা সম্ভব। উপরে স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
আমার বিশ্বাস সম্পূর্ণ লেখাটি পড়লে স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পাবেন। লেখার মধ্যে ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ